নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে বিএনপি এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গণভোট বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ। তবে বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে এক ডায়লগে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, গণভোট নিয়ে আলোচনায় বসতে তারা প্রস্তুত, কিন্তু বিএনপি এতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমরা বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। তারা বলেছে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না। আমরা যেকোন সময় আলোচনায় বসতে রাজি আছি। প্রয়োজনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় বসতে উদ্বুদ্ধ করবো।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, কিন্তু কীভাবে তা বাস্তবায়িত হবে সেটি এখনো নির্ধারিত হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যখন সরকারের কাছে সুপারিশ দেয়, তখনই সেখানে বিরোধ তৈরি হয়।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংলাপ ও জনমত প্রকাশ দুটোকেই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডেমোক্রেসিতে আলোচনা এবং রাজপথে ভয়েস রেইস করা—এই দুটোই চলে। আমরা তো কোনো ভায়োলেন্স করছি না।
জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবের বিরোধিতা জানিয়ে আজাদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনে মানুষের ফোকাস থাকে দল ও প্রার্থীকে ঘিরে। আমাদের দেশে ভোটকেন্দ্র দখলের প্রবণতা আছে। একই দিনে দুটি ভোট দিতে গেলে সময় ব্যবস্থাপনা হবে না, ভোট কাস্টিং কমে যাবে। পরে আবার বলা হবে, জনগণ জুলাই চার্টারের পক্ষে রায় দেয়নি।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আমলের প্রশাসন এখনো রয়ে গেছে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হয়নি। তাই আগে গণভোট হলে জনগণের আস্থা তৈরি হবে, এরপর জাতীয় নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য হবে।
জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জামায়াত কোনো প্রেশার গ্রুপ নয়, বরং জনগণের মতামত ও প্রত্যাশা প্রতিফলিত করতে রাজপথে রয়েছে। আমরা মতভিন্নতা মেনে নিতে পারি, কিন্তু মতবিরোধ চাই না।
তিনি বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। জনগণের অভিপ্রায় এখন একটি সুন্দর ও পরিবর্তিত বাংলাদেশ গড়া। সেই লক্ষ্যেই সংস্কারের মধ্যদিয়ে রাজনীতি এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কিছু নোট অব ডিসেন্টসহ সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সনদের বাইরের বিষয়। ফলে সেখানে নোট অব ডিসেন্ট নেই। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পেশ করার পরই মতভিন্নতা তৈরি হয়েছে।
তার ভাষায়, গণভোটের সময় নিয়ে প্যাঁচ লাগিয়েছে কমিশন। নির্বাচনের দিন গণভোট হলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে মূল ফোকাস থাকে বিজয়ী হওয়া। অনেক সময় ভোটগ্রহণ স্থগিত হতে পারে, সে ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় পড়বে সনদ।
জামায়াত নেতা বলেন, আমরা কি আবার ফ্যাসিবাদী সময়ের মতো সনদকে অনিশ্চয়তার ফাঁদে ফেলছি? গণভোট আগে হলে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের জন্য সেটি হবে আসল এসিড টেস্ট। তাহলে জাতীয় নির্বাচনে মানুষ আস্থার সঙ্গে যেতে পারবে।
তিনি অভিযোগ করেন, অতীতে মানুষের আস্থা নষ্ট করা হয়েছে, এখন সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ‘২৭ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, সেখানে জনস্বার্থে এক-দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে গণভোট করা কোনো অপচয় নয়,’ বলেন হামিদুর রহমান।
বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াতের আহ্বানে বিএনপি বসতে রাজি হয়নি। আমরাও চাই না রাজনীতি আবার ফ্যাসিবাদী কালচারে ফিরে যাক। বিএনপি আহ্বান করলে আমরা আলোচনায় যেতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, জামায়াত আলোচনাতেই ছিল। একইসঙ্গে রাজপথে থাকা রাজনৈতিক সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য। আমরা সহিংসতায় যাচ্ছি না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আছি।
তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষার প্রসঙ্গে জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নব্বইয়ের তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবর্তন আনতেই হবে। তরুণরা কী চায় আমরা বুঝে গেছি তাদের জন্য ভবিষ্যতের দ্বার খুলে দিতে হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 























