নিজস্ব প্রতিবেদক :
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ভাইবোনছড়ার কংচাইরীপাড়ায় (বাগানপাড়া) একটি পুরনো ব্রিজ ভেঙে সেখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণের দরপত্র (টেন্ডার) হয়েছে। এটির কার্যাদেশ পেয়েছে মেসার্স কবিরঞ্জন ত্রিপুরা। তবে কার্যাদেশ কিনে নিয়েছেন ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাদের চলাচলের জন্য বিকল্পপথ নির্মাণ না করে দিয়েই জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি পুরনো ব্রিজটি ভেঙে ফেলেছেন উত্তম কুমার দেব। তিনি ব্রিজটির রড ও সংযোগ রাস্তার ইট তুলে নিয়ে গেছেন। এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্র ব্রিজটি ভেঙে ফেলায় তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকার অংথোয়াইরি মারমা। এলাকার সাবেক জনপ্রতিনিধি আম্রা মারমা বলেন, শুনেছি পানছড়ির ঠিকাদার উত্তম কুমার দেবের পাঠানো শ্রমিকরা সেতুর ইট, রড নিয়ে গেছেন। কিন্তু বিকল্প সেতুর ব্যবস্থা না করায় জনগণের কষ্ট বেড়েছে।
এদিকে পুরনো ভেঙে ফেলা সেতুর পাশে এলাকাবাসীকে বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী সেতু ও মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য মাটি ভরাট করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তম কুমার দেব বলেন, টেন্ডার হয়েছে। যেহেতু নতুন সেতু নির্মাণ করতে হবে, সেহেতু পুরনো সেতু ভাঙতেই হবে।
সরকারি পরিত্যক্ত দুটি আরসিসি ব্রিজ (সেতু) ও একটি কালভার্ট ভেঙে রড খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ব্রিজ দুটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এবং কালভার্টটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন পানছড়ি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)।
দিনেদুপুরে রড খুলে নেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক বলেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অধীন জেলার পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী লোগাং ইউনিয়নের লোগাং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছনখোলা রাস্তার মাঝখানে বাবুইন্যার জমির ছড়াতে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। একই অর্থবছরে চেঙ্গী ইউনিয়নের অমরেন্দ্রপাড়া থেকে দুর্গামনিপাড়া যাওয়ার রাস্তায় শ্রীকুন্তিমা ছড়ার ওপর একই দৈর্ঘ্যের আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ করে পিআইও কার্যালয়।
দুটি ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয় ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৮০৮ টাকা। এসব এলাকা দিয়ে সম্প্রতি সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করায় ব্রিজ দুটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই সুযোগে কিছুদিন আগে পানছড়ির প্রভাবশালী ঠিকাদার উত্তম কুমার দেবের নিয়োজিত শ্রমিকরা ব্রিজ দুটি ভেঙে সেখান থেকে রড তুলে নিয়ে যায়।
লোগাং গ্রামের অমিত বরণ চাকমা অভিযোগ করেন, দিনেদুপুরে শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে ব্রিজের রডগুলো খুলে নিয়েছেন উত্তম কুমারের লোকজন। এলাকার বাসিন্দা সুশীল চাকমার প্রশ্ন, ‘টানা চার-পাঁচ দিন ধরে সরকারি ব্রিজগুলো ভেঙে রড তুলে নেওয়ার পরও কী কারো নজরে এলো না? চুরি হয়ে যাওয়ার পর টনক নড়ল প্রশাসনের।’
সীমান্ত সড়কে কর্মরত শ্রমিকরাও একই অভিযোগ করেছেন। তাঁদের একজন আব্দুল ওহাব জানান, শ্রমিকরা বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে পরিত্যক্ত ব্রিজের রডগুলো খুলে ট্রাকে করে নিয়ে গেছেন। তবে রডের পরিমাণ সম্পর্কে কেউই প্রকৃত ধারণা দিতে পারেননি। অবশ্য শ্রমিকরা জানান, বর্তমান বাজারদরে কয়েক লাখ টাকার রড হতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মজিবুল আলম জানান, হারুবিল-কচুছড়ি এলাকায় যাওয়ার রাস্তায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত একটি কালভার্টের রড চুরি হয়ে গেছে। কে বা কারা কালভার্টটি ভেঙে রডগুলো নিয়ে গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, একই চক্রের কাজ এটি।
এসব ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি করেছেন পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোমিন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব বলেন, এটা কিছু লোকের প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়। সৃষ্টিকর্তা আমাকে ভালোভাবেই রেখেছেন। ভাঙাচোরা নিয়ে আমার কাজ নেই।
পানছড়ির ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুস সালাম এ ব্যাপারে গত ৯ মার্চ পানছড়ি থানায় একটি জিডি করলেও সেখানে জড়িতদের নাম উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া জিডিতে রডগুলো রাতে চুরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী জানিয়েছে, রাতে নয়, দিনের বেলায় ব্রিজ ভেঙে রড নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
এ বিষয়ে পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আফরোজ বলেন, সরকারি সম্পত্তি এভাবে চুরি হতে পারে না। তাই আমরা থানায় ডিজি করেছি। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করা হয়েছে। যারাই জড়িত থাকবেন, তাঁদের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।