নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যারা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না-এ কথা জানিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন, আজকে যারা বড় বড় কথা বলেন তাদেরকে ইতিহাসটি আবার নতুন করে পড়তে বলবো। গল্পকে ইতিহাস বলে চালানো যায় না। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্ম অন্ধ নয়।
বুধবার (১৬ জুলাই) প্রেসক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচার এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যদি কেউ সত্যিকারভাবে দেশকে ভালোবাসে, যদি মনে করে-তারা বাংলাদেশের আদর্শে বিশ্বাসী, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাসী, তাহলে দেশে বিদ্বেষের রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতো না। যারা বাংলাদেশে বিভেদ-বিদ্বেষ সৃষ্টি করছে, আমি তাদের প্রতি আবেদন করবো- বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিখুন। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসলে বাংলাদেশে আর কোনো কোন্দল হবে না।
মঈন খান বলেন, বিগত ১৫ বছর একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল মুখে স্বাধীনতার কথা বলে গেছে। অথচ স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে বারবার হাত মিলিয়ে দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করেছে। বিএনপি শুধু বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে। যারা বর্তমানে দেশের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছেন, তাদের শুধু একটা কথাই বলবো যে, আপনারা বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিখুন। বর্তমানে দেশজুড়ে যে সহিংসতা-হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে, যারা ঘটাচ্ছেন, তাদের বলবো, সঠিক পথে ফিরে আসুন।
তিনি বলেন, বিএনপি দেশের স্বকীয়তা ও ভিন্নধারার চিন্তায় বিশ্বাস করে। কিন্তু বন্দুকের ভয় দেখিয়ে আরেকজনের মতবাদ চাপিয়ে দেয়া যাবে না। যারা এ পন্থা অবলম্বন করে, তাদের এ পন্থা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
তিনি আরো বলেন, ২৪ এর আন্দোলনকে আজ আমরা স্মরণ করি, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ৫ আগস্ট যেদিন স্বৈরাচার পালিয়ে গেল, সেদিনের বিজয়কে আটকে রাখলে হবে না। একে সুসংহত করে দেশের প্রতিটা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। কথা হলো, স্বাধীনতার ১ বছর অতিক্রম হলেও আমাদের অগ্রগতি কী? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১ বছরে কী অর্জন করেছে, তা বিশ্লেষণ করতে হবে। তাদের কাছে দেশের মানুষের একটাই প্রত্যাশা, সেটা হলো গণতান্ত্রিক উত্তরণ। গত কয়েকদিনের ঘটনা প্রবাহ কি সত্যিকার মানবসৃষ্ট নাকি উদ্দেশ্যমূলক সাজানো নাটক, তা উদঘাটন করতে হবে।
মঈন খান বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের এখন কেবল পথ একটাই, তা হলো সঠিক নিরপেক্ষ নির্বাচন। এর বাইরে আর কোনো পন্থা নেই। কেউ যদি বলে তারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, তাহলে তাদের পথ আলাদা।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টে যে বিজয় এসেছে, সেটা কিন্তু সংগ্রামের প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপ ছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া, তবে তা এখনো হয়নি। আর তৃতীয় ধাপ ছিল একটি জনগণের নির্বাচিত দলের সরকার গঠিত হওয়া। তাহলেই আমাদের সেই বিজয় পূর্ণতা পাবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে মঈন খান বলেন, আমরা এদেশে বড় হয়েছি। আপনারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, আপনারা কী কখনো দেখেছেন যে, বাংলাদেশের প্রকাশ্যে এই ধরণে শব্দ, ভাষা, কটুবাক্য এগুলো কখনো কেউ প্রকাশ্যে এভাবে বলেনি। আপনাদের দীর্ঘজীবন ৬০/৭০/৮০ বছর হয়েছে তারা বলুন?উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাংলাদেশের যে ইমেজ সেই ইমেজকে ধ্বংস করার জন্য যে কর্মকাণ্ড বিগত কয়েকদিন ধরে দেখছি সেটা কেন হচ্ছে তার বিশ্লেষণ করতে হবে, এজন্য কারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আমি বলি না যে, তাদের শাস্তি দেব, শাস্তি দেওয়ার অধিকার আমাদের নেই। কিন্তু আমি একথা বলব, আপনারা যে অন্যায় হচ্ছে তার প্রতিবাদ করুন শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত হবার জন্য, গণতান্ত্রিক পথে পরিচালিত হবার জন্য যা করণীয় আছে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আপনারা সেটা করুন।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, প্রয়াত মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে বিএনপি নেত্রী রিটা রহমান, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মজিবুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।