Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপি-এরশাদের শাসনামলে দেশের কোন উন্নতি হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি-এরশাদের শাসনামলে দেশের কোন উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়ার আমলে দেশের কোন উন্নতি হয়নি। বরং দুর্নীতি, অর্থপাচার হয়েছে। তারা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ২৯ বছর দেশের কোন উন্নয়নই করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে তেজগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৬ দফা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিএনপির আমলে সর্বশেষ বাজেট ছিল মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার মনে হয় ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল। সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক যে অধিকার সেটা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, দেশীয় শিল্প এবং সামাজিক নিরাপত্তা এসব বিষয়গুলোতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

বাজেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব সংরক্ষিতভাবে আমরা এগোতে চাই। যাতে আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের যে প্রয়োজন সেটা আমরা মেটাতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এবারের বাজেট আমরা করেছি। খুব সংরক্ষিতভাবে আমরা এগোতে চাই। যাতে আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের যে প্রয়োজন সেটা আমরা মেটাতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এবারের বাজেট আমরা করেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, রিজার্ভ কত সেটার দিকে না তাকিয়ে মানুষের প্রয়োজন পূরণে সরকার জোর দিচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকটের ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও লাগছে।

এ সময় ছয় দফা আন্দোলনের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক নামি-দামি নেতা তখন থাকলেও পূর্ব বাংলার মানুষের বঞ্চনার কথা প্রথম তুলে ধরেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ব বাংলার টাকা দিয়ে চলত পশ্চিম পাকিস্তান। তারপরও শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়েছে বাঙালিরা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা বলেন, পূর্ব বাংলার টাকা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলত। তারপরও শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে বাঙালিদের। আর এর প্রতিবাদ করেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শেখ হাসিনা বলেন, তিন দফা পাকিস্তানের রাজধানী পরিবর্তন হয়, কিন্তু টাকা যায় পূর্ব বাংলার। দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল পূর্ব বাংলা। বঞ্চনা-বৈষম্যের প্রতিবাদ করলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধুই। আমাদের এখানে নামিদামি অনেক নেতা ছিলেন, তারা বঞ্চনার প্রতিবাদ করেননি। তারা শুধু তেল মারায় ব্যস্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন একমাত্র বাঙালির জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারিনি কোথায় আছেন তিনি।

২০ দলীয় জোট নিয়ে খোঁচা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তখনো ২০ দল ছিল, এখনো আছে। বিশ আর যায় না। আমাদের দেশে অনেক আঁতেল আছেন, তারা অনেক কিছু বেশি বোঝেন। যখন নির্বাচন এলো, তারা বলল ভোটের বাক্সে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন, ভোটের বাক্সে লাথি মেরে স্বাধীন হবে না, ভোটের বাক্সে ভোট দিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।

জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর আমলেই প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগ হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন কিংবা অবকাঠামো উন্নয়ন আর কেউ করতে পারেনি, একমাত্র আওয়ামী লীগই করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। অপরাধ ছিল গ্যাস বিক্রিতে রাজি না হওয়া। বিএনপির আমলে সবশেষ বাজেটের আকার ছিল ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর আমরা দিয়েছি ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দিকে বেশি নজর দেয়া হয়েছে, যাতে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন খুব সীমিতভাবে, খুব সংরক্ষিতভাবে এগোতে চাই। যাতে দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের যে প্রয়োজন সেটা আমরা মেটাতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বাজেট সেভাবে করেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিশেষ করে খাদ্য মূল্য, সেখানে উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টির কারণে যেমন আলুর বীজ নষ্ট হয়ে গেছে, তো এই রকম অনেক কিছুই আছে। আমরা এখনও উৎপাদনমুখী হলে খাদ্যে কোনো দিন অভাব হবে না। বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে।

বাজেটে এবার মৌলিক চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গতকাল বাজেট দিয়েছি, বিএনপির আমলে সবশেষ বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার ছিল। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকার, সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করেছি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক যে অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য তারপর দেশীয় শিল্প, সেগুলো এবং সামাজিক নিরাপত্তা, এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা মানুষের জীবনকে উন্নত করবে, নিশ্চয়তা দেবে। তার কারণ হচ্ছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কোভিড ১৯ এর অতিমারি দেখা দিয়েছিল, এই অতিমারির ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে, আমরাও সেই মন্দায় পড়ে গেলাম। সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। এরপর আসল ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, এরপর স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন, ফলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের মানুষকে খাওয়াতে হবে আগে। রিজার্ভ কত আছে না আছে, সেটার চেয়ে বেশি দরকার আমার দেশের মানুষের চাহিদাটা পূরণ করা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পানির মতো টাকা খরচ করেছি। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেটা কোনো উন্নত দেশ করেনি, বিনা পয়সায় কোভিড ১৯ এর ভ্যাকসিন দিয়েছি, বিনা পয়সায় টেস্ট করিয়েছি। সেটা করেছি কেন? মানুষকে বাঁচাতে। চিকিৎসা বিনা পয়সায়, যে ডাক্তার চিকিৎসা করেছে তাদের প্রতিদিন আলাদা ভাতা দিতে হতো, এভাবে পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। তারপর যখন দাম বেড়েছে তখন ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলার করেও আমি কিনে নিয়ে এসেছি। ঠিক সেইভাবে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, উন্নত দেশগুলোও এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।

