নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে না পড়ে, না বুঝেই মন্তব্য করেছে। এমনটি বলেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সাইবার নিরাপত্তা আইন জনগণের জন্য আরও ভোগান্তির কারণ হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমি ঢালাওভাবে মন্তব্য করতে চাই না। তারা জিনিসটি পড়েনি। যেহেতু তারা পড়েনি, তারা বোঝেনি বলেই এই মন্তব্য করেছে। অংশীজনরা দেখুক, আপনারাও দেখুন, তারপর আপনারা যদি আলাপ করতে চান…।
আইনজীবীরা বলেছেন, মানুষের হয়রানি কমবে না আর পুলিশকে অবারিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে– এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনারা আমাদের কোনো পদক্ষেপই ভালো মনে করেন না। কিন্তু দিন শেষে আমাদের নেওয়া পদক্ষেপই দেশের জন্য ভালো হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি, কেবল পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ করা হচ্ছে বলে আবারও জোর দিয়ে বলেন আইনমন্ত্রী। জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা নতুন আইনে পরিচালনার মাধ্যমে, শাস্তির মেয়াদ কমানোর চিন্তা করছে সরকার।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন বিষয়ে না জেনে, না পড়েই মন্তব্য করেছে বিএনপি। সমালোচনাকারীরা সরকারের কোনো গণপদক্ষেপকেই ভালো চোখে দেখে না। তবে আমাদের পদক্ষেপে দেশের জন্য ভালোই হয়। সাইবার নিরাপত্তা আইনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাস্তির মেয়াদ কমানোর কারণে; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাসমূহ নতুন আইনের আওতায় রেখে শাস্তির মেয়াদ কমানো যায় কিনা বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আগে যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করব। যেসব অপরাধ পুরোনো আইনে করা হয়েছে, পুরোনো আইনে যে শাস্তি সেই শাস্তি অপরাধীকে আদালত দিতে পারেন। কিন্তু সেখানে আমরা চিন্তা-ভাবনা করব। এই আইনে যেহেতু শাস্তির পরিমাণ অনেকাংশেই কমানো হয়েছে এবং সেই শাস্তি কমানোটাই সরকার ও আইন সভার উদ্দেশ্য। সেটাই যাতে বাস্তবায়িত হয় সে চেষ্টা আমরা করব।
আইনমন্ত্রী বলেন, যে নতুন আইনটা হয়েছে সেটা তিনি (জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী) এখনো সম্পূর্ণ দেখেননি। সে কারণে সম্পূর্ণভাবে মন্তব্য করতে পারছেন না। এটার যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা তিনি শুনেছেন। যেটা শুনেছেন, পরিবর্তন যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা ভালো এবং খুশি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি সোমবার (৭ আগস্ট) যে কথা বলেছি, উনার সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে একই কথা বলেছি। একটা দফার মধ্যে আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে রহিত করা হয়েছে এবং এটাকে রহিত করা হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে যেসব টেকনিক্যাল ধারাগুলো ছিল, সাইবার নিরাপত্তা আইনে সেই টেকনিক্যাল ধারাগুলো আছে। এজন্য আমি সব সময় বলে এসেছি, এটা পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনও হয়নি, আবার কেউ যদি বলে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করা হয়েছে, সেটাও সম্পূর্ণভাবে ঠিক হবে না। কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, পরিবর্তনগুলো এতই বেশি ছিল, তখন যদি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এই নামটা রাখতাম, তাহলে নামটা হতো ডিজিটাল নিরাপত্তা সংশোধিত আইন। এটা তখন কনফিউজিং হতো। সেজন্য এটাকে সম্পূর্ণ পাল্টে নতুন সাইবার নামটা রাখা হয়েছে। এটার ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য। সেজন্য এটার নাম সাইবার নিরাপত্তা আইন দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তনে আমরা সন্তুষ্ট। তবে পরিবর্তিত আইনটি পর্যবেক্ষণ করে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।
এদিকে, সোমবার (৭ আগস্ট) বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) পরিবর্তিত হয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (৭ আগস্ট) আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধন করে সন্নিবেশিত হবে সাইবার নিরাপত্তা আইনে। সাইবার সিকিউরিট অ্যাক্ট নামে একটি আইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে, কিন্তু বাতিল না। এখানে অনেক রকম পরিবর্তন করা হবে। অর্থাৎ, বেশ কিছু ধারা ও নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে।