নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। কাজেই তারা নির্বাচন চায় না। তারা কিছু বিদেশি প্রভুর পদলেহন করে। পদলেহন করে তাদের দিয়ে দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে চায়। আজ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে গতিধারা সেটাকে ব্যাহত করতে চায়। কারণ ক্ষমতায় থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়ে যে লোভ এসে গেছে, ওইটাই তাদের কাছে সবচেয়ে বড়।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় রোমের পারকো ডেই প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেলে এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার মানে ক্ষমতায় থাকতে যত চোরা টাকা রেখেছে বাইরে, সেগুলো দিয়েই এখন আন্দোলন করে নাকি সরকার উৎখাত করবে। তো আমরাও ছেড়ে দিয়েছি যে, ঠিক আছে করো আন্দোলন, দেখি কত জোর! আমরা তো কাউকে বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু আমরা বিরোধী দলে থাকতে তো মাঠেই নামতে দিত না। আওয়ামী লীগ অফিসে কোনো দিন যেতে পারতাম না।
ভোট চুরি বিএনপির অভ্যাস মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন ভোট করে খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হলো। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভোট চোরদের স্থান দেয় না। আন্দোলন-সংগ্রাম, সেই আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগের বাধ্য হলো। আবার ২০০১-এ ক্ষমতায় এসে ঠিক একই ঘটনা আবার ২০০৬-এর ইলেকশন। কয়েকজনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করে দিল। তার পর জরুরি অবস্থা এলো, সেই ইলেকশন বাতিল হয়ে গেল। কাজেই ভোট চুরি করলে বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু মেনে নেয় না। এটা হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে তাদের বিদেশি প্রভুদের দিয়ে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। এই খেলোয়াড়দের (বিদেশি) খেলতে দেওয়া যাবে না।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অশুভ শক্তির পদচারণা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।
বিএনপি কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইবে প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, ক্ষমতায় এসে আর্মি রুলস লঙ্ঘন করে সেনা প্রধান নিজেকে আবার নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন। ঘোষণা দিয়ে তার রাজনীতি শুরু। ওই অবস্থায় হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি ভোট, সব ভোটই তো ভুয়া! এভাবে চুরি করে করেই তো…সেই জেনারেলের পকেট থেকে যে দলের সৃষ্টি, জনগণের কাছে যাওয়ার তাদের মুখটা কোথায়! আর অগ্নি সন্ত্রাস করে যাদের হত্যা করেছে তাদের সামনে তারা কোন মুখে ভোট চাইবে!
তিনি বলেন, ওরা তো ক্ষমতায় ছিল। অবৈধভাবে জিয়াউর রহমান এসেছে। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এরশাদ এসেছে। এর পর খালেদা জিয়া। গ্যাস বিক্রি মুচলেকা দিয়ে এসেছে। তারা এ দেশের কোনো দিন কল্যাণ চাইবে না— চায়নি। এটা মাথায় রাখতে হবে, তারা ভোটে মানুষের কাছে দাঁড়াতে পারেনি। তারা চায় এ দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হবে এবং ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করা; এটাই তাদের উদ্দেশ্য। সেটিই তারা করতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। সেটা কি বাংলাদেশের হতে দেবে? এটা কেউ দেবে না।
সন্ত্রাস-জঙ্গি দমনে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয়, এরপরও কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞা দেয়। যাদের দ্বারা আমরা সন্ত্রাস দূর করলাম, যাদের দ্বারা আমরা জঙ্গিবাদ দমন করলাম তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, এর রহস্য তো বুঝলাম না। বিষয়টি কী? তাহলে এই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসটা কারা সৃষ্টি করে। সেটাই তো আমাদের প্রশ্ন।
তিনি বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, শিক্ষার পরিবেশ নেই। সেশনজট লেগেই থাকত। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সেই অবস্থার পরিবতর্ন হয়েছে। শিক্ষার মান, শিক্ষার পরিবেশ সব কিছু আমরা ফিরিয়ে এনেছি। আজকে আমরা আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাচ্ছি। আজকে দেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ না, অর্থনৈতিকভাবেও আমরা একটা স্বীকৃতি পেয়েছি। যদি এই করোনাভাইরাস অতিমারি না দেখা দিত আর যদি এই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন না হতো তা হলে আজকের বাংলাদেশ আমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম।
তিনি বলেন, আবার কথায় কথায় হুমকি ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে। আমি সেটা বলেছিলাম মহাদেশ তো আর একটাই না পৃথিবীতে, আর আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে না গেলে আমাদের কিছু হবে না। আরও মহাদেশ আছে, মহাসাগর আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে যে, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি মুক্তিযুদ্ধে। যাদের সমর্থন পাইনি তারা এখন নানাভাবে আমাদের দেশকে নিয়ে খেলতে চায়। তো এই খেলোয়াড়দের খেলতে দেওয়া যাবে না।
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে যত চোরা টাকা রেখেছে বাইরে, সেগুলো দিয়েই এখন আন্দোলন…আন্দোলন করে নাকি সরকার উৎখাত করবে। তো আমরাও ছেড়ে দিয়েছি যে, ঠিক আছে, করো আন্দোলন, দেখি কত জোর!
তিনি বলেন, তার দল ও সরকার আন্দোলন করতে কাউকে বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু তারা তো মাঠেই নামতে দিত না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানিলন্ডারিং করে যে টাকা বাইরে পাঠিয়েছে, সেখান থেকে আমরা ৪০ কোটি টাকা উদ্ধার করতে পেরেছি। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা, এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়েছে। সেখানে তার শাস্তি হয়েছে। গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি; সব কিছুতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কেয়ারটেকার সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে চলে গিয়েছিল বিদেশে। আর সেখানে বসে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে কীভাবে? আমার সেটাই প্রশ্ন যে, এত টাকা কোথায় পায়?
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে কোনো দিন যেতে পারতাম না, আমাদের নেতাকর্মীরা যেতে পারতো না। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে বিএনপি হত্যা করেছে। কারো চোখ তুলে নিয়েছে, কারো হাত কেটে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে। কী না অত্যাচার করেছে! আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কত না সহ্য করেছে!
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আগামীতে আবার নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য- ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের বদ্বীপটাকে উন্নত, বদ্বীপের অধিবাসী প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে তারা যেন সুন্দরভাবে থাকতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং বাস্তবায়নের কাজও শুরু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যে কাজগুলো আমরা হাতে নিয়েছি সেগুলো সম্পন্ন করতে হলে, আওয়ামী লীগকে আবারও সরকারে আসতে হবে। এজন্য দরকার দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আর ভোট।
শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে যে স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে এটার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে, বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়তে হলে আবার নৌকা মার্কায় ভোট চাই।