নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওরা (বিএনপি) ধ্বংস করে। আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে।
বুধবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় ভূমি সম্মেলন-২০২৩’ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাতটি প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা আমাদের ছয়টি ভূমি অফিসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। রেকর্ড পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে ভূমি অফিসের দুরবস্থা সবার নজরে এসেছে। এতে আমরা ৪০০টি আধুনিক ভূমি অফিস করে দিয়েছি। একদিক থেকে ভালো হয়েছে যে, ওদের আগুন লাগানোর ফলে নতুন ও আধুনিক ভূমি অফিসের ব্যবস্থা হয়েছে। আর এও প্রমাণ হয়েছে- ওরা ধ্বংস করে। আর আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে মানুষের কল্যাণে। মানুষের সেবা করে যাওয়াটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের অনিয়ম দূর হোক। আমরা আজ সাতটি উদ্যোগ উদ্বোধন করলাম। এর ফলে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন সহজ হবে।
সম্পদ বণ্টন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখি- বোনকে বঞ্চিত করে ভাই। আবার বোনও ভাইকে বঞ্চিত করে। বোনও বোনকে বঞ্চিত করে এমন ঘটনাও আছে। বণ্টন ব্যবস্থাটা ডিজিটালাইজড করলে এই সমস্যা হবে না। অধিকাংশ পারিবারিক সমস্যা এই বণ্টনের কারণে হয়। খুন-খারাবিও হয়। এরমধ্য দিয়ে অনেক পারিবারিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মানুষ শান্তি পাবে। মানুষের জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধি আমাদের কামনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে ভূমি উন্নয়ন কর শতভাগ অনলাইনে আদায় করা হবে। দেশের সাধারণ জনগণের পাশাপাশি ১৯২টি দেশ থেকে কল সেন্টারে বা ভূমি সেবা পোর্টালে আবেদন করলে প্রবাসীদের ঠিকানায়ও প্রেরণ করা হবে খতিয়ান। এরই মধ্যে অনলাইনে ৭৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। দিনে গড়ে রাজস্ব আদায় পাঁচ কোটি টাকার বেশি।
তিনি বলেন, ভূমি সেবা ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ ঠেকাতেও নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা। ভূমিতে নতুন নিয়োগ বিধিমালার মাধ্যমে নিয়োগের সমস্যারও সমাধান করা হয়েছে। সামনে আর জনবল সংকট থাকবে না। সব উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের যানবাহনও দেওয়া হয়েছে।
দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো হয়রানি ছাড়াই মানুষ এখন ভূমিসেবা পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশসেবায় রূপকল্প ২০২১ নেওয়া হয়, যা অত্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ভূমি নিয়ে সামাজিক-পারিবারিক ছাড়াও বিভিন্নভাবে সমস্যা দেখা দেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার গঠনের পরই সর্বোচ্চ ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমির কর মওকুফ করেন। পাকিস্তান আমলে ভূমির যত সার্টিফিকেট মামলা ছিল সব মামলা বাতিল করেন বঙ্গবন্ধু। সেই সঙ্গে ভূমিহীনরাও যেন জমি পায় গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে তার ব্যবস্থা করেন।
তিনি বলেন, ভূমি হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। ভূমির সঙ্গে মানুষের বন্ধন অবিচ্ছেদ্য। আমাদের দেশে এই ভূমি নিয়েই বিভিন্নভাবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয়। সেটা সামাজিকভাবে হোক, পারিবারিকভাবে হোক।
সরকারপ্রধান বলেন, পাকিস্তান আমলে যত সার্টিফিকেট মামলা আমাদের কৃষকদের বিরুদ্ধে ছিল সব মামলা তিনি (বঙ্গবন্ধু) প্রত্যাহার করে নেন। সার্টিফিকেটের মামলাগুলো তখন বাতিল করে দেন। বাংলাদেশকে নতুন অগ্রযাত্রায় নিয়ে যেতে শুরু করেন। আমাদের দেশে নদী ভাঙনে অনেক মানুষ ভূমিহীন হয়ে যায়, ঘরবাড়িবিলীন হয়ে যায়, সেই ভূমিহীন মানুষগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য গুচ্ছগ্রাম পরিকল্পনার মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি ১০০ বিঘার বেশি জমি কারো থাকবে না। সেগুলো ভূমিহীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে সে ব্যবস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রহণ করেছিলেন। ভূমি নিয়ে মানুষের যে সমস্যা সেই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সরকারে আসার পর থেকে উদ্যোগ নেই।
তিনি আরো বলেন, ভূমি ব্যবহারের জন্য যে জটিলতা থাকে সে জটিলতা যাতে না থাকে আমরা প্রথমে সরকারে এসেই জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০০১ প্রণয়ন করি। সেই সঙ্গে জনগণ বাড়ছে, নগরায়ন হচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, তাছাড়া জমির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একটা নীতিমালা ব্যবহার হয়। আমাদের ভূমিগুলো যেন যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায়, অহেতুক যেন ব্যবহার না হয়, ফসলি জমি যেন নষ্ট না হয়, সবগুলো বিবেচনা করে ব্যবহার নীতি ২০০১-এ আমরা তা অন্তর্ভুক্ত করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমি সংক্রান্ত সেবা নিতে গিয়ে অনেক মানুষকে অনেক হয়রানি হতে হয়েছে। আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলছি, তাতে আর সেই হয়রানিটা মানুষকে পেতে হবে না। দেশে থাকেন, প্রবাসে থাকেন; আপনার সম্পদ আপনারই থাকবে। আপনার অধিকার যেভাবে সুনিশ্চিত হয় সেই ব্যবস্থাটাই আমরা নিয়েছি। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের অনিয়ম দূর হোক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী আরো নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন, সেটাই আশা করি। আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। জন্মলগ্ন থেকেই এদেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণের কল্যাণ সাধনই আমাদের লক্ষ্য।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।