স্পোর্টস ডেস্ক :
ঐতিহ্যে ভরপুর বার্সেলোনার ১০ নম্বর জার্সি। ম্যারাডোনা, রিস্টো স্টয়চকভ, রোমারিও, রিভালদো, রোনালদিনহো থেকে শুরু করে লিওনেল মেসির মতো কিংবদন্তিরা এই জার্সি পরে মাঠ মাতিয়েছেন। মেসি ক্লাব ছাড়ার পর আইকনিক এই জার্সিটি পান আনসু ফাতি।
ফাতি বার্সেলোনা থেকে ধারে মোনাকোয় যোগ দেন। এরপর থেকে ভক্তরা অপেক্ষায় ছিলেন কবে ১০ নম্বর জার্সিটি পাবেন লামিনে ইয়ামাল। অবশেষে শেষ হয়েছে অপেক্ষার পালা। ইয়ামালের হাতে বার্সার আইকনিক ১০ নম্বর জার্সি তুলে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি আরও একটি আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে বার্সা। গত মে মাসে যে চুক্তি তারা করেছিল ইয়ামালের সঙ্গে, সেটিও অফিশিয়াল করা হয়েছে। ২০৩১ সাল পর্যন্ত বার্সায় থাকার চুক্তিটি গত মে মাসেই সম্পন্ন করেন ইয়ামাল। তখন এই চুক্তির ছবি প্রকাশ করা হয়নি। কারণ, নিজের দাদি ফাতিমাকে তিনি চুক্তির দিন সঙ্গে রাখতে পারেননি।
বুধবার (১৬ জুলাই) দাদি, বাবা, ভাই ও বন্ধুদের নিয়ে চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন ইয়ামাল। বার্সা এর মধ্যে একটি কাজও করেছে। ইয়ামাল স্পেনের যে অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন, সেই রোসাফন্দায় একটি ম্যুরাল বানিয়েছে ক্লাবটি। সেটি আবার ইয়ামাল ছোট বেলায় যে মাঠে খেলতেন তার পাশেই দেয়ালচিত্রে লেখা, ‘রোসাফন্দা থেকে বিশ্বের মঞ্চে।’
ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল বার্সার হয়ে অভিষিক্ত হব এবং ১০ নম্বর জার্সিটা পরে খেলব। বার্সেলোনায় জন্ম নেওয়া প্রত্যেক শিশুই এই স্বপ্ন দেখে। মেসি তাঁর মতো করে এটা গড়েছেন, আমি আমার মতো করে গড়ব।
১০ নম্বর জার্সি আনুষ্ঠানিকভাবে হাতে তুলে নেওয়া এবং চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে ক্যাম্প ন্যুতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২৫ মিনিট দেরিতে পৌঁছান ইয়ামাল। স্যুট পরা ইয়ামালের সঙ্গে এ সময় ছিলেন তাঁর দাদি। ততক্ষণে তাঁর ভক্তরা অবশ্য টের পেয়ে যান, কী ঘটতে যাচ্ছে। ইয়ামালের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখে যা বোঝার বুঝে নেন তাঁর ভক্তরা। ভিডিওতে দেখা যায় নিজের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বসে কথা বলছেন ইয়ামাল। তাঁর ভাই নিচে বসে টেবিলের ওপর কাগজে কিছু একটা আঁকছে, ইয়ামাল সোফায় বসে। টেবিলের ওপর রাখা কাগজে বার্সার তিনটি ১০ নম্বর জার্সির ছবি আঁকা।
ইয়ামাল এ সময় তাঁর ভাইকে বলেন, ‘এই জার্সি পরে শুধু ভালো খেললে হবে না।’ টেবিল থেকে বার্সার জার্সির ছবি আঁকা একটি কাগজের টুকরা তুলে নিয়ে ইয়ামাল বলেন, ‘কেউ কেউ ইতিহাস গড়েছেন (১০ নম্বর জার্সি পরে)।’ এরপর আরেকটি কাগজের টুকরা তুলে নিয়ে ইয়ামাল বলেন, ‘অন্যরা আনন্দ পেয়েছেন।’
যে দুটি কাগজের টুকরা ইয়ামাল এ সময় তুলেছেন, স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও রোনালদিনিওকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলেছেন এই স্প্যানিশ উইঙ্গার। ইয়ামাল এরপর আরও একটি কাগজের টুকরা তুলে বলেন, ‘আর সে? সে আমার দেখা সর্বকালের সেরা।’ স্বাভাবিকভাবেই এই কথাটা তিনি বলেছেন বার্সার ১০ নম্বর জার্সি পরে ক্লাব ফুটবলে প্রায় সব শিরোপাই জেতা লিওনেল মেসিকে ইঙ্গিত করে। এরপর ইয়ামালকে তাঁর ভাই আরেকটি কাগজের টুকরা দেন, যেখানে বার্সার আরেকটি ১০ নম্বর জার্সির ছবি আঁকা এবং খেলোয়াড়ের নাম ‘লামিনে ইয়ামাল।’