মানুষের চাহিদা পূরণের ভাবনা থেকেই এই বাজেট দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বসে বসে হিসাব কষে, আগে এত পার্সেন্ট বেড়েছে এবার কম পার্সেন্ট বাড়ল কেন? এখন সীমিত ভাবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। যাতে আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের যে চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বাজেট করেছি।

তিনি বলেন, পারিবারিক কার্ড আমরা দিচ্ছি, কারণ এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। সব থেকে অবাক কাণ্ড আমাদের উৎপাদন বেড়েছে, চাল উৎপাদনই আমরা চারগুণ বাড়িয়েছি। প্রত্যেকটা জিনিসের উৎপাদন বাড়িয়েছি। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে, মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আর দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয় না। কম পক্ষে দুই বেলা খাবার তো পাচ্ছে মানুষ।

শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আমরা পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের তো একেবারে বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। আর সামাজিক নিরাপত্তা তো বিনা পয়সায় দিয়ে যাচ্ছি।

কালো টাকা সাদা করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা প্রশ্ন আসছে, কালো টাকা নিয়ে। কালো টাকা নিয়ে আমি শুনি, কালো টাকা সাদা করলে আর কেউ ট্যাক্স দেবে না। ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালো টাকা নয়। জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যার আছে সেই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসেব, সেই হিসেবে কেউ জমি বিক্রি করে না। বেশি দামে বিক্রি করে, এতে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকাটা তারা নিজেদের কাছেই রাখে। এবার আমরা চেয়েছি এমন ব্যবস্থা করতে যাতে করে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তারা যেন সেটা আসল পথে নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, আমি বলি মাছ ধরতে গেলে তো আদার দিতে হয়, দিতে হয় না? আদার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সেই রকম একটা ব্যবস্থা, এমনটা আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু হয়েছিল, আর পরেও প্রত্যেক সরকারই করেছে। সেই সুযোগটা আমরাও দিয়েছি। এটা নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলছে। তারপরেও মানুষের প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য সে সবের টেক্স কমিয়ে দিয়েছি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

বিএনপি-এরশাদের শাসনামলে দেশের কোন উন্নতি হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৭:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি-এরশাদের শাসনামলে দেশের কোন উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়ার আমলে দেশের কোন উন্নতি হয়নি। বরং দুর্নীতি, অর্থপাচার হয়েছে। তারা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ২৯ বছর দেশের কোন উন্নয়নই করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে তেজগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৬ দফা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিএনপির আমলে সর্বশেষ বাজেট ছিল মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার মনে হয় ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল। সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক যে অধিকার সেটা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, দেশীয় শিল্প এবং সামাজিক নিরাপত্তা এসব বিষয়গুলোতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

বাজেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব সংরক্ষিতভাবে আমরা এগোতে চাই। যাতে আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের যে প্রয়োজন সেটা আমরা মেটাতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এবারের বাজেট আমরা করেছি। খুব সংরক্ষিতভাবে আমরা এগোতে চাই। যাতে আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের যে প্রয়োজন সেটা আমরা মেটাতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এবারের বাজেট আমরা করেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, রিজার্ভ কত সেটার দিকে না তাকিয়ে মানুষের প্রয়োজন পূরণে সরকার জোর দিচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকটের ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও লাগছে।

এ সময় ছয় দফা আন্দোলনের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক নামি-দামি নেতা তখন থাকলেও পূর্ব বাংলার মানুষের বঞ্চনার কথা প্রথম তুলে ধরেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ব বাংলার টাকা দিয়ে চলত পশ্চিম পাকিস্তান। তারপরও শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়েছে বাঙালিরা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা বলেন, পূর্ব বাংলার টাকা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলত। তারপরও শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে বাঙালিদের। আর এর প্রতিবাদ করেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শেখ হাসিনা বলেন, তিন দফা পাকিস্তানের রাজধানী পরিবর্তন হয়, কিন্তু টাকা যায় পূর্ব বাংলার। দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল পূর্ব বাংলা। বঞ্চনা-বৈষম্যের প্রতিবাদ করলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধুই। আমাদের এখানে নামিদামি অনেক নেতা ছিলেন, তারা বঞ্চনার প্রতিবাদ করেননি। তারা শুধু তেল মারায় ব্যস্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন একমাত্র বাঙালির জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারিনি কোথায় আছেন তিনি।

