গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপি কিভাবে নির্বাচন করবে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির নেতা কে, তাদের কোনো নেতা নেই। বিএনপি চিন্তা করেছিল নির্বাচন হবে না। এখন নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। এক সময় বলেছিল নির্বাচন হতে দেবে না। উস্কানি আছে যে, নির্বাচন ঠেকাও। নির্বাচনের সিডিউল হয়ে গেছে, এখন তারা মনে করছে নির্বাচন হয়েই যাবে। তাই তারা মার্চ মাসের দিকে দেশের এমন অবস্থা করবে, দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা। এটা শুধু দেশের নয়, বাইরের দেশেরও পরিকল্পনা আছে। যেভাবেই হোক দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পুলিশকে যেভাবে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে মারল। মারতে মারতে যখন বেহুঁশ হয়ে গেছে তখন তাঁর মাথা থেকে হেলমেট ফেলে দিয়ে কোপালো। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পোড়ানো হলো। সেখানে পুলিশদেরও আহত করা হলো। এমনকি সাধারণ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করা হলো। এই হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র। তাদের ওপর জনগণের আস্থা বিশ্বাস থাকবে কীভাবে? এদের আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও। এদের শিক্ষাটা বোধহয় ইসরায়েলের কাছ থেকে নেওয়া। ইসরায়েলেরা হাসপাতালে বোম্বিং করে নারী শিশু রোগীদের আহত করেছে। সেখানেও কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের ওপর আক্রমণ হয়েছে। ছোট ছোট শিশুসহ যেভাবে মানুষ হত্যা করছে। বিএনপি-জামায়াত বোধয় ইসরায়েলের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করছে। এখন তারা আউটসোর্সিং আন্দোলন শুরু করেছে। কিছু মাদকাসক্ত ও সমাজের অবাধ্য লোকজন দিয়ে তাদের হাতে টাকা দিয়ে আগুন সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আবার এক যুবদল নেতা সরাসরি বাসে আগুন দিতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। অনেক স্থানে জনগণও এসব সন্ত্রাসীদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। তারপরও এদের লজ্জা হয় না। গতকাল ও পরশু চাল বোঝাই গাড়ীতে আগুন দিয়েছে। দেশের মানুষ যে খাবার খাচ্ছে তা ওদের পছন্দ হচ্ছে না। ঠিক পাকিস্তানিরা এভাবে ঘোলা ভরা ধান পুড়িয়ে দিয়েছিল। টুঙ্গিপাড়ায় আমাদের বাড়িও আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিল। জামায়াত-বিএনপির রাজনৈতিক শিক্ষা ওই সমস্ত জায়গা থেকে হয়েছে। এরা মানুষের জন্য কিছু করতে চায় না।
‘২০০৭ সালে খালেদা জিয়ার ছেলে মুচলেকা দিয়ে চলে গেল লন্ডন। তখন বলল, আর জীবনে রাজনীতি করব না। এখন ওখানে বসে হুকুম দিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করাচ্ছে। জিয়াউর রহমান যেমন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেনা বাহিনীর অফিসার, সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে, ঠিক একইভাবে জিয়ার বউ ক্ষমতায় এসে আমাদের আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের হত্যা করে। আর তার ছেলেও এখন একই কাজ করছে। জিয়া পরিবার পুরোটাই একটি খুনি পরিবার। তারা মানুষ খুন আর দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই চায় না। নিজেরা ক্ষমতায় থেকে সমানে অর্থ বানিয়েছে, সম্পদের পাহাড় গড়েছে। এরা মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। এটাই তাদের চরিত্র,’ যোগ করেন তিনি।
নিজের শাসনামলের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা দেশের অনেক উন্নয়ন করেছিলাম। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেশটি যেখানে রেখে গিয়েছিলাম সেখান থেকে আবার পিছিয়ে পড়েছিল। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা কমে গিয়েছিল, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গিয়েছিল। একে একে সবকিছু আবার পেছন দিকে চলে গিয়েছিল। আমাদের ছিল ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আর সে আন্দোলনে আমরা সফল হয়েছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতা শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তখন একটি টাকাও রিজার্ভ মানি ছিল না। কোনো খাবার ছিল না। তখন কোনো ফসল হয়নি। রাস্তা ঘাট কিছুই ছিল না। যা ছিল তাও ধ্বংসস্তূপ। ওই অবস্থায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন দেশে ফিরে আসলেন তখন তিনি এই ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে দায়িত্বভার নিয়েছিলেন। ওই সময় একজন বিদেশি সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, দেশেতো কিছুই নাই, কোনো রিসোর্স নেই, আপনি কীভাবে এ দেশ গড়ে তুলবেন? তখন জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘‘আমার মাটি আছে, দেশের মানুষ আছে। আমি মাটি ও মানুষ দিয়ে এ দেশ গড়ে তুলব’’।
দেশে ফিরে আসার কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৮১ সালে আমি যেদিন বাংলাদেশে ফিরে আসি সেই দিন ঘোষণা দিয়েছিলাম বাংলাদেশের মানুষ আমার আপণজন, তারাই আমার আত্মীয়। আমি সেই দিন বাংলাদেশের সকল মানুষ ও মুজিব আদর্শের সৈনিকদের ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছিলাম। এরাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। বাংলাদেশে আসার পর আমার চলার পথ মসৃণ ছিল না। যে ঘাতকেরা আমার বাবা-মা’কে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের বিচার হবে না। ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, বিচার হতে রেহাই দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে যারা গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ করে বাংলাদেশের সম্পদ পুড়িয়েছে, লুটপাট করেছে, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে। সেই সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করেছিলেন। সেই বিচার পরবর্তীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময় যারা জেলখানায় ছিল তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তারাই তখন কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ মন্ত্রী, কেউ উপদেষ্টা আবার কেউ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বসা ছিল। সেই অবস্থায় আমি বাংলাদেশে ফিরে আসলাম। তখন আমাকে অনেকেই দেশে ফিরতে নিষেধ করেছিলেন। অনেকেই বলেছিল, আপনি যাচ্ছেন আপনার কি হবে! তখন আমি আমার মনের তাগিদে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আর সেই দিন আমার ছোট বোন রেহানা বলেছিল আমি বাচ্চাদের দেখব। তুমি দেশে ফিরে যাও।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নির্বাচনকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছি। আমরা আইন পাশ করে এবারই প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। এটাকে স্থায়ী রূপ দেওয়াটাই আমাদের উদ্দেশ্য।
নিজের শাসনামলের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা দেশের অনেক উন্নয়ন করেছিলাম। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেশটি যেখানে রেখে গিয়েছিলাম সেখান থেকে আবার পিছিয়ে পড়েছিল। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা কমে গিয়েছিল, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গিয়েছিল। একে একে সবকিছু আবার পেছন দিকে চলে গিয়েছিল। আমাদের ছিল ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আর সে আন্দোলনে আমরা সফল হয়েছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কে যে ভোটারদের অধিকার কাড়বে। ভোটারদের অধিকার কাড়ার ক্ষমতা তাদের নেই। নির্বাচনে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যারা আগুন দিতে যাবে, তাদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকায় সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যদি আগুনসন্ত্রাসী বেশি হয়, তাহলে তাদের আগুনেই ফেলে দিতে হবে।
কোটালীপাড়াবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার মূল শক্তি ও সাহস হচ্ছে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়াবাসী। আর বাংলাদেশের জনগণ তো আছেই। এজন্য আমি সর্বক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। আপনাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আপনারা আমার নির্বচনী এলাকার দায়িত্ব নিয়েছেন বলেই আমি সারাদেশের কথা ভাবতে পারছি। আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আপনারা আমাকে প্রার্থী করেছেন। আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। এর আগে ভোট চাওয়া যায় না। নির্বাচনী একটি শৃঙ্খলা আছে। আমাদের সেই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাবা-মা, ভাইবোন সবাইকে হারিয়েছি। আপনাদের ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস সবচেয়ে বড় পাওয়া। যাদের নমিনেশন দিয়েছি তারা আসন পায় একটি। আমার হলো ৩০০ আসনের দায়িত্ব। তাই আমি বলতে পারি আমার মতো সৌভাগ্য কারও নেই। আমার মতো এলাকা নিয়ে ভাবতে হয় না, চিন্তাও করতে হয় না তাদের। আমি জানি না আর কোনো প্রার্থী সৌভাগ্যবান কি না, যতটা আমি। একটা দায়মুক্ত করে রেখেছেন। আমি স্বাধীনভাবে সারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য চিন্তা করতে পারি, কাজ করতে পারি যার সুফলটা সবাই পায়।
নিজের জীবনের ওপর হামলার কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার আমি মৃত্যুকে সামনে দেখেছি। এই কোটালীপাড়াই বিশাল বিশাল বোম মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়েছিল। একজন সামন্য চায়ের দোকানদার খুঁজে বের করল সেই বোমা। একটি ছিল ৭৬ কেজি আরেকটি ছিল ৮৬ কেজি। এই দুটি বোমা মাটির নিচে পোঁতা ছিল। সেখান থেকে আমি উদ্ধার পেলাম। আর তাছাড়া যেদিন থেকে এই বাংলাদেশে এসেছি সেদিন থেকেই সভা, সমাবেশে আক্রমণ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, সরাসরি গুলি প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এই অবস্থায় আল্লাহ আমাকে বারবার বাঁচিয়ে এনেছে। এর মধ্য দিয়ে ৯৬ সালে সরকার গঠন করি।
তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে আমরা এ পর্যন্ত একটানা সরকারে আছি। অন্তত আজ এইটুকু বলতে পারি বাংলাদেশটা বদলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হয়েছে এখন আর খাদ্যের হাহাকারটা নেই। খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছি। শিক্ষার সুযোগ আমরা সৃষ্টি করেছি। ঠিক যা জাতির পিতা চেয়েছিলেন। একটানা সরকারে থাকতে না পারলে আমাদের উন্নয়ন দৃশ্যমান হতো না।
এ সভায় আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা ধরণের দিক-নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লা খন্দকার। এ সময় শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও শেখ সারহান নাসেন তন্ময় এবং কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।