নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, বিগত ফলাফলগুলোয় গলদ ছিল, এবারের ফলাফল থেকে এটিই প্রতীয়মান হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ফলাফল প্রকাশের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, এসএসসির পর এইচএসসির ফলাফল দিলাম। কাউকে ছক বেধে দিইনি যে ছাড় দিয়ে পাসের হার বাড়াবেন। এমন ভাবনা থাকার প্রয়োজন নেই। সরকারের নির্দেশনা ছিল, নিয়ম মেনেই সব হবে।
তিনি বলেন, ভুল লিখলেও ১, ২ দিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সবাই একমত হয়েছেন এবং বিষয়টি নিয়ে খুশি। বোর্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশনা না পেয়ে পরীক্ষকরাও আনন্দিত। তারা ভালো খাতা দেখার সুযোগ পেয়েছেন। সময়ও বাড়ানো হয়েছে, তারা দেখে নম্বর পাঠিয়েছেন। আমরা সংযোজনের কাজ করেছি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে। বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী ইংরেজিতে পাসের হার নেমে এসেছে ৭৭ শতাংশ থেকে ৫৮ শতাংশে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তিনি বলেন, ইংরেজিতে এমসিকিউ বাদ থাকায় পরীক্ষা তুলনামূলক কঠিন হয়েছে। আর এটাই বিদেশি ভাষা, মাতৃভাষা নয় তাই দুর্বলতা থাকবেই।
তিনি আরো বলেন, যত গ্রামীণ এলাকায় যাবেন, ততই দেখা যায় শিক্ষক ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি। সেটিই ফলে প্রতিফলিত। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে, যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নয়। তবে এই ফলাফলে শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ ও দুর্বল জায়গাগুলো পরিষ্কার দেখা গেছে। এখন সেগুলো রিড্রেস বা রিপেয়ার করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, এবারের ফলাফলেও শহর-গ্রাম বৈষম্য প্রকট। ঢাকা মহানগরে পাসের হার ৮৪ শতাংশ হলেও শরীয়তপুরে ৪২, গোপালগঞ্জে ৪২.২৮, কিশোরগঞ্জে ৪৮.৫, টাঙ্গাইলে ৪৪ ও মানিকগঞ্জে ৪৫ শতাংশ।
খাতা মূল্যায়নে কঠোর হতে পরীক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, শিক্ষা বোর্ড থেকে নম্বর দেওয়ার ব্যাপারে পরীক্ষকদের কোনো নির্দেশনা ছিল না। ফলে শিক্ষার্থীরা যা লিখেছে, সেটারই সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে। আর পরীক্ষকদের দেওয়া নম্বরগুলো শুধু আমরা কম্পাইলড করেছি, ফল প্রস্তুত করেছি। তারপর ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে।
অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকগণের অক্লান্ত প্রচেষ্টাসহ সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এ জন্য আমি শিক্ষা পরিবারের সকলকে জানাচ্ছি অভিনন্দন।
আন্তঃবোর্ড সভাপতি বলেন, বিগত বছর সমূহের ন্যায় এবারও সম্পূর্ণ পেপারলেস ফল প্রকাশিত হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের সরাসরি মোবাইল ফোন, ইমেইল এবং ওয়েব-সাইটের মাধ্যমে ফল প্রাপ্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ডসমূহ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু ও সফলভাবে পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়েছে। এ জন্য সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেন, পরীক্ষায় কৃতকার্য সকল পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমি আশা করবো তারা নব উদ্যমে পূর্ণ প্রস্তুতিতে আগামীতে পরীক্ষা দিয়ে সফলকাম হবে। আজকের এ সভায় উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এছাড়া এবারের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নির্ধারিত হয়েছে আন্তঃবোর্ড লটারির মাধ্যমে বলেও জানান তিনি।
সকাল ১০টায় দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সব শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৫৮.৮৩, বিগত ২০২৪ সালে ছিল ৭৭.৭৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান ছিল ১ হাজার ৩৮৮টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ফলাফল অর্জনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ইতিবাচক আন্তসম্পর্ক, শিক্ষকদের প্রযুক্তি নির্ভর পাঠদান, অভিভাবকদের ক্রমবর্ধমান সচেতনতা ও সহযোগিতা এবং সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা পরিচালনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।