বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি :
জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বান্দরবানে রুমা ও থানচি থেকে চারটি মামলায় গ্রেফতার হওয়া ৩২ জনকে দেওয়া জামিনের আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বান্দরবান জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. মোসলেহ উদ্দিন তাদের জামিনের আদেশ বাতিল করেন।
বান্দরবান জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইকবাল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আসামিরা বিভিন্ন জেলার হলেও তাদের এলাকার কোনো জামিনদার নেই। এ ছাড়া কোনো আসামির বাড়িও বান্দরবান জেলায় নয় এবং জামিনদার একই ব্যক্তি। জামিনের শর্ত অনুযায়ী আসামিদের স্ব স্ব এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জামিনদার হিসেবে প্রদান না করায় জামিনের শর্ত লঙ্ঘিত হওয়ায় জামিননামা বাতিলের আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক।
আদেশে লেখা হয়েছে, আসামিগণের পক্ষে যে জামিননামা দাখিল করা হয়েছে সে জামিননামা পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, প্রত্যেক আসামির জামিনদার একই ব্যক্তি। তার নাম ইমান হোসেন, সে বান্দরবান সদরের থানা কোয়ার্টারের মো. খলিল এর ছেলে। অথচ প্রত্যেক আসামিরা বিভিন্ন জেলার হলেও তাদের এলাকার কোনো জামিনদার নেই। এদিকে ৪টি মামলার জামিনদার একই ব্যক্তি এবং তার বাড়ি বান্দরবান। এদিকে কোনো আসামির বাড়িই বান্দরবান নয়। জামিনের শর্ত অনুযায়ী আসামিগণের স্ব স্ব এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জামিনদার হিসেবে প্রদান না করায় জামিনের শর্ত লঙ্ঘিত হওয়ায় জামিননামা গ্রহণ করা হলো না এবং আসামিগণকে প্রদত্ত জামিন বাতিল করা হলো।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মোট চারটি মামলায় আটক দেখানো এই ৩২ জনকে জামিনের আদেশ দেন বান্দরবানের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন।
যারা জামিন পেয়েছেন তারা হলেন— সিলেটের মো. মাকসুদুর রহমান, কুমিল্লার সালেহ আহমদ, সিলেটের মো. সাদেকুর রহমান, কুমিল্লার মো. বায়েজিদ ইসলাম, নোয়াখালির নিজাম উদ্দিন হিরন, মাদারীপুরের মো. আবুল বাশার মৃধা, কুমিল্লার মো. ইমরান হোসেন, নারায়ণগঞ্জের আল আমিন সর্দার, কুমিল্লার মো. দিদার হোসেন, সিলেটের তাহিয়াত চৌধুরী, ঝালকাঠির মো. হাবিবুর রহমান, কুমিল্লার মো. সাখাওয়াত হোসেন, পটুয়াখালীর মো. মিরাজ সিকদার, পটুয়াখালীর মো. আল আমিন ফকির, বরিশালের মো. আবদুস সালাম, পটুয়াখালীর মো. ওবাইদুল্লাহ হক, বরিশালের মো. মাহামুদ ডাকুয়া, পটুয়াখালীর জুয়েল মুসল্লি, পটুয়াখালীর মো. শামীম, মুন্সিগঞ্জের রিয়াজ শেখ, বরগুনার মো. সোহেল মোল্লা, টাঙ্গাইলের মো. ইলিয়াছ রহমান, কুমিল্লার মো. জহিরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের মো. আবু হোরায়রা, কুমিল্লার মো. দিদার হোসেন মাসুম, চট্টগ্রামের ইমরান হোসেন, কুমিল্লার আহাদুল ইসলাম মজুমদার, কুমিল্লার আনিছুর রহমান, গাইবান্ধার মো. শামীন মাহফুজ, কুমিল্লার মো. আসসামী রহমান।
এদের মধ্যে বান্দরবