Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির মুখে পালানোর কথা শোভা পায় না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

‘আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যারা পালিয়েই আছে, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির দ্বারা যে দল পরিচালিত হয়, সেই দলের মুখে পালানোর কথা শোভা পায় না। আওয়ামী লীগ পালায় না, পালায় না।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শোকের মাস আগস্টের প্রথম দিনে কৃযক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপি বলে, আমরা নাকি পালাবার পথ পাবো না। তাদের বলি, আওয়ামী লীগ কোনোদিন পালায় না। মুচলেকা দিয়ে পালিয়েছিলো তারেক জিয়া। আর তখন আমি বিদেশ থেকে জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসে। বিমানবন্দরে গুলির কথার বলা হয়েছিলো, বলেছিল এমন জায়গা নিয়ে যাবে যাতে খোজ পাওয়া যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ কোনো দিন পালায়নি। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া চেষ্টা করেও শেষ করে দিতে পারেনি আওয়ামী লীগকে। তাদের দোসর জামায়াত, এতকিছু করেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে দেশত্যাগ করেছিল তারেক জিয়া। সেই পলাতক আসামি বলে, আমরা নাকি পালানোর পথ খুঁজে পাবো না। আরে তোরা তো পালিয়ে আছিস! পলাতক আসামির মুখে এত বড় কথা আসে কোথা থেকে?

তিনি বলেন, যে পরিমাণ নির্যাতন আওয়ামী লীগ ও আমার ওপর করেছে, একভাগও প্রতিশোধ নিলে তো তাদের হদিসই পাওয়া যেতো না। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। প্রত্যেককে তার কর্মসূচি করার সুযোগ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাসে প্রথম একটা স্থিতিশীল অবস্থা বাংলাদেশে বিরাজমান। যে কারণে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়শীল বাংলাদেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দিয়েছি, অথচ বিএনপি এটি চায়নি। তারা হাত পাততেই পছন্দ করে। এতেই তাদের লাভ। কিন্তু আমরা ভিক্ষুক জাতি হতে চাই না। আমার মাটি, সোনার মাটি, উর্বর মাটি। বীজ ফেললেই গাছ হয়, সেদেশের মানুষ না খেয়ে থাকবে কেন?

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। আর তার ছেলে তারেক জিয়া খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি মামলার আসামি, যেখানে আমেরিকা পর্যন্ত যার ভিসা দেয়নি। ভিসা বাতিল করে দিয়েছে এবং যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে গেছে সেই আসামি যার দলের নেতা তাদের মুখে বড় বড় কথা- আমরা না কি পালানোর পথ পাব না। আরে তোরা পালায়ই আছিস। এক পলাতক আসামির তত্ত্বাবধানে এত লম্বা কথাটা আসে কোথা থেকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমি ফিরে এসেছি। আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছিল। যে মুহূর্তে নামবো সেই মুহূর্তে গুলি করে মারবে। আমি বলেছি খুব ভালো কথা দেশের মাটিতে তো মরলাম। বিদেশ বিভুঁইয়ে তো মরতে হলো। আমাকে বলেছে এমন জায়গায় নেওয়া হবে কেউ খোঁজ পাবে না। আমি বলেছি বাংলাদেশে এখনো সে রকম জায়গা সৃষ্টি হয়নি যে আমাকে নিয়ে গেলে বাংলাদেশের মানুষ খুঁজে বের করবে না। আমি তারপরও যাব। আমি তো জোর করে ফেরত এসেছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষকরাই আমাদের অন্ন জোগায়। জাতির পিতা কৃষকদের সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষকরা কষ্ট করে ফসল ফলায়। আমাদের তাদের সেই কষ্টের মূল্য দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সেটা করে। সারের দাম কমিয়েছি। বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছি। কৃষিখাতে ভর্তুকি আমরা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবসময় মানুষের পাশে থাকি, তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজটি আমরা করছি।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের মুখে বড় বড় কথা, আমরা নাকি পালানোর পথ পাবো না। তারা আমাদের নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা করেছে, অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। গ্রেনেড হামলা করেছে। আমরা তো প্রতিশোধ নেইনি। এক ভাগ প্রতিশোধ নিলেও তাদের হদিস পাওয়া যেত না। আমরা প্রতিশোধ নেইনি কারণ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, তার বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের প্রতিনিধি এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে, সেই মামলায় তার সাজা হয়েছে। খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। অথচ তাদের (বিএনপি) গঠনতন্ত্রেই আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারবেন না।

সরকারপ্রধান বলেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধী, হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, যুদ্ধাপরাধী ছিল, বঙ্গবন্ধু যাদের বিচার শুরু করেছিলেন, তাদের মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা হয়, বিভিন্ন পদ দেন জিয়াউর রহমান। তারপর খালেদা জিয়াও একই কাজ করেন। খালেদা জিয়া বলেছিলেন- প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও না কি কোনোদিন হতে পারব না। আজকে কী হলো। দেশে ফেরার পর জনগণ আমাকে ক্ষমতায় এনেছে।

বিএনপি মিটিং করার জন্য টাকা কোথায় পাচ্ছে- প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন কোথা থেকে এত টাকা পাচ্ছে। যত চুরি করা টাকা ছিল সেগুলো এখন বেরুচ্ছে না কি। একেক মিটিং করতে যে কতগুলো টাকা খরচ হচ্ছে টাকাগুলো কোথা থেকে আসছে।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর জিয়াউর রহমান আমাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমি যে আমার মা-বাবা, ভাই-বোনের জন্য দোয়া করব, মোনাজাত করব- সে সুযোগটাও দেয়নি। রাস্তার ওপর বসেই আমাকে আমার মা-বাবার জন্য দোয়া পড়তে হয়েছিল। ১৫ আগস্টের সময় আমি এবং আমার ছোটবোন বিদেশে ছিলাম। জিয়াউর রহমান আমাদের আসতে বাধা দিয়েছে। শেখ রেহানার পাসপোর্টটাও রিনিউ করে দেয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমরা অনেক বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসি।

বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণকে গভীরভাবে ভালোবেসেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ৯০ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে ছিল, পেটে খাবার নেই, শিক্ষা বঞ্চিত। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। জাতির পিতা বলতেন- আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর, তিনি কৃষির বিপ্লব ঘটিয়েছেন। যুদ্ধকালে কোনো ফসল উৎপাদন হয়নি, আর যা ছিল তাও হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছিল। রিজার্ভ মানি ছিল না। বঙ্গবন্ধু দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

১৫ আগস্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর বিশ্বাস ছিল। তিনি বলতেন- ওরা আমার ছেলের মতো।.. কারবালার ময়দানে শিশু-নারীকে হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট নারী-শিশুরাও রেহাই পায়নি। কামাল-জামালকে হত্যা করা হলো। ছোট রাসেল, তার কি দোষ ছিল? সেই সঙ্গে আমার চাচা, আমার সেজো ফুফুসহ সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো মানুষ তার আপনজন খুন হলে বিচার চায়, আর আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না। খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। শুধু তাই না, জিয়াউর রহমান তাদের পুরস্কৃত করে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে, সেটাকে আবার ভোট কারচুপির মাধ্যমে সংসদে পাস করা হয়। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় এসে সেই ফারুককে (বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুক) ফ্রিডম পার্টি তৈরি করা ও রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোট চুরি করে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে। যেই নির্বাচনে ২-৩ শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণের ভোট চুরি করে কর্নেল রশিদকে তিনি সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসায় এবং হুদাকে সংসদ সদস্য করেন। খুনিদের উৎসাহিত করে একের পর একে অমানবিক কাজ করে গেছেন। আর বাংলাদেশকে জঙ্গির দেশ বানিয়েছিল।

সরকারপ্রধান বলেন, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাসে সত্য উদঘাটন হবেই। ’৮৮ সালে আমি যখন ফিরে আসি, তখন আমার কাছে কিছু ছিল না, আমার শুধু একটা চিন্তা ছিল- লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজকে বৃথা যেতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ আমার আপন, আমার তো কিছু ছিল না। আসার পর পদে পদে বাধা। আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না, আওয়ামী লীগ যেন জনগণের শত্রু! আজকে আমরা প্রমাণ করেছি- আওয়ামী লীগই পারে দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার বাধা এসেছে যাতে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে না পারে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের প্রভুরা এখনো সে চক্রান্তে লিপ্ত। কিন্তু জনগণই আমাদের মূল শক্তি। বাংলার মানুষই আমার আপনজন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে কেবল ক্ষমতায় আসা নয়, আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে বাংলার মানুষের উন্নতি করতে। আমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকি, মানুষের পাশে থাকাটাই আমাদের দায়িত্ব ও লক্ষ্য।

স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে স্থিতিশীলতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু সরকারের ধারাবাহিকতা আছে, সেহেতু বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছ। সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। তাহলে বিদেশি সহায়তা পাওয়া যায় না। বিএনপির অনেক নেতার বাইরে থেকে বীজ আনার ব্যবসা ছিলো। যখন কৃষককে হত্যা করেছিলো খালেদা জিয়া, আমরা মাঠে নেমেছিলাম।

তিনি বলেন, ৭১ এর ধ্বংসস্তূপ থেকে দাঁড়িয়েই জাতির পিতা এ দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় তাকে বিদায় নিতে হল। তার ইতিহাসটুকুও মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। এটা প্রমাণিত সত্য। আমি যখন এসেছিলাম, কোথায় থাকবো, সেটাও ঠিক ছিল না। শুধু এতটুকু জানতাম আমার যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণ আমার মূল শক্তি। এদের ওপর নির্ভর করেই আমি সেদিন এয়ারপোর্টে নেমেছিলাম। বাংলার মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছিল। আমিও তাদের আপন করে নিয়েছিলাম। আমার প্রত্যয় ছিল- আমার বাবার দিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা নস্যাৎ হতে দেওয়া যাবে না। আজকে সেটা প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগই পারে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে, দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে।

জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। এটাই জাতির পিতার কাছে আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা।

কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

বিএনপির মুখে পালানোর কথা শোভা পায় না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

‘আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যারা পালিয়েই আছে, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির দ্বারা যে দল পরিচালিত হয়, সেই দলের মুখে পালানোর কথা শোভা পায় না। আওয়ামী লীগ পালায় না, পালায় না।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শোকের মাস আগস্টের প্রথম দিনে কৃযক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপি বলে, আমরা নাকি পালাবার পথ পাবো না। তাদের বলি, আওয়ামী লীগ কোনোদিন পালায় না। মুচলেকা দিয়ে পালিয়েছিলো তারেক জিয়া। আর তখন আমি বিদেশ থেকে জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসে। বিমানবন্দরে গুলির কথার বলা হয়েছিলো, বলেছিল এমন জায়গা নিয়ে যাবে যাতে খোজ পাওয়া যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ কোনো দিন পালায়নি। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া চেষ্টা করেও শেষ করে দিতে পারেনি আওয়ামী লীগকে। তাদের দোসর জামায়াত, এতকিছু করেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে দেশত্যাগ করেছিল তারেক জিয়া। সেই পলাতক আসামি বলে, আমরা নাকি পালানোর পথ খুঁজে পাবো না। আরে তোরা তো পালিয়ে আছিস! পলাতক আসামির মুখে এত বড় কথা আসে কোথা থেকে?

তিনি বলেন, যে পরিমাণ নির্যাতন আওয়ামী লীগ ও আমার ওপর করেছে, একভাগও প্রতিশোধ নিলে তো তাদের হদিসই পাওয়া যেতো না। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। প্রত্যেককে তার কর্মসূচি করার সুযোগ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাসে প্রথম একটা স্থিতিশীল অবস্থা বাংলাদেশে বিরাজমান। যে কারণে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়শীল বাংলাদেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দিয়েছি, অথচ বিএনপি এটি চায়নি। তারা হাত পাততেই পছন্দ করে। এতেই তাদের লাভ। কিন্তু আমরা ভিক্ষুক জাতি হতে চাই না। আমার মাটি, সোনার মাটি, উর্বর মাটি। বীজ ফেললেই গাছ হয়, সেদেশের মানুষ না খেয়ে থাকবে কেন?

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। আর তার ছেলে তারেক জিয়া খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি মামলার আসামি, যেখানে আমেরিকা পর্যন্ত যার ভিসা দেয়নি। ভিসা বাতিল করে দিয়েছে এবং যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে গেছে সেই আসামি যার দলের নেতা তাদের মুখে বড় বড় কথা- আমরা না কি পালানোর পথ পাব না। আরে তোরা পালায়ই আছিস। এক পলাতক আসামির তত্ত্বাবধানে এত লম্বা কথাটা আসে কোথা থেকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমি ফিরে এসেছি। আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছিল। যে মুহূর্তে নামবো সেই মুহূর্তে গুলি করে মারবে। আমি বলেছি খুব ভালো কথা দেশের মাটিতে তো মরলাম। বিদেশ বিভুঁইয়ে তো মরতে হলো। আমাকে বলেছে এমন জায়গায় নেওয়া হবে কেউ খোঁজ পাবে না। আমি বলেছি বাংলাদেশে এখনো সে রকম জায়গা সৃষ্টি হয়নি যে আমাকে নিয়ে গেলে বাংলাদেশের মানুষ খুঁজে বের করবে না। আমি তারপরও যাব। আমি তো জোর করে ফেরত এসেছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষকরাই আমাদের অন্ন জোগায়। জাতির পিতা কৃষকদের সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষকরা কষ্ট করে ফসল ফলায়। আমাদের তাদের সেই কষ্টের মূল্য দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সেটা করে। সারের দাম কমিয়েছি। বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছি। কৃষিখাতে ভর্তুকি আমরা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবসময় মানুষের পাশে থাকি, তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজটি আমরা করছি।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের মুখে বড় বড় কথা, আমরা নাকি পালানোর পথ পাবো না। তারা আমাদের নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা করেছে, অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। গ্রেনেড হামলা করেছে। আমরা তো প্রতিশোধ নেইনি। এক ভাগ প্রতিশোধ নিলেও তাদের হদিস পাওয়া যেত না। আমরা প্রতিশোধ নেইনি কারণ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, তার বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের প্রতিনিধি এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে, সেই মামলায় তার সাজা হয়েছে। খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। অথচ তাদের (বিএনপি) গঠনতন্ত্রেই আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারবেন না।

সরকারপ্রধান বলেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধী, হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, যুদ্ধাপরাধী ছিল, বঙ্গবন্ধু যাদের বিচার শুরু করেছিলেন, তাদের মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা হয়, বিভিন্ন পদ দেন জিয়াউর রহমান। তারপর খালেদা জিয়াও একই কাজ করেন। খালেদা জিয়া বলেছিলেন- প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও না কি কোনোদিন হতে পারব না। আজকে কী হলো। দেশে ফেরার পর জনগণ আমাকে ক্ষমতায় এনেছে।

বিএনপি মিটিং করার জন্য টাকা কোথায় পাচ্ছে- প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন কোথা থেকে এত টাকা পাচ্ছে। যত চুরি করা টাকা ছিল সেগুলো এখন বেরুচ্ছে না কি। একেক মিটিং করতে যে কতগুলো টাকা খরচ হচ্ছে টাকাগুলো কোথা থেকে আসছে।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর জিয়াউর রহমান আমাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমি যে আমার মা-বাবা, ভাই-বোনের জন্য দোয়া করব, মোনাজাত করব- সে সুযোগটাও দেয়নি। রাস্তার ওপর বসেই আমাকে আমার মা-বাবার জন্য দোয়া পড়তে হয়েছিল। ১৫ আগস্টের সময় আমি এবং আমার ছোটবোন বিদেশে ছিলাম। জিয়াউর রহমান আমাদের আসতে বাধা দিয়েছে। শেখ রেহানার পাসপোর্টটাও রিনিউ করে দেয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমরা অনেক বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসি।

বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণকে গভীরভাবে ভালোবেসেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ৯০ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে ছিল, পেটে খাবার নেই, শিক্ষা বঞ্চিত। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। জাতির পিতা বলতেন- আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর, তিনি কৃষির বিপ্লব ঘটিয়েছেন। যুদ্ধকালে কোনো ফসল উৎপাদন হয়নি, আর যা ছিল তাও হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছিল। রিজার্ভ মানি ছিল না। বঙ্গবন্ধু দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

১৫ আগস্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর বিশ্বাস ছিল। তিনি বলতেন- ওরা আমার ছেলের মতো।.. কারবালার ময়দানে শিশু-নারীকে হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট নারী-শিশুরাও রেহাই পায়নি। কামাল-জামালকে হত্যা করা হলো। ছোট রাসেল, তার কি দোষ ছিল? সেই সঙ্গে আমার চাচা, আমার সেজো ফুফুসহ সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো মানুষ তার আপনজন খুন হলে বিচার চায়, আর আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না। খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। শুধু তাই না, জিয়াউর রহমান তাদের পুরস্কৃত করে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে, সেটাকে আবার ভোট কারচুপির মাধ্যমে সংসদে পাস করা হয়। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় এসে সেই ফারুককে (বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুক) ফ্রিডম পার্টি তৈরি করা ও রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোট চুরি করে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে। যেই নির্বাচনে ২-৩ শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণের ভোট চুরি করে কর্নেল রশিদকে তিনি সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসায় এবং হুদাকে সংসদ সদস্য করেন। খুনিদের উৎসাহিত করে একের পর একে অমানবিক কাজ করে গেছেন। আর বাংলাদেশকে জঙ্গির দেশ বানিয়েছিল।

সরকারপ্রধান বলেন, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাসে সত্য উদঘাটন হবেই। ’৮৮ সালে আমি যখন ফিরে আসি, তখন আমার কাছে কিছু ছিল না, আমার শুধু একটা চিন্তা ছিল- লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজকে বৃথা যেতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ আমার আপন, আমার তো কিছু ছিল না। আসার পর পদে পদে বাধা। আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না, আওয়ামী লীগ যেন জনগণের শত্রু! আজকে আমরা প্রমাণ করেছি- আওয়ামী লীগই পারে দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার বাধা এসেছে যাতে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে না পারে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের প্রভুরা এখনো সে চক্রান্তে লিপ্ত। কিন্তু জনগণই আমাদের মূল শক্তি। বাংলার মানুষই আমার আপনজন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে কেবল ক্ষমতায় আসা নয়, আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে বাংলার মানুষের উন্নতি করতে। আমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকি, মানুষের পাশে থাকাটাই আমাদের দায়িত্ব ও লক্ষ্য।

স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে স্থিতিশীলতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু সরকারের ধারাবাহিকতা আছে, সেহেতু বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছ। সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। তাহলে বিদেশি সহায়তা পাওয়া যায় না। বিএনপির অনেক নেতার বাইরে থেকে বীজ আনার ব্যবসা ছিলো। যখন কৃষককে হত্যা করেছিলো খালেদা জিয়া, আমরা মাঠে নেমেছিলাম।

তিনি বলেন, ৭১ এর ধ্বংসস্তূপ থেকে দাঁড়িয়েই জাতির পিতা এ দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় তাকে বিদায় নিতে হল। তার ইতিহাসটুকুও মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। এটা প্রমাণিত সত্য। আমি যখন এসেছিলাম, কোথায় থাকবো, সেটাও ঠিক ছিল না। শুধু এতটুকু জানতাম আমার যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণ আমার মূল শক্তি। এদের ওপর নির্ভর করেই আমি সেদিন এয়ারপোর্টে নেমেছিলাম। বাংলার মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছিল। আমিও তাদের আপন করে নিয়েছিলাম। আমার প্রত্যয় ছিল- আমার বাবার দিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা নস্যাৎ হতে দেওয়া যাবে না। আজকে সেটা প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগই পারে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে, দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে।

জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। এটাই জাতির পিতার কাছে আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা।

কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।