Dhaka শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপি আন্দোলন করলে ভালো, সাধারণ মানুষ কিছু টাকা পাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আন্দোলন করে যাচ্ছে, আমরা তাদের আন্দোলনে বাধা দিচ্ছি না। তারা আন্দোলনে লোকসমাগম করছে। খুব ভালো কথা। এতকাল চুরি করে যা টাকা বানিয়ে ছিল আর যে টাকা মানি লন্ডারিং করে ছিল, সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে। অন্তত মানুষের প্যাকেটে কিছু টাকা তো যাচ্ছে।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম (ইউএনজিএ) অধিবেশনে যোগদানের ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ওয়াশিংটন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানের সঙ্গে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। আমি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। আমি সবুজ জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন এবং ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ ফান্ডকে কার্যকর করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জানে নির্বাচন করে জনগণের ভোট পাবে না, তারাই সব জায়গায় ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে এত বেশি টাকা মানি লন্ডারিং, এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে তারা অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে এবং সব জায়গায় একটা প্রচার। আর এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা বাস্তব অবস্থাটা বুঝে কি না- আমি জানি না, কিন্তু তারা এই একই কথা, মানে ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। সেটা আমি (যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে সফরে) স্পষ্ট বলে আসছি।’

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি। আমার মনে পড়ে না, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেসও করেনি। ২০০৭ এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, এরপর এটা কেউ চায়?

তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫-৯৬, ২০০১-০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কি দিয়েছে? মানুষের ভাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছে, পারেনি; দুর্ভিক্ষ ছিল। সব সময় উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত, দক্ষিণেও। মানুষ তখন এক বেলা খাবার জোটাতে পারত না। ছেঁড়া কাপড় পরে থাকত, বিদেশ থেকে পুরাতন কাপড় এনে পরানো হতো। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টিহীনতা প্রতিনিয়তই ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ যতটুকু পাচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগ এবং আমরা ক্ষমতায় আসার পর উন্নতিটা হচ্ছে। এখন এত প্রশ্ন আসে কেন, সেটাই আমার কথা। এখন একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করেছে, সেটাই মানুষের মাথাব্যথা হয়ে গেল কি না। সেটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়, এই সন্দেহটা আমারও আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তো আমিই তাদের বলেছি। আমরা আব্রাহাম লিংকনের যেটা জানি, গভর্মেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। গভর্মেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল এটা তো আমরাই এস্টাবলিশড করেছি। গভর্নমেন্ট ফর দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি থেকে তো আমরাই রেহাই দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সেনাবাহিনীসহ কত মানুষকে হত্যা করেছে। বিমানবাহিনীর কত অফিসারকে হত্যা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর কি অকথ্য নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। যারা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিং ও যত কর্ম-অপকর্ম বাংলাদেশে ছিল সেগুলো থেকে মুক্ত করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেশন জট ছিল, সেটা থেকে আমরা উদ্ধার করেছি। এসব করে যখন একটা নিয়মতান্ত্রিক দেশ পরিচালনা করছি এবং দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে, তখন হঠাৎ অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন সন্দেহ হয় রে। এটাই বলতে হয়, সন্দেহ হয় রে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের নিজেদেরও একটা দোষ আছে। আমাদের দেশে কিছু লোক নির্বাচন নিয়ে বেশি কথা বলি। যারা নির্বাচনকে বয়কট করেছে, কলুষিত করেছে, ভোট চুরি করেছে, ভোট ডাকাতি করেছে তাদের কাছ থেকে শুনতে হয় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। ২০০৮ সালে যখন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলো, যেই নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। তাদের আবার বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় ঐক্য জোট, পরে আরেকটা সিট বেড়ে হয়েছিল ৩০টা। ২০১৪ নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা এবং এমন কোনো অপকর্ম নাই, করেনি। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে নির্বাচন থেকে সরে গেল। সরে গিয়ে নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করল। এখন তাদের মুখে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনি এবং তা সব জায়গায় প্রচার করে বেড়াচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ আমার দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে তখন আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যখন মিলিটারি ডিক্টেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি, জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা স্লোগান দিয়েছি আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব এবং নির্বাচনের যে সংস্কারগুলো ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন যেটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেটাকে আলাদা করে দিয়ে, বাজেট আলাদা করে দিয়ে, তাদের আরও শক্তিশালী করা এবং জনগণের মধ্যে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে জনগণের ক্ষমতাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই ক্ষমতাকে বের করে আমরাই তো এনেছি। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের জোট আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করে এটা করেছি এবং এর জন্য আমাদের বহু মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে। আমি সেই কথাটাই মানুষকে বলেছি, আমাকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না। বাংলাদেশে মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন, সেটা আমরা করেছি। সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও নির্বাচন হয়েছে বলে জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে। এখন আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই অর্থনৈতিক উন্নতি দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আসল কথা নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেওয়া। ক্ষমতায় থেকে এত মানিলন্ডারিং করেছে, এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে, তারা অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে। সব জায়গায় একটা প্রচার অর্থাৎ তারা ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে। এটা আমি সুস্পষ্ট ভাবে বলে এসেছি।

