নিজস্ব প্রতিবেদক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াত এবারও ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের সকল ষড়যন্ত্রের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে মানুষ দিয়ে দিয়েছে। বারবার নির্বাচন বর্জন করে বিএনপির জন্য এখন আগামী ৫ বছর অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এই নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। আজ তাদের সব অভিযোগ বাস্তবতাবিবর্জিত, ভিত্তিহীন। তারা মিথ্যাচার করে বক্তব্য দিয়েছেন। এমন মিথ্যাচার তাদের করুণ পরিণতির জন্য দায়ী। স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, অলরেডি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তো অনেকেই জিতেছেন। ১৪ দলেরও দুজনের মতো জিতেছেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তো দূরে নয়। যিনি হাউজ অফ দ্যা লিডার হবেন তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী, নতুন লিডার অফ দ্যা হাউজ পরিস্থিতি বাস্তবতায়, করণীয় অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জনগণের প্রতিনিধি। তারা নির্বাচিত। এই নির্বাচিত সদস্য হিসেবেই সংসদে বসবেন এবং তাদের ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়া অন্য কিছু এই মুহূর্তে ভাববার অবকাশ নেই।
তিনি বলেন, ২৯৯ এর মধ্যে ২২৩ আসন একা একটা রাজনৈতিক দল জিতেছে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কত? অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ে স্বতন্ত্রই জিতবে বেশি। আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগই। ২২৩ জন রুলিং পার্টি থেকে জেতা এটা তো একটা পজিটিভ বাস্তবতা।
কাদের নিয়ে বিরোধী দল করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পদ্ধতিটা আমি কেন আপনাকে বলব? এটা নতুন সরকার। সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন। বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এটা স্বীকৃতির জন্য নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্ব আমাদের ইলেকশনটা কেমন হয় জানতে চায়? আমরা বলেছি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ইলেকশন কন্ডাক্ট করবে। আমাদের এই কথার সাথে কাজের মিল আছে কি না গণতান্ত্রিক বিশ্ব সেটা প্রত্যক্ষ করুক সেজন্য আমরা এটা করেছি।
নির্বাচন নিয়ে করা বিএনপির মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক সবাই নির্বাচন দেখেছেন, প্রত্যক্ষ করেছেন এবং নিজেদের আপনাদের বিবেক আছে। পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা আছে। নির্বাচনটা কেমন হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের তীব্র বিরোধিতা ও নির্বাচন বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যেও কতটা শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে সেটা আপনারা নিজেরাই প্রত্যক্ষ করেছেন। যা সত্য তা সব কিছুই আপনারা জানেন। আর যা কিছু মিথ্যাচার আপনারা দেখছেন। এখনও তারা মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন। জনগণের রায়কে অস্বীকার করে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার হুমকি ধমকি দিচ্ছে। আমরা যে কোনো মূল্যে সব ধরনের সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে, পরাজিত করতে বদ্ধ পরিকর।
কাদের বলেন, জনগণ এসব নব্য গোয়েবলসদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিয়ে দিয়েছে। বিএনপি নিজেই বারবার ভুল রাজনীতি অনুসরণ করার কারণে একটি অকার্যকর এবং ব্যর্থ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তাদের নেতা কে?
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের রায়ে নতুন রেকর্ড স্থাপন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে। উৎসবমুখর, অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে আমরা আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, বাংলাদেশ বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণ রায় দিয়েছে। জনগণের এই ঐতিহাসিক রায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করবে।
কাদের বলেন, জনগণের এ ম্যান্ডেট আমাদের দায়িত্ব এবং একই সঙ্গে শক্তি সাহস ও উৎসাহকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। জনতার রায়ে গণতান্ত্রিক বিশ্ব নতুন রেকর্ড স্থাপন করে টানা চতুর্থবার ও মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
সকালে ভারত, রাশিয়া, চীন, ভূটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, উন্নয়নের নেত্রী শেখ হাসিনা জনতার এই বিশাল রায়ের প্রতি অতান্ত শ্রদ্ধাশীল। তিনি এ রায়ের প্রতিদান নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে অব্যশই উপহার দেবেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি পুনর্বার প্রমাণ করেছেন একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কার্যকর থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। এই দেশের সংবিধান অনুযায়ী একটি নির্বাচিত সরকার আরেকটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। আমরা সেইভাবেই নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছি।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করবেন। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া ওয়াদা বাস্তবায়ন করব। নবউদ্যমে এই দেশ এগিয়ে যাবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
কাদের বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, গণমাধ্যমসহ বিদেশি সাংবাদিক-পর্যবেক্ষক সকলেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরও শক্তিশালী করবে।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড তারেক জিয়া। এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী দুর্নীতি ও টাকা পাচারের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং পালিয়ে আছে বিদেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক গোপন বার্তায় তারেক জিয়াকে বাংলাদেশের সহিংসতার রাজনীতির গডফাদার হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। এ ধরণের একজন অপরাধীর আজ্ঞাবহ কর্মী হয়ে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ড. মইন খানের মতো বিদ্বান ব্যক্তিরা যখন প্রতিদিন লজ্জাস্করভাবে মিথ্যাচার করে যায়, ফরমায়েশি বক্তব্য দেয় তা দেখে একজন রাজনীতির মানুষ হিসেবে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে।
মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে দেখিয়েছে যে অপরাজনীতি করে এই দেশে জনগণের রায় পাওয়া সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
তিনি বলেন, আগুন সন্ত্রাস ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না, এটা এবারের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ তাই প্রমাণ করেছে। আমরা বিএনপিকে বলব, সত্য মেনে নিয়ে রাজনীতি করুন, গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি অনুসরণ করুন, সংবিধান বিবর্জিত রাজনীতি পরিহার করুন। নতুবা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে আপনাদের নিক্ষিপ্ত হতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি। জনগণের সেবা করাই আওয়ামী লীগের কাজ। জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। শেখ হাসিনার ম্যাজিক হলো জনগণের প্রতি ভালোবাসা। তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতির অবশ্যই বাস্তবায়ন করবেন। আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব। জনগণকে সাথে নিয়েই আমরা বাংলাদেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবো। আমাদের আছেন শেখ হাসিনা, তাই আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হবেই। তিনিই পেরেছিলেন, তিনিই পারবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের সকল ভোটার জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদেরও তাদের দ্বায়িত্বশীল ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা এ নির্বাচনে বিজয়ী এবং পরাজিত সকল প্রার্থী এবং তাদের অনুসারীদেরকে সকল প্রকার সহিংসতা ও উস্কানী পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।