নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে বিষয়টি জাতির জন্য সৌভাগ্যের হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। বিএনপি নির্বাচনে এলে সেটি জাতির জন্য সৌভাগ্যের হবে।
রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংকালে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে নির্বাচনটা তৃপ্তিদায়ক হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা বিএনপিকে আহ্বান করেছি। একবার নয়, দুবার নয়, বার বার-১০ বার বলেছি। আমি আগেও বলেছিলাম সময় ফুরিয়ে যায়নি। এখনো বলা হচ্ছে সময় ফুরিয়ে যায়নি। এখনো সুযোগ আছে। আমরা সব সময় সংলাপ, সমঝোতার কথা বলেছি। সমঝোতা হলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আশা করি, তারা যদি আসে পুরো জাতির জন্য সৌভাগ্য হবে। আমরা চাই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক।
তিনি বলেন, আমরা বারবার উৎসবমুখর ও অনুকূল পরিবেশের কথা বলেছি। সবার মধ্যে যদি সমঝোতা হয় তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ আমাদের জন্য আরও অনুকূল হয়ে উঠে। আমরা আমাদের দিক থেকে কোনো পরিবর্তন করিনি। আমরা এখনো আশা করি, হয়তোবা ওরা (বিএনপি) আসতেও পারে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, যদি বিএনপি আসে তবে তা হবে আমাদের জন্য, সবার জন্য পুরো জাতির জন্য হবে অত্যন্ত সৌভাগ্যের। আমরা চাই নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হোক, সবাই অংশগ্রহণ করুক। তাহলে নির্বাচন আরও অর্থবহ হবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনাররা।
নির্বাচন পেছানো নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কমিশনাররা বলেছেন বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তবে তফসিল রিসিডিউল করা যেতে পারে, এটাকে নির্বাচন পেছানো বলা যায় না। তফসিল রিসিডিউল করে তাদের (বিএনপি) অ্যাকোমোডেট করা হবে।
তফসিল পেছানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনাররা তফসিল পুনর্র্নিধারণের কথা বলেছেন। এর অর্থ এই নয় যে ভোটের তারিখ পেছানো হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা এখতিয়ারের বাইরে যাবো না। প্রশাসনের রদবদল কে কখন করেছিল? বিচারপতি লতিফুর রহমান সাহেব করেছেন। তিনি সিইসি ছিলেন কি-না জানি না। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন। আমরা নির্বাচনের স্বার্থে যেটা ভালো মনে করবো সেটা করবো। আমরা এখতিয়ারের বাইরের যাবো না। এখতিয়ারের মধ্যে যা আছে করবো।
সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সেনাবাহিনী (সশস্ত্র বাহিনী) নিয়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। যদি প্রয়োজন মনে করি, চাইলে তারা (সরকার) আমাদের দেবে। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ আইন সচিব বলেন, নির্বাচন পূর্ব সময় হচ্ছে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত। এতে কতগুলো ধাপ আছে। যখনই তফসিল ঘোষণা করে থাকি একটা ধাপ হচ্ছে মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত। এরপর বাছাই। এরপরও কিছু স্টেজ থাকে। এরপর আপিল স্টেজ থাকে। শুনানি করে সিদ্ধান্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেবো। এরপর থাকে প্রত্যাহার। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে রিটার্নিং অফিসার চূড়ান্তভাবে বরাদ্দ করবেন। তারপর বলবেন এখন আপনারা প্রচার করতে পারবেন। এরপর ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে সেটা থেমে যাবে।
সিইসি বলেন, বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী একটি বৈঠক করেছেন। আইনে প্রার্থীর কথা বলা আছে। এক্ষেত্রে এখন কেউ প্রচার চালাতে পারে। কেননা, এখনো কেউ প্রার্থী হয়নি। এছাড়া কোন আইনে বলা আছে যে, দলের মনোনয়নপত্র বিক্রির সময় শোডাউন করা যাবে না।
নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে তিনি বলেন, ১৮ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। এর আগে প্রচারণায় কোনো বাধা নেই। এখন যদি কেউ প্রচারণা চালায়, সেটা আচরণবিধির মধ্যে পড়ে না। চূড়ান্তভাবে প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর আচরণবিধি কেউ ভঙ্গ করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচনকালে প্রশাসনের রদবদলের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো কমিশন প্রশাসনে রদবদল করেনি। বিভিন্ন সময় নির্বাচনের আগে সে সময়ের সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশাসনে পরিবর্তন এনেছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।