Dhaka বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে মানুষ পুড়িয়ে মারা: প্রধানমন্ত্রী

খুলনা জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণের উন্নয়ন হয়।দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। মানুষ খুন তাদের একমাত্র গুণ। বিএনপি-জামায়াতের আর কোনো গুণ নেই। দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন এই ২৮ অক্টোবর কীভাবে পুলিশকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্য করেছে। বেহঁশ হয়ে গেছে তাও ছাড়েনি। তারপর কুপিয়েছে। ৪৫ জন পুলিশ আহত হয়েছে। সাংবাদিকদেরও ছাড়েনি। সাংবাদিকদের তারা পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ স্টেশনে ঢুকে হাসপাতালে আক্রমণ করেছে। কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স ভেঙেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী যাচ্ছে সেই অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করেছে। এদের মধ্যে এতটুকু মনুষত্ববোধ আছে বলে আমি মনে করি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপি-জামায়াতের কাজই আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। আগুন দিতে এলে আপনারাই ওই হাত আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।

তিনি বলেন, ওই সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াত জোট তারা মানুষের জন্য কাজ করে না। একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছ কারাগারে। আর একজন মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করবে না বলে লন্ডনে বসে দুর্নীতির টাকা দিয়ে চলছে। তার এখানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে।

ফিলিস্তিনে বর্বর ইসরায়েল যেভাবে হাসপাতালে হামলা করেছে, বিএনপিও একই কায়দায় হাসপাতালে হামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনিতে হাসপাতালে আক্রমণ করেছে, তেমনি বিএনপিও একই কাজ করছে। বিএনপিরা ইসরায়েলের কাজ থেকে মনে হয় শিক্ষা নিয়েছি। তাহলে এরা কারা? এরা কী বাংলাদেশ চায়? নাকি ধ্বংস চায়? ওরা বাংলাদেশের ধ্বংস চায়।

নির্বাচনের আগে বিএনপি বিভিন্ন ওয়াদা দিলেও তা পূরণ করে না উল্লেখ করে সেটি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ওদের চরিত্র বদলাবে না। নির্বাচনের আগে অনেক ওয়াদা করে যায়। এই খুলনা থেকে খালেদা জিয়া বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে শিল্প কারখানা চালু করবে। উল্টো সব বন্ধ করেছিল। এটাই হচ্ছে তাদের চরিত্র।

বিএনপিকে নেতৃত্বহীন দল আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময়ে একটা বিষয় নজরে রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জানে, ২০০৮ সালেই ৩০টি সিট পেয়েছে। তারা জানে যে, তাদের নেতা নেই। মুণ্ডুহীন একটা দল। একটা পলাতক আসামি, আরেকটা কারাগারে। সেই দল এই দেশের নির্বাচন হতে দিতে চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি ওই গাড়ি আর মানুষকে আগুনে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন। উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন। যেন আর কেউ সাহস না পায় মানুষকে এভাবে ক্ষতি করতে।

শেখ হাসিনা বলেন, বারবার সরকার গঠন করেছি, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি মানুষের ভাগ্য বদল করতে চাই। বাংলাদেশের জনগণ আমার পরিবার। আপনারাই বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দেবেন।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও চালু করে। আমার একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছি। ধারাবাহিক গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো মানুষের নিরাপত্তা দেবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবেন। যাতে তারা দেশের কোনও মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারে, তাদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, যারা আগুন দেয় তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই কাজে সহযোগিতা করবেন।

২০৪১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই দেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র রূপ পাবে জানিয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই নৌকাই দেবে ৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, স্মার্ট অর্থনীতি হবে, স্মার্ট সমাজ হবে। বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করে আমরা তৈরি করবো। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও সেবা করার সুযোগ দেবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আর সেই প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

গৃহহীনদের জন্য নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ৮ লাখ ৪১ হাজার পরিবার বিনা পয়সায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাচ্ছে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রয়েছে বীর নিবাস। বিভিন্নভাবে গৃহায়ন তহবিলের মাধ্যমে আমরা ভূমিহীন মানুষদের ঘর, দুই কাঠা জমি এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যাতে কোনও মানুষ ভূমিহীন না থাকে, গৃহহীন না থাকে। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবেই আমরা এই পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। আমাদের দেশের একটি মানুষও যেন ঠিকানাবিহীন না থাকে, সেই ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে করেছে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই খুলনায় উদ্বোধন করা ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কথা বলেন। তিনি তাঁর সরকারের বাজেটের আকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, আগে অল্প টাকার বাজেট হতো, এখন লক্ষ, কোটি টাকার বাজেট হয়। এ কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই খুলনা নগরী থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু খুলনার উন্নয়ন করেননি। উল্টো মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় এসে এ বন্দর চালু করেছি। এখন বন্দরকে ঘিরে প্রচুর কল-কারখানা তৈরি ও হাজার হাজার মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এই বন্দরটি (মোংলা) প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভুটান ও নেপাল ব্যবহার করবে। বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। কয়েকদিন আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে খুলনা-মোংলা রেললাইন।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্রের হার কমিয়ে এনেছি। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হয়েছে, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। আমি এক সময় দেখেছি বিদেশ থেকে কাপড় আনা হতো। মানুষ সেই পুরাতন কাপড় পড়ত। এখন আর পুরোনো কাপড় আনতে হয় না। এখন মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, ঘর পাচ্ছে। আশ্রয়ন প্রকল্প, বীর নিবাস গুচ্ছগ্রাম বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন মানুষকে ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি।

খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। আজ যা উদ্বোধন করলাম, তা আপনাদের জন্য উপহার।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ও মধুমতি সেতু নির্মাণের ফলে আঞ্চলিক সুবিধা খুলনাবাসী পাচ্ছেন। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে যোগাযোগব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেলপথ কাজ শুরু হয়েছে। খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেললাইন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে উদ্বোধন করে দিয়েছি। আমরা একটা এক্সপ্রেসওয়ে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ নামে করছি, যাতে যাতায়াত সহজ হয়। নদী ভাঙনে খুলনা বিভাগের জেলাগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সময়মত ড্রেজার ও নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের পেছনে কারা আছে, তাদের খুঁজে বের করা দরকার বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাছে আমার প্রশ্ন, ৯৬ সালে মজুরি ছিল ৮০০ টাকা, আমরা করেছি ১৬০০ টাকা। দ্বিতীয়বার ৩২০০ টাকা করা হলো। তৃতীয়বার ৮২০০ করা হয়েছে। চতুর্থবার ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোন সরকার এটা করেছে? জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, আমরা সরকারি কর্মচারীদের ভাতা বাড়িয়েছি ৫ শতাংশ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাড়িয়েছে ৫৬ শতাশং। তারপরও তাদের আপত্তি।

মহাসমাবেশে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, এই নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই নৌকাই দেবে ৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ।

জনসভায় উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। নৌকায় ভোট দিবেন কি-না বলেন, হাত উচিয়ে দেখান।’ এ সময় উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে সাড়া দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি/দেবার কিছু নাই/আছে শুধু ভালোবাসা/দিয়ে গেলাম তাই।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রহুল হক, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্না, পারভীন জামান কল্পনা, নির্মল কমার চ্যাটার্জিসহ আরও অনেকে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে : তারেক রহমান

বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে মানুষ পুড়িয়ে মারা: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৭:০৫:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৩

খুলনা জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণের উন্নয়ন হয়।দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। মানুষ খুন তাদের একমাত্র গুণ। বিএনপি-জামায়াতের আর কোনো গুণ নেই। দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন এই ২৮ অক্টোবর কীভাবে পুলিশকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্য করেছে। বেহঁশ হয়ে গেছে তাও ছাড়েনি। তারপর কুপিয়েছে। ৪৫ জন পুলিশ আহত হয়েছে। সাংবাদিকদেরও ছাড়েনি। সাংবাদিকদের তারা পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ স্টেশনে ঢুকে হাসপাতালে আক্রমণ করেছে। কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স ভেঙেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী যাচ্ছে সেই অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করেছে। এদের মধ্যে এতটুকু মনুষত্ববোধ আছে বলে আমি মনে করি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপি-জামায়াতের কাজই আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। আগুন দিতে এলে আপনারাই ওই হাত আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।

তিনি বলেন, ওই সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াত জোট তারা মানুষের জন্য কাজ করে না। একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছ কারাগারে। আর একজন মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করবে না বলে লন্ডনে বসে দুর্নীতির টাকা দিয়ে চলছে। তার এখানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে।

ফিলিস্তিনে বর্বর ইসরায়েল যেভাবে হাসপাতালে হামলা করেছে, বিএনপিও একই কায়দায় হাসপাতালে হামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনিতে হাসপাতালে আক্রমণ করেছে, তেমনি বিএনপিও একই কাজ করছে। বিএনপিরা ইসরায়েলের কাজ থেকে মনে হয় শিক্ষা নিয়েছি। তাহলে এরা কারা? এরা কী বাংলাদেশ চায়? নাকি ধ্বংস চায়? ওরা বাংলাদেশের ধ্বংস চায়।

নির্বাচনের আগে বিএনপি বিভিন্ন ওয়াদা দিলেও তা পূরণ করে না উল্লেখ করে সেটি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ওদের চরিত্র বদলাবে না। নির্বাচনের আগে অনেক ওয়াদা করে যায়। এই খুলনা থেকে খালেদা জিয়া বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে শিল্প কারখানা চালু করবে। উল্টো সব বন্ধ করেছিল। এটাই হচ্ছে তাদের চরিত্র।

