গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতনের হাত থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। , তাদের আন্দোলন হলো মানুষ পোড়ানোর, ক্ষতি করার। বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসী পার্টি আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের পার্টি। আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে বিএনপি-জামায়াত। মানুষ পুড়িয়ে মারাই বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ মাঠে নির্বাচনি জনসভায় আগতদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষ খুন করাই তাদের রাজনীতি। টাকা লুটপাট করে বিদেশে বসে মানুষ খুন করার নির্দেশ দিচ্ছে। বিএনপি দেশের উন্নয়ন করতে জানে না তারা শুধু মানুষ পোড়াতে জানে, ওদের কোনো মনুষ্যত্ব নেই।
বিএনপিকে খুনি এবং জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে তারা অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, এটাই নাকি তাদের আন্দোলন। তাদের আন্দোলন মানুষ পোড়ানো। মানুষের ক্ষতি করা। দেশের সম্পদ নষ্ট করা। এদের মধ্যে কোনো মানবতাবোধ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে এখন আর মানুষ বিশ্বাস করে। আর বিশ্বাস করে না বলেই তারা আন্দোলনে সফল হতে পারেনি এবং পারবেও না। তাদের কোনো জনসমর্থন নেই।
তারেক রহমানকে ‘লম্পট’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই লম্পটের কথা শুনে বিএনপি নেতারা কেন আগুন দেয়, মানুষ মারে। তাদের কী লাভ। শাস্তি তো এদের হবে। বিচারের মুখে পড়তে হবে। আর আল্লাহর কাছেও তাদের জবাব দিতে হবে। তবু এটা তারা কেন ঘটায়, সেটাই আমার প্রশ্ন।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন করে বলেন, তারেকের মতো একজন লম্পটের নির্দেশে বিএনপি নেতারা কেন আগুন দিচ্ছে। আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে লন্ডনে বসে আগুন দেবার হুকুমদাতাকে ধরে এনে বিচার করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, রেল পোড়ায়, বাস পোড়ায়, গাড়ি পোড়ায়, মানুষ হত্যা করে, আমাকে পর্যন্ত হত্যার চেষ্টা করেছে তারা। লন্ডনে বসে মানুষ হত্যার নির্দেশ আসছে। যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে, ওই তারেকের কথা শুনে, যে টাকা আত্মসাৎ করেছে, জুয়া খেলেছে, ওই লম্পটের কথা শুনে বিএনপি নেতাকর্মীরা আন্দোলন করছে।
আমরা শান্তির পক্ষে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা এটা করে সফল হতে পারছে না। নির্বাচন বানচাল করার অনেক ষড়যন্ত্র করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থেকে টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাঠিয়েছে। আর ভাগ্য পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ যখনই কাজ শুরু করে বিএনপি তখনই বাধা সৃষ্টি করে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিভিন্ন ভাতা দিয়ে অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রাণখুলে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশেকে নিয়ে যে স্বপ্ন ছিল আমার বাবার, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছি, আমি নিজের দিকে তাকাইনি। বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে আমাকে। মানবঢাল করে আওয়ামী লীগ আমাকে রক্ষা করেছে।
তিনি বলেন, ছোট বোন রেহানা আমার পাশে না থাকলে আমি দেশের জন্য এতো কাজ করতে পারতাম না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। ২০২১ সালে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, আমরা মুজিব আদর্শে বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- “কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।” আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। বলেছিলাম- নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি।
জনসভায় আগতদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আপনাদের এই ভালোবাসা, আপনাদের এই সমর্থন আমার একমাত্র শক্তি। এখানে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে চলতে হয়েছে, তারপরও আপনারা আমাকে আগলে রেখেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই বাংলাদেশেকে নিয়ে যে স্বপ্ন ছিল আমার বাবার, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছি, আমি নিজের দিকে তাকাইনি।
২২ বছর পর নিজ এলাকা টুঙ্গিপাড়ায় নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে ১৯৭৫ সালে হারানো মা-বাবা, ভাই ও পরিবারের সদস্যদের কথা মনে করে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার পরিবারের সবাইকে হারানোর পরও এই টুঙ্গিপাড়ার মানুষ, দেশের মানুষের ভালোবাসায় আমি বেঁচে আছি।
স্মরণ করেন ১৯৭৫ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঘটা নারকীয় হত্যাযজ্ঞের। এসময় মা-বাবা, ভাই ও পরিবারের সদস্যদের কথা মনে করে কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, খুনীদের আনার জন্য আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমেরিকা, কানাডা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তাদের ফিরিয়ে এনে হত্যাকারীদের রায় কার্যকর করব। যতো বাধাই আসুক।
প্রধানমন্ত্রী দুঃখভরাক্রান্ত মন নিয়ে বলেন, আমি ও শেখ রেহানা যখন দেশে ফিরে আসি তখন কাউকে খুঁজে পাইনি। কামাল-জামাল-রাসেলকে অনেক মনে পড়ছে, তাদের পাইনি। কিন্তু এদেশের মানুষকে আমি পেয়েছিলাম। যাদের ভালোবাসা আমি পেয়েছি।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যেমন খুনি, তার বউ খালেদা জিয়া, ছেলে তারেক রহমানও খুনি। তারা আমার বাবাসহ পরিবারকে হত্যার পর আমাকে ও আমার বোনকে এতিম করেছে। ২০০৪ সালে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল লন্ডনে থাকা তারেক।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দিচ্ছে। তাকে ধরে এনে বিচার করা হবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বসার খায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত আছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে টুঙ্গিপাড়ার জনসভায় যোগ দেন। শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা জনসভা স্থলে পৌঁছালে হাজার হাজার মানুষ তাদের অভিনন্দন জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন হাত উঁচু করে এবং মঞ্চে ঘুরে ঘুরে জনসভায় উপস্থিত জনসাধারণের অভিনন্দনের জবাব দেন।