তিনি বলেন, ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম, আমাকে ভোটের হিসাব শেখাতে হবে না। আমরা সেই আইয়ুব খানের আমল থেকে আন্দোলন করে রাস্তায় থাকি। আমরা এমন না যে নতুন এসেছি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবই তো ভোট চোর। আওয়ামী লীগ আসার পর আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করতে হয়নি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন। কাজের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করি। আর এই দেশের মানুষ এখন জানে নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। নৌকায় ভোট দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ৪১ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এটা কারো এনজিওয়ের মাধ্যমে হয়নি, কারো ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে হয়নি। বরং আমরা ক্ষুদ্র সঞ্চয় করাচ্ছি। আমরা দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে এনেছি, বর্তমানে দেশে হতদরিদ্র মাত্র পাঁচ পার্সেন্ট। ইনশাআল্লাহ ওটুকুও থাকবে না। হতদরিদ্র থাকবে না। এখন একটা সন্দেহের বিষয় আছে, আমাদের মানুষ কতটুকু সচেতন সেটা হলো কথা। তবে কিছু লোক তো আছে, যারা চোখ থাকতে অন্ধ এবং কান থাকতে বধির। তাহলে তো আর কিছু করা যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যখন দেশে স্বৈরশাসন ছিল, আমরা সংগ্রাম করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থার যে সংস্কার। ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। এটা আওয়ামী লীগই করেছে। আমাকে শেখাতে হবে না। একটানা আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশের উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে।

‘বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা’ অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না।

জি-২০ সম্মেলন থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরেছেন’, বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিএনপির এই অভিযোগের কোনও উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা, এই বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না—দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।’

বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে। আর টিকে আছে মিথ্যার ওপরে। তাদের শেকড় তো নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এটাই করবে। এটা তাদের অভ্যাস।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো। ভোটে আসলে আবার করবো। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে। আমি বাবা-মা সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। কত বছর হয়েছে রাজনীতির? একটা স্বপ্ন ছিল- জাতির পিতার, সেটা করেছি, এখন তো কেউ না খেয়ে থাকে না।

রিজার্ভ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণি কথা বলেন। তারা কী জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দেই? বিদ্যুতকেন্দ্র-টেন্দ্র বন্ধ করে দেই।

তিনি বলেন, আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি, প্রতিদিন একটু করে লোডশেডিং দিতে। যাতে বিদ্যুৎ থাকার গুরুত্বটা বোঝে। আর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে সবাই। সুবিধাটা নিচ্ছে অর্থশালীরা। এজন্য নির্দেশনা দিয়েছি, যারা বেশি ব্যবহার করবে, তারা বেশি টাকা দেবে। সেভাবে মূল্য নির্ধারণ করতে।

এসময় প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি। কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এরকম বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন দুনিয়া তাকিয়ে দেখে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দারিদ্র্য বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একদিকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর স্যাংশন দেবে আরেকদিকে তাদের নিরাপত্তা চাইবে এটা কেমন কথা।

সেখানে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকায় যিনি অ্যাম্বাসেডর আছেন, তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম— আমেরিকা সরকার থেকে আমার অ্যাম্বাসেডরকে কি ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তিনি বললেন— শুধু আমাদের এম্বাসিতে তারা কিছু নিরাপত্তা দেয়। তখন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন— আমরা তো আমেরিকা এম্বাসিতে নিরাপত্তার জন্য ১৫৮ জন পুলিশকে ডিপ্লয় করেছি এবং এখানে যে অ্যাম্বাসেডর আছে তার জন্য গানম্যান দেওয়া আছে সিভিল ড্রেসে। কাজেই এখানে তার নিরাপত্তার তো এমন কোনো ঘাটতি নেই।