বিএনপিকে নেতৃত্বহীন দল আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময়ে একটা বিষয় নজরে রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জানে, ২০০৮ সালেই ৩০টি সিট পেয়েছে। তারা জানে যে, তাদের নেতা নেই। মুণ্ডুহীন একটা দল। একটা পলাতক আসামি, আরেকটা কারাগারে। সেই দল এই দেশের নির্বাচন হতে দিতে চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি ওই গাড়ি আর মানুষকে আগুনে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন। উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন। যেন আর কেউ সাহস না পায় মানুষকে এভাবে ক্ষতি করতে।

শেখ হাসিনা বলেন, বারবার সরকার গঠন করেছি, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি মানুষের ভাগ্য বদল করতে চাই। বাংলাদেশের জনগণ আমার পরিবার। আপনারাই বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দেবেন।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও চালু করে। আমার একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছি। ধারাবাহিক গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো মানুষের নিরাপত্তা দেবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবেন। যাতে তারা দেশের কোনও মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারে, তাদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, যারা আগুন দেয় তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই কাজে সহযোগিতা করবেন।

২০৪১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই দেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র রূপ পাবে জানিয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই নৌকাই দেবে ৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, স্মার্ট অর্থনীতি হবে, স্মার্ট সমাজ হবে। বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করে আমরা তৈরি করবো। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও সেবা করার সুযোগ দেবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আর সেই প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

গৃহহীনদের জন্য নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ৮ লাখ ৪১ হাজার পরিবার বিনা পয়সায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাচ্ছে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রয়েছে বীর নিবাস। বিভিন্নভাবে গৃহায়ন তহবিলের মাধ্যমে আমরা ভূমিহীন মানুষদের ঘর, দুই কাঠা জমি এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যাতে কোনও মানুষ ভূমিহীন না থাকে, গৃহহীন না থাকে। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবেই আমরা এই পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। আমাদের দেশের একটি মানুষও যেন ঠিকানাবিহীন না থাকে, সেই ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে করেছে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই খুলনায় উদ্বোধন করা ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কথা বলেন। তিনি তাঁর সরকারের বাজেটের আকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, আগে অল্প টাকার বাজেট হতো, এখন লক্ষ, কোটি টাকার বাজেট হয়। এ কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই খুলনা নগরী থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু খুলনার উন্নয়ন করেননি। উল্টো মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় এসে এ বন্দর চালু করেছি। এখন বন্দরকে ঘিরে প্রচুর কল-কারখানা তৈরি ও হাজার হাজার মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এই বন্দরটি (মোংলা) প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভুটান ও নেপাল ব্যবহার করবে। বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। কয়েকদিন আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে খুলনা-মোংলা রেললাইন।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্রের হার কমিয়ে এনেছি। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হয়েছে, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। আমি এক সময় দেখেছি বিদেশ থেকে কাপড় আনা হতো। মানুষ সেই পুরাতন কাপড় পড়ত। এখন আর পুরোনো কাপড় আনতে হয় না। এখন মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, ঘর পাচ্ছে। আশ্রয়ন প্রকল্প, বীর নিবাস গুচ্ছগ্রাম বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন মানুষকে ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি।

খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। আজ যা উদ্বোধন করলাম, তা আপনাদের জন্য উপহার।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ও মধুমতি সেতু নির্মাণের ফলে আঞ্চলিক সুবিধা খুলনাবাসী পাচ্ছেন। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে যোগাযোগব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেলপথ কাজ শুরু হয়েছে। খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেললাইন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে উদ্বোধন করে দিয়েছি। আমরা একটা এক্সপ্রেসওয়ে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ নামে করছি, যাতে যাতায়াত সহজ হয়। নদী ভাঙনে খুলনা বিভাগের জেলাগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সময়মত ড্রেজার ও নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের পেছনে কারা আছে, তাদের খুঁজে বের করা দরকার বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাছে আমার প্রশ্ন, ৯৬ সালে মজুরি ছিল ৮০০ টাকা, আমরা করেছি ১৬০০ টাকা। দ্বিতীয়বার ৩২০০ টাকা করা হলো। তৃতীয়বার ৮২০০ করা হয়েছে। চতুর্থবার ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোন সরকার এটা করেছে? জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, আমরা সরকারি কর্মচারীদের ভাতা বাড়িয়েছি ৫ শতাংশ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাড়িয়েছে ৫৬ শতাশং। তারপরও তাদের আপত্তি।

মহাসমাবেশে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, এই নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই নৌকাই দেবে ৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ।

জনসভায় উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। নৌকায় ভোট দিবেন কি-না বলেন, হাত উচিয়ে দেখান।’ এ সময় উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে সাড়া দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি/দেবার কিছু নাই/আছে শুধু ভালোবাসা/দিয়ে গেলাম তাই।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রহুল হক, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্না, পারভীন জামান কল্পনা, নির্মল কমার চ্যাটার্জিসহ আরও অনেকে।