Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির জনসভা মঞ্চে পলকের শ্যালিকা, সমালোচনার ঝড়

নাটোর জেলা প্রতিনিধি : 

নাটোরের সিংড়ায় বিএনপির জনসভা মঞ্চে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টিকে দেখা গেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় চলছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি।

পরে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি। তিনি বলেছেন, শুক্রবার(৬ ডিসেম্বর) বিকেলে জনসভার জন্য কোনো যানবাহন না পাওয়ায় পরিচিতজনদের ডাকে তিনি কিছুটা সময় বিএনপির মঞ্চে অবস্থান করেন।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সিংড়া উপজেলায় কোর্ট মাঠে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর এ জনসভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি পলকের চাচা শ্বশুর এবং ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি তার ভাতিজি। তাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছনের সারিতে বসে থাকতে দেখা গেছে। এ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানায়, উপজেলা ও পৌর বিএনপির যৌথ আয়োজনে শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে কোর্ট মাঠে জনসভা শুরু হলে প্রধান অতিথি হিসবে আসন গ্রহণ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস। তার সঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ এমদাদুল হক আল মামুন মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। রহিম নেওয়াজ ও শেখ এমদাদুল হক আল মামুনের ঠিক পেছনেই বসেন পলকের শ্যালিকা ফারজানা রহমান। এ সময় অনেকেই তার ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। সেসব ছবি ও ভিডিও শুক্রবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন স্থানীয় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা। পরে এ নিয়ে নানা আলোচনা–সমালোচনা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনুষ্ঠানে থাকা কয়েকজন বিএনপির নেতা বলেন, ফারজানা রহমান দৃষ্টি আওয়ামী লীগের শাসনামলে পলকের দাপটে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ভাড়া নিয়ে ক্লিনিক পরিচালনা করেছেন। এ ছাড়া তিনি পলকের নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে নৌকার ভোট করেছেন। ‘জয় বাংলা’ অ্যাওয়ার্ডও নিয়েছেন পলকের প্রভাবে।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির এক কর্মী তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘সিংড়া বিএনপির জনসভার মঞ্চে জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা, তাহলে এরাই কি আগামী দিনের বিএনপি?’

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, ‘সাধারণ কর্মীরা গত ১৫ বছর নির্যাতিত হলেও এই সুবিধাবাদী লোকজন সবসময় সুবিধায় থাকে। ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের চাচা শ্বশুর হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। তাই এখন আওয়ামী লীগের সুবিধাপ্রাপ্ত ফারজানাকে বিএনপির বানানোর চেষ্টা করছেন আনোয়ারুল ইসলাম আনু।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পলকের শ্যালিকা বলেন, ‘আমি একজন চিকিৎসক। চিকিৎসার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছি।’ এ সময় সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য ‘জয় বাংলা’ অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন বলে দাবি তার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিএনপির নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে ফারজানা রহমান দৃষ্টি জানান, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। শুক্রবার বিএনপির জনসভার জন্য বিকেলে তিনি কোনো যানবাহন না পাওয়ায় সিংড়া বাসস্ট্যান্ডের ক্লিনিক থেকে হেঁটে হাসপাতালের পাশে তার চেম্বারে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার পরিচিত কয়েকজন তাকে মঞ্চে ডাকলে কিছু সময় সেখানে ছিলেন।

তবে ডা. ফারজানাকে কে মঞ্চে তুলেছেন সেটা জানা নেই বলে জানিয়েছেন সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু। তিনি বলেছেন, ‘তাকে (দৃষ্টি) কে মঞ্চে তুলেছে, সেটা আমি জানি না।’

জনসভার প্রধান অতিথি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘আমি পলকের শ্যালিকা ফারজানা রহমানসহ সিংড়ার অনেককে চিনি না। তাই তার মঞ্চে আসন গ্রহণের বিষয়টি খেয়াল করতে পারিনি। তবে সভা চলাকালে ঘটনাটি জানার পর তার মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

এ বিষয়ে বিএনপির (রাজশাহী) সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন, বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছেন। দলের কেউ তাকে জানাননি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ফারজানা রহমান দৃষ্টি বিগত দিনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় পলকের স্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে ইয়ং বাংলার অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের অ্যাওয়ার্ড ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাকে জয়িতা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বক্তব্য দিতে গিয়ে মঞ্চে পড়ে গেলেন জামায়াত আমির

বিএনপির জনসভা মঞ্চে পলকের শ্যালিকা, সমালোচনার ঝড়

প্রকাশের সময় : ০১:৩৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নাটোর জেলা প্রতিনিধি : 

নাটোরের সিংড়ায় বিএনপির জনসভা মঞ্চে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টিকে দেখা গেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় চলছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি।

পরে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি। তিনি বলেছেন, শুক্রবার(৬ ডিসেম্বর) বিকেলে জনসভার জন্য কোনো যানবাহন না পাওয়ায় পরিচিতজনদের ডাকে তিনি কিছুটা সময় বিএনপির মঞ্চে অবস্থান করেন।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সিংড়া উপজেলায় কোর্ট মাঠে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর এ জনসভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি পলকের চাচা শ্বশুর এবং ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি তার ভাতিজি। তাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছনের সারিতে বসে থাকতে দেখা গেছে। এ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানায়, উপজেলা ও পৌর বিএনপির যৌথ আয়োজনে শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে কোর্ট মাঠে জনসভা শুরু হলে প্রধান অতিথি হিসবে আসন গ্রহণ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস। তার সঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ এমদাদুল হক আল মামুন মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। রহিম নেওয়াজ ও শেখ এমদাদুল হক আল মামুনের ঠিক পেছনেই বসেন পলকের শ্যালিকা ফারজানা রহমান। এ সময় অনেকেই তার ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। সেসব ছবি ও ভিডিও শুক্রবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন স্থানীয় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা। পরে এ নিয়ে নানা আলোচনা–সমালোচনা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনুষ্ঠানে থাকা কয়েকজন বিএনপির নেতা বলেন, ফারজানা রহমান দৃষ্টি আওয়ামী লীগের শাসনামলে পলকের দাপটে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ভাড়া নিয়ে ক্লিনিক পরিচালনা করেছেন। এ ছাড়া তিনি পলকের নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে নৌকার ভোট করেছেন। ‘জয় বাংলা’ অ্যাওয়ার্ডও নিয়েছেন পলকের প্রভাবে।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির এক কর্মী তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘সিংড়া বিএনপির জনসভার মঞ্চে জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা, তাহলে এরাই কি আগামী দিনের বিএনপি?’

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, ‘সাধারণ কর্মীরা গত ১৫ বছর নির্যাতিত হলেও এই সুবিধাবাদী লোকজন সবসময় সুবিধায় থাকে। ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের চাচা শ্বশুর হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। তাই এখন আওয়ামী লীগের সুবিধাপ্রাপ্ত ফারজানাকে বিএনপির বানানোর চেষ্টা করছেন আনোয়ারুল ইসলাম আনু।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পলকের শ্যালিকা বলেন, ‘আমি একজন চিকিৎসক। চিকিৎসার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছি।’ এ সময় সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য ‘জয় বাংলা’ অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন বলে দাবি তার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিএনপির নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে ফারজানা রহমান দৃষ্টি জানান, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। শুক্রবার বিএনপির জনসভার জন্য বিকেলে তিনি কোনো যানবাহন না পাওয়ায় সিংড়া বাসস্ট্যান্ডের ক্লিনিক থেকে হেঁটে হাসপাতালের পাশে তার চেম্বারে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার পরিচিত কয়েকজন তাকে মঞ্চে ডাকলে কিছু সময় সেখানে ছিলেন।

তবে ডা. ফারজানাকে কে মঞ্চে তুলেছেন সেটা জানা নেই বলে জানিয়েছেন সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু। তিনি বলেছেন, ‘তাকে (দৃষ্টি) কে মঞ্চে তুলেছে, সেটা আমি জানি না।’

জনসভার প্রধান অতিথি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘আমি পলকের শ্যালিকা ফারজানা রহমানসহ সিংড়ার অনেককে চিনি না। তাই তার মঞ্চে আসন গ্রহণের বিষয়টি খেয়াল করতে পারিনি। তবে সভা চলাকালে ঘটনাটি জানার পর তার মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

এ বিষয়ে বিএনপির (রাজশাহী) সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন, বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছেন। দলের কেউ তাকে জানাননি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ফারজানা রহমান দৃষ্টি বিগত দিনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় পলকের স্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে ইয়ং বাংলার অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের অ্যাওয়ার্ড ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাকে জয়িতা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।