নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন তারা (আওয়ামী লীগ) একটা নতুন কথা চালু করেছে। বিএনপি সন্ত্রাসী দল নয় বরং আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের বাবা। সরকারই গোটা দেশকে সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করেছে।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সোনালী দল আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকার দেশকে লুটের রাজত্বে পরিণত করেছে। শুধু বিএনপির দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সরকারকে সরাতে হলে সকলকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে।
আপোষ করে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন এখন আর এক মাসও সময় নেই। আর কয়েকটা দিন আছে। সেই দিনগুলোতে বুকের মধ্যে সমস্ত সাহস নিয়ে…মারবে তো মারবেই, এগিয়ে যাবো। মারছেই তো, গত ১৫ বছরে আমাদের হাজারো নেতা-কর্মীকে মেরে ফেলেছে। গুম করেছে। আমাদের ৫০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সরকারি হিসাবে গতকালও ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তিনি বলেন, বুকের মধ্যে সাহস নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। দেশ বাঁচাতে সরকারকে হটাতে হবে। আপস করে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় না। দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো কথা নয়, আসুন আজকে আমরাই সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। একটা জিনিস কিন্তু আশা জোগাবে, সাহস জোগাবে, আজকে দেশের সকল মানুষ এক হয়েছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়েছে। বাম ডান সবাই একটা কথাই বলছে, এই সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। হতে পারে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করছে। আমরা খালি হাতে আছি। আমাদের হাতে তো বন্দুক নেই যে আপনাকে ভয় দেখাব, গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসবো। ডিবিতে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার নির্যাতন করবো। সেই ক্ষমতা তো আমার নেই। তাই সবাইক রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে।
ফখরুল বলেন, বলেন, আমাদের একটাই ক্ষমতা আছে। মানুষকে সংগঠিত করা, মানুষকে বলা এই অবস্থা থেকে বেরোতে চাইলে, মুক্তি পেতে চাইলে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে। এই রাস্তায় বেরিয়ে আসাই তো বড় কথা। আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় কি করছে। সবাইকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে।
আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রকেই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে দাবি করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরি সন্ত্রাসের রাজত্ব বানিয়ে দিয়েছেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন একেবারে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থা হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি নজিরবিহীন। সব দেশেই কিছু কিছু দাম বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যেটা বেড়েছে এটা অবিশ্বাস্য ও নজিরবিহীন। এর পেছনে কারণ অনেকগুলো। মূল কারণ জবাবদিহিহীন সরকার। তাকে কোথাও কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। ইচ্ছে মতো যা খুশি তাই করতে পারছে। তাদের দুঃশাসন-দুর্নীতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এখন একেবারে মৃত্যবরণ করার মতো অবস্থা হয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রজেক্ট অনেক করা হচ্ছে। প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য চুরি করা। এমন চুরি যেটা এক কোটি টাকায় হবে সেটা তিন কোটি টাকা। যেটা ১০ কোটি টাকায় হবে সেটা ২০ কোটি টাকা।
সরকারি কর্মকর্তা যারা আছেন বেশিরভাগই অসুখি নন বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। এর পেছনে কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সবাই (সরকরি কর্মকর্তা) কম না কম প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত। প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত থাকলে পয়সা আসে। অবস্থা এখন এমন সাধারণ মানুষ ডিম কিনতে পারছে না। ডাল কিনতে পারছে না, শাক কিনতে পারছে না কিন্তু নির্বাচনে ঘুস দেওয়ার জন্য ইউএনও এবং ডিসিদের জন্য ৩৬৫ কোটি টাকা দিয়ে নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে। তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে আলাদা করে। শোনা যাচ্ছে ইতোমধ্যে যারা ডিসি, এসপি যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তাদের কাছে টাকা পৌঁছে গেছে।
বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে সরকারকে সড়ানো ছাড়া বিকল্প কিছু নেই বলেও মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। জনগণের নূন্যতম অধিকার ফেরত পেতে চাই।
খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব। বলেন, তাকে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা বানিয়েছে। এটার তো কোনো কিছুই ঠিক নেই। তারা বলছে যদি পরিবেশ অনুকূলে হয়, তাহলে পরিবেশ অনুকূলে নয়! এখনো পরিবেশ অনুকূলে হয়নি। দরকার কি বাবা, পদত্যাগ করো না, আসো আমাদের সঙ্গে। আমাদের সঙ্গে আসো।
শেষবারের মতো সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শেষ বারের মতো সরকারকে বলতে চাই দয়া করে পদত্যাগ করুন। শান্তিতে আপনারা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারে হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যান। দেশের মানুষকে বাঁচতে দেন।
ময়মনসিংহের বাংলাদশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী দলের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম হাফিজ সেমিনারে সভাপতিত্ব ও আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনা সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাজমেরি এস এ ইসলাম ও আব্দুস সালাম প্রমুখ।