তিনি বলেন, হোলি আর্টিজানের পর কয়েকটা দেশ শঙ্কিত ছিল, তখন তাদের কিছু আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হলি আর্টিজানের পর আমাদের দেশে আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়নি। এর বাইরেও তো অনেক অ্যাম্বেসি আছে, যারা বলে যে ওরা পেলে আমরা কেন পাব না। তাছাড়া এখন সেরকম কোনো অসুবিধা নেই। আমাদেরও পুলিশ দরকার এখন সারা দেশের জন্য। কাজেই সেটা উইড্র করা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে তো গানম্যান দেওয়া আছে। এছাড়া তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থাও কিন্তু অ্যাম্বাসির ভেতর আছে। এটা নিয়ে বারবার প্রশ্ন হচ্ছে, কিন্তু এটার কোনো অর্থ নেই। আমার অ্যাম্বাসেডর তো কোনো নিরাপত্তা পায় না।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না, যাদেরকে দিয়ে কাজ করাবেন তাদের (সাংবাদিকদের) ভালো-মন্দ তো দেখতে হবে। ওয়েজবোর্ড আমরা দিয়েছি, এটা কার্যকর করার দায়িত্ব মালিকদের।

তিনি বলেন, আমি ৯৬ সালে সরকারে এসে আজকের টেলিভিশন রেডিওসহ সব বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেই। উন্মুক্ত করেছি বলেই শুধু সাংবাদিক না, শিল্পী, সাহিত্যিক, টেকনিশিয়ানসহ অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছে। একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বেসরকারি চ্যানেল ও পত্রিকার মালিকদের মধ্যে অনেকে এখানে বসেও আছে, এটা তো তাদের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না, যাদেরকে দিয়ে কাজ করাবেন তাদের ভালো-মন্দ তো দেখতে হবে। ওয়েজবোর্ড আমরা দিয়েছি, এটা কার্যকর করার দায়িত্ব মালিকদের। মালিকদের আবার কমিটি আছে, তারা আবার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু মেসেজ দেওয়ার আমরা দেব। এখানে মালিকদের যা করার তা করা উচিত।

সরকারপ্রধান বলেন, এখানে যারা মালিক তাদেরকে আমি বলব, ওয়েজবোর্ড কার্যকর করে দিয়েন। সাংবাদিকরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য সার্ভিস দিয়ে থাকে, কাজ করে। তাদের ভালো-মন্দ দেখতে হবে।

ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সবাইকে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ফ্যাশন হয়ে গেছে, কেউ মশারি টাঙাতে চায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন সিজনে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এজন্য এমপি বা ডাক্তার দাঁড় করিয়ে দিলে তো হবে না। প্রত্যেকের নিজের সচেতন হতে হবে। নিজের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখা, যেখানে মশা জন্মাচ্ছে সেই জায়গাটা দেখে পরিষ্কার করা। শুধু নিজের ঘর না বাইরে রাস্তা বা তার আশপাশে প্রতিবেশীরা মিলে পরিষ্কার করতে হবে। যেন এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো তৈরি হতে না পারে। এভাবে সবার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রচেষ্টা আছে। এছাড়া গবষণা চলছে , শুনলাম জাপান নাকি একটা টিকা আবিষ্কার করেছে। এগুলো তো আসলে সময় সাপেক্ষ।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন তো ফ্যাশন হয়ে গেছে, কেউ মশারি টাঙাতে চায় না। মশারি টাঙানো একান্ত দরকার। আর ওষুধ দিতে দিতে মশার সহ্য হয়ে গেছে। তাই ওষুধ কাজ করে না। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাই উদ্যোগ নিলে এর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অবস্থান করেন। অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে অন্যান্য উচ্চ-পর্যায়ের ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা।

এরপর প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে যান। সেখান থেকে দেশে ফেরার আগে শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন। দেশ দুটিতে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফেরেন সরকারপ্রধান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

স্বল্পমেয়াদি সরকার দীর্ঘায়িত হওয়া অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয় : ফাহমিদা খাতুন