২০ দলীয় জোট নিয়ে খোঁচা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তখনো ২০ দল ছিল, এখনো আছে। বিশ আর যায় না। আমাদের দেশে অনেক আঁতেল আছেন, তারা অনেক কিছু বেশি বোঝেন। যখন নির্বাচন এলো, তারা বলল ভোটের বাক্সে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন, ভোটের বাক্সে লাথি মেরে স্বাধীন হবে না, ভোটের বাক্সে ভোট দিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।

জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর আমলেই প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগ হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন কিংবা অবকাঠামো উন্নয়ন আর কেউ করতে পারেনি, একমাত্র আওয়ামী লীগই করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। অপরাধ ছিল গ্যাস বিক্রিতে রাজি না হওয়া। বিএনপির আমলে সবশেষ বাজেটের আকার ছিল ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর আমরা দিয়েছি ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দিকে বেশি নজর দেয়া হয়েছে, যাতে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন খুব সীমিতভাবে, খুব সংরক্ষিতভাবে এগোতে চাই। যাতে দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের যে প্রয়োজন সেটা আমরা মেটাতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বাজেট সেভাবে করেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিশেষ করে খাদ্য মূল্য, সেখানে উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টির কারণে যেমন আলুর বীজ নষ্ট হয়ে গেছে, তো এই রকম অনেক কিছুই আছে। আমরা এখনও উৎপাদনমুখী হলে খাদ্যে কোনো দিন অভাব হবে না। বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে।

বাজেটে এবার মৌলিক চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গতকাল বাজেট দিয়েছি, বিএনপির আমলে সবশেষ বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার ছিল। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকার, সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করেছি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক যে অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য তারপর দেশীয় শিল্প, সেগুলো এবং সামাজিক নিরাপত্তা, এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা মানুষের জীবনকে উন্নত করবে, নিশ্চয়তা দেবে। তার কারণ হচ্ছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কোভিড ১৯ এর অতিমারি দেখা দিয়েছিল, এই অতিমারির ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে, আমরাও সেই মন্দায় পড়ে গেলাম। সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। এরপর আসল ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, এরপর স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন, ফলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের মানুষকে খাওয়াতে হবে আগে। রিজার্ভ কত আছে না আছে, সেটার চেয়ে বেশি দরকার আমার দেশের মানুষের চাহিদাটা পূরণ করা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পানির মতো টাকা খরচ করেছি। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেটা কোনো উন্নত দেশ করেনি, বিনা পয়সায় কোভিড ১৯ এর ভ্যাকসিন দিয়েছি, বিনা পয়সায় টেস্ট করিয়েছি। সেটা করেছি কেন? মানুষকে বাঁচাতে। চিকিৎসা বিনা পয়সায়, যে ডাক্তার চিকিৎসা করেছে তাদের প্রতিদিন আলাদা ভাতা দিতে হতো, এভাবে পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। তারপর যখন দাম বেড়েছে তখন ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলার করেও আমি কিনে নিয়ে এসেছি। ঠিক সেইভাবে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, উন্নত দেশগুলোও এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।

মানুষের চাহিদা পূরণের ভাবনা থেকেই এই বাজেট দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বসে বসে হিসাব কষে, আগে এত পার্সেন্ট বেড়েছে এবার কম পার্সেন্ট বাড়ল কেন? এখন সীমিত ভাবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। যাতে আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের যে চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বাজেট করেছি।

তিনি বলেন, পারিবারিক কার্ড আমরা দিচ্ছি, কারণ এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। সব থেকে অবাক কাণ্ড আমাদের উৎপাদন বেড়েছে, চাল উৎপাদনই আমরা চারগুণ বাড়িয়েছি। প্রত্যেকটা জিনিসের উৎপাদন বাড়িয়েছি। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে, মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আর দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয় না। কম পক্ষে দুই বেলা খাবার তো পাচ্ছে মানুষ।

শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আমরা পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের তো একেবারে বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। আর সামাজিক নিরাপত্তা তো বিনা পয়সায় দিয়ে যাচ্ছি।

কালো টাকা সাদা করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা প্রশ্ন আসছে, কালো টাকা নিয়ে। কালো টাকা নিয়ে আমি শুনি, কালো টাকা সাদা করলে আর কেউ ট্যাক্স দেবে না। ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালো টাকা নয়। জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যার আছে সেই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসেব, সেই হিসেবে কেউ জমি বিক্রি করে না। বেশি দামে বিক্রি করে, এতে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকাটা তারা নিজেদের কাছেই রাখে। এবার আমরা চেয়েছি এমন ব্যবস্থা করতে যাতে করে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তারা যেন সেটা আসল পথে নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, আমি বলি মাছ ধরতে গেলে তো আদার দিতে হয়, দিতে হয় না? আদার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সেই রকম একটা ব্যবস্থা, এমনটা আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু হয়েছিল, আর পরেও প্রত্যেক সরকারই করেছে। সেই সুযোগটা আমরাও দিয়েছি। এটা নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলছে। তারপরেও মানুষের প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য সে সবের টেক্স কমিয়ে দিয়েছি।