ইয়ামাল কাগজটি হাতে নিয়ে হেসে ফেলেন। ভাইকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমি আমার সর্বস্ব নিংড়ে দেব, কথা দিচ্ছি। আমি নিজেই আমার ইতিহাস গড়ব।’
বার্সার ১০ নম্বর জার্সি ঐতিহ্যে ভরপুর। ম্যারাডোনা, রিস্টো স্টয়চকভ, রোমারিও, রিভালদো, রোনালদিনিও, মেসির মতো কিংবদন্তিরা এই জার্সি পরে মাঠ মাতিয়েছেন। ২০০৮ সালে বার্সার ১০ নম্বর জার্সি পান মেসি। ২০২১ সালে বার্সা ছাড়ার আগপর্যন্ত জার্সিটির ইতিহাস তিনি-ই সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ করেছেন। বার্সার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পাশাপাশি লা লিগা জিতেছেন ১০ বার এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ ৪ বার।
মেসি বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর জার্সিটি পান ফাতি। কিন্তু ক্রমাগত চোটের কারণে বার্সার একাদশে নিয়মিত হতে পারেননি। এবার সেই ১০ নম্বর জার্সির মালিক হয়ে সংবাদমাধ্যমকে ইয়ামাল বলেন, ‘ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল বার্সার হয়ে অভিষিক্ত হব এবং ১০ নম্বর জার্সিটা পরে খেলব। বার্সেলোনায় জন্ম নেওয়া প্রত্যেক শিশুই এই স্বপ্ন দেখে। মেসি তাঁর মতো করে এটা গড়েছেন, আমি আমার মতো করে গড়ব। আর ১০ নম্বর জার্সিটি আমি আনসু ফাতির কাছ থেকে পেয়েছি। নিজের পথটা আমি নিজেই গড়ার চেষ্টা করব।’
কয়েক দিন আগে ১৮ বছর পূর্ণ করা ইয়ামাল বার্সার হয়ে এরই মধ্যে ১০৬ ম্যাচে ২৫ গোল করেছেন। লা লিগা জয়ের পাশাপাশি স্পেনের হয়ে জিতেছেন ইউরোও। ১৮ ছোঁয়ার আগে মেসিও ইয়ামালের মতো এতটা সাফল্য পাননি। ১৮ ছোঁয়ার আগে পেশাদার ফুটবলে মেসি মাত্র ৯ গোল করেছিলেন। সে যা–ই হোক, বার্সায় এটা হবে ইয়ামালের চতুর্থ জার্সি নম্বর। ২০২২-২৩ মৌসুমে অভিষেকের সময় তাঁর জার্সি নম্বর ছিল ৪১, পরের মৌসুমে পান ২৭ নম্বর জার্সি এবং গত বছর পরেছেন ১৯ নম্বর জার্সি। ১০ নম্বর জার্সি পাওয়ার আগে মেসির জার্সি নম্বরও ছিল ১৯!
নতুন জার্সি পেয়ে নিজের লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছেন ইয়ামাল, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ ও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি। এগুলো আমার লক্ষ্য।’
ক্যাম্প ন্যুতে ইয়ামাল ১০ নম্বর জার্সি পাওয়ার পর তুলনাও উঠেছে। সাংবাদিকেরা এই জার্সি পরা কিংবদন্তিদের প্রসঙ্গ তুললে ইয়ামাল বলেন, ‘মেসির সবকিছুই নেওয়ার চেষ্টা করব। তিনি এখনো খেলছেন। রোনালদিনিও ও ম্যারাডোনার কাছ থেকেও নেব এবং আশা করি, তাঁদের লিগ্যাসি ধরে রাখতে পারব।’
ইয়ামাল এমন সময় বার্সার ১০ নম্বর জার্সি পেলেন, যখন তাঁকে ঘিরে বিতর্কের ধোঁয়াও উড়ছে। নিজের ১৮তম জন্মদিনে বিনোদনের জন্য একদল বামন মানুষকে ভাড়া করেছিলেন ইয়ামাল। এতে স্পেনের সামাজিক অধিকারবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইয়ামালের জন্মদিন উদ্যাপনের পার্টিতে প্রতিবন্ধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ করেছে। এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ইয়ামাল কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান, ‘আমি বার্সার হয়ে খেলি এবং বার্সার অনুশীলন সেন্টারের থেকে যখন দূরে থাকি, তখন জীবনটা উপভোগ করি। নিজের কাছের মানুষ কিংবা পরিবারের তরফ থেকে না হলে অন্য কারও প্রশংসা কিংবা সমালোচনায় আমার আগ্রহ নেই।’