বিএনপি আন্দোলন করলে ভালো, সাধারণ মানুষ কিছু টাকা পাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৬:১০:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আন্দোলন করে যাচ্ছে, আমরা তাদের আন্দোলনে বাধা দিচ্ছি না। তারা আন্দোলনে লোকসমাগম করছে। খুব ভালো কথা। এতকাল চুরি করে যা টাকা বানিয়ে ছিল আর যে টাকা মানি লন্ডারিং করে ছিল, সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে। অন্তত মানুষের প্যাকেটে কিছু টাকা তো যাচ্ছে।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম (ইউএনজিএ) অধিবেশনে যোগদানের ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ওয়াশিংটন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানের সঙ্গে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। আমি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। আমি সবুজ জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন এবং ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ ফান্ডকে কার্যকর করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জানে নির্বাচন করে জনগণের ভোট পাবে না, তারাই সব জায়গায় ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে এত বেশি টাকা মানি লন্ডারিং, এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে তারা অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে এবং সব জায়গায় একটা প্রচার। আর এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা বাস্তব অবস্থাটা বুঝে কি না- আমি জানি না, কিন্তু তারা এই একই কথা, মানে ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। সেটা আমি (যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে সফরে) স্পষ্ট বলে আসছি।’

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি। আমার মনে পড়ে না, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেসও করেনি। ২০০৭ এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, এরপর এটা কেউ চায়?

তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫-৯৬, ২০০১-০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কি দিয়েছে? মানুষের ভাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছে, পারেনি; দুর্ভিক্ষ ছিল। সব সময় উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত, দক্ষিণেও। মানুষ তখন এক বেলা খাবার জোটাতে পারত না। ছেঁড়া কাপড় পরে থাকত, বিদেশ থেকে পুরাতন কাপড় এনে পরানো হতো। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টিহীনতা প্রতিনিয়তই ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ যতটুকু পাচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগ এবং আমরা ক্ষমতায় আসার পর উন্নতিটা হচ্ছে। এখন এত প্রশ্ন আসে কেন, সেটাই আমার কথা। এখন একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করেছে, সেটাই মানুষের মাথাব্যথা হয়ে গেল কি না। সেটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়, এই সন্দেহটা আমারও আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তো আমিই তাদের বলেছি। আমরা আব্রাহাম লিংকনের যেটা জানি, গভর্মেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। গভর্মেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল এটা তো আমরাই এস্টাবলিশড করেছি। গভর্নমেন্ট ফর দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি থেকে তো আমরাই রেহাই দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সেনাবাহিনীসহ কত মানুষকে হত্যা করেছে। বিমানবাহিনীর কত অফিসারকে হত্যা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর কি অকথ্য নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। যারা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিং ও যত কর্ম-অপকর্ম বাংলাদেশে ছিল সেগুলো থেকে মুক্ত করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেশন জট ছিল, সেটা থেকে আমরা উদ্ধার করেছি। এসব করে যখন একটা নিয়মতান্ত্রিক দেশ পরিচালনা করছি এবং দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে, তখন হঠাৎ অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন সন্দেহ হয় রে। এটাই বলতে হয়, সন্দেহ হয় রে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের নিজেদেরও একটা দোষ আছে। আমাদের দেশে কিছু লোক নির্বাচন নিয়ে বেশি কথা বলি। যারা নির্বাচনকে বয়কট করেছে, কলুষিত করেছে, ভোট চুরি করেছে, ভোট ডাকাতি করেছে তাদের কাছ থেকে শুনতে হয় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। ২০০৮ সালে যখন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলো, যেই নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। তাদের আবার বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় ঐক্য জোট, পরে আরেকটা সিট বেড়ে হয়েছিল ৩০টা। ২০১৪ নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা এবং এমন কোনো অপকর্ম নাই, করেনি। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে নির্বাচন থেকে সরে গেল। সরে গিয়ে নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করল। এখন তাদের মুখে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনি এবং তা সব জায়গায় প্রচার করে বেড়াচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ আমার দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে তখন আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যখন মিলিটারি ডিক্টেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি, জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা স্লোগান দিয়েছি আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব এবং নির্বাচনের যে সংস্কারগুলো ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন যেটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেটাকে আলাদা করে দিয়ে, বাজেট আলাদা করে দিয়ে, তাদের আরও শক্তিশালী করা এবং জনগণের মধ্যে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে জনগণের ক্ষমতাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই ক্ষমতাকে বের করে আমরাই তো এনেছি। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের জোট আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করে এটা করেছি এবং এর জন্য আমাদের বহু মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে। আমি সেই কথাটাই মানুষকে বলেছি, আমাকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না। বাংলাদেশে মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন, সেটা আমরা করেছি। সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও নির্বাচন হয়েছে বলে জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে। এখন আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই অর্থনৈতিক উন্নতি দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আসল কথা নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেওয়া। ক্ষমতায় থেকে এত মানিলন্ডারিং করেছে, এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে, তারা অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে। সব জায়গায় একটা প্রচার অর্থাৎ তারা ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে। এটা আমি সুস্পষ্ট ভাবে বলে এসেছি।

তিনি বলেন, ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম, আমাকে ভোটের হিসাব শেখাতে হবে না। আমরা সেই আইয়ুব খানের আমল থেকে আন্দোলন করে রাস্তায় থাকি। আমরা এমন না যে নতুন এসেছি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবই তো ভোট চোর। আওয়ামী লীগ আসার পর আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করতে হয়নি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন। কাজের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করি। আর এই দেশের মানুষ এখন জানে নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। নৌকায় ভোট দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ৪১ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এটা কারো এনজিওয়ের মাধ্যমে হয়নি, কারো ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে হয়নি। বরং আমরা ক্ষুদ্র সঞ্চয় করাচ্ছি। আমরা দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে এনেছি, বর্তমানে দেশে হতদরিদ্র মাত্র পাঁচ পার্সেন্ট। ইনশাআল্লাহ ওটুকুও থাকবে না। হতদরিদ্র থাকবে না। এখন একটা সন্দেহের বিষয় আছে, আমাদের মানুষ কতটুকু সচেতন সেটা হলো কথা। তবে কিছু লোক তো আছে, যারা চোখ থাকতে অন্ধ এবং কান থাকতে বধির। তাহলে তো আর কিছু করা যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যখন দেশে স্বৈরশাসন ছিল, আমরা সংগ্রাম করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থার যে সংস্কার। ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। এটা আওয়ামী লীগই করেছে। আমাকে শেখাতে হবে না। একটানা আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশের উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে।

‘বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা’ অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না।

জি-২০ সম্মেলন থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরেছেন’, বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিএনপির এই অভিযোগের কোনও উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা, এই বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না—দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।’

বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে। আর টিকে আছে মিথ্যার ওপরে। তাদের শেকড় তো নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এটাই করবে। এটা তাদের অভ্যাস।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো। ভোটে আসলে আবার করবো। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে। আমি বাবা-মা সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। কত বছর হয়েছে রাজনীতির? একটা স্বপ্ন ছিল- জাতির পিতার, সেটা করেছি, এখন তো কেউ না খেয়ে থাকে না।

রিজার্ভ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণি কথা বলেন। তারা কী জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দেই? বিদ্যুতকেন্দ্র-টেন্দ্র বন্ধ করে দেই।

তিনি বলেন, আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি, প্রতিদিন একটু করে লোডশেডিং দিতে। যাতে বিদ্যুৎ থাকার গুরুত্বটা বোঝে। আর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে সবাই। সুবিধাটা নিচ্ছে অর্থশালীরা। এজন্য নির্দেশনা দিয়েছি, যারা বেশি ব্যবহার করবে, তারা বেশি টাকা দেবে। সেভাবে মূল্য নির্ধারণ করতে।

এসময় প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি। কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এরকম বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন দুনিয়া তাকিয়ে দেখে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দারিদ্র্য বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একদিকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর স্যাংশন দেবে আরেকদিকে তাদের নিরাপত্তা চাইবে এটা কেমন কথা।

সেখানে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকায় যিনি অ্যাম্বাসেডর আছেন, তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম— আমেরিকা সরকার থেকে আমার অ্যাম্বাসেডরকে কি ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তিনি বললেন— শুধু আমাদের এম্বাসিতে তারা কিছু নিরাপত্তা দেয়। তখন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন— আমরা তো আমেরিকা এম্বাসিতে নিরাপত্তার জন্য ১৫৮ জন পুলিশকে ডিপ্লয় করেছি এবং এখানে যে অ্যাম্বাসেডর আছে তার জন্য গানম্যান দেওয়া আছে সিভিল ড্রেসে। কাজেই এখানে তার নিরাপত্তার তো এমন কোনো ঘাটতি নেই।

তিনি বলেন, হোলি আর্টিজানের পর কয়েকটা দেশ শঙ্কিত ছিল, তখন তাদের কিছু আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হলি আর্টিজানের পর আমাদের দেশে আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়নি। এর বাইরেও তো অনেক অ্যাম্বেসি আছে, যারা বলে যে ওরা পেলে আমরা কেন পাব না। তাছাড়া এখন সেরকম কোনো অসুবিধা নেই। আমাদেরও পুলিশ দরকার এখন সারা দেশের জন্য। কাজেই সেটা উইড্র করা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে তো গানম্যান দেওয়া আছে। এছাড়া তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থাও কিন্তু অ্যাম্বাসির ভেতর আছে। এটা নিয়ে বারবার প্রশ্ন হচ্ছে, কিন্তু এটার কোনো অর্থ নেই। আমার অ্যাম্বাসেডর তো কোনো নিরাপত্তা পায় না।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না, যাদেরকে দিয়ে কাজ করাবেন তাদের (সাংবাদিকদের) ভালো-মন্দ তো দেখতে হবে। ওয়েজবোর্ড আমরা দিয়েছি, এটা কার্যকর করার দায়িত্ব মালিকদের।

তিনি বলেন, আমি ৯৬ সালে সরকারে এসে আজকের টেলিভিশন রেডিওসহ সব বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেই। উন্মুক্ত করেছি বলেই শুধু সাংবাদিক না, শিল্পী, সাহিত্যিক, টেকনিশিয়ানসহ অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছে। একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বেসরকারি চ্যানেল ও পত্রিকার মালিকদের মধ্যে অনেকে এখানে বসেও আছে, এটা তো তাদের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না, যাদেরকে দিয়ে কাজ করাবেন তাদের ভালো-মন্দ তো দেখতে হবে। ওয়েজবোর্ড আমরা দিয়েছি, এটা কার্যকর করার দায়িত্ব মালিকদের। মালিকদের আবার কমিটি আছে, তারা আবার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু মেসেজ দেওয়ার আমরা দেব। এখানে মালিকদের যা করার তা করা উচিত।

সরকারপ্রধান বলেন, এখানে যারা মালিক তাদেরকে আমি বলব, ওয়েজবোর্ড কার্যকর করে দিয়েন। সাংবাদিকরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য সার্ভিস দিয়ে থাকে, কাজ করে। তাদের ভালো-মন্দ দেখতে হবে।

ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সবাইকে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ফ্যাশন হয়ে গেছে, কেউ মশারি টাঙাতে চায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন সিজনে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এজন্য এমপি বা ডাক্তার দাঁড় করিয়ে দিলে তো হবে না। প্রত্যেকের নিজের সচেতন হতে হবে। নিজের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখা, যেখানে মশা জন্মাচ্ছে সেই জায়গাটা দেখে পরিষ্কার করা। শুধু নিজের ঘর না বাইরে রাস্তা বা তার আশপাশে প্রতিবেশীরা মিলে পরিষ্কার করতে হবে। যেন এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো তৈরি হতে না পারে। এভাবে সবার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রচেষ্টা আছে। এছাড়া গবষণা চলছে , শুনলাম জাপান নাকি একটা টিকা আবিষ্কার করেছে। এগুলো তো আসলে সময় সাপেক্ষ।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন তো ফ্যাশন হয়ে গেছে, কেউ মশারি টাঙাতে চায় না। মশারি টাঙানো একান্ত দরকার। আর ওষুধ দিতে দিতে মশার সহ্য হয়ে গেছে। তাই ওষুধ কাজ করে না। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাই উদ্যোগ নিলে এর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অবস্থান করেন। অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে অন্যান্য উচ্চ-পর্যায়ের ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা।

এরপর প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে যান। সেখান থেকে দেশে ফেরার আগে শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন। দেশ দুটিতে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফেরেন সরকারপ্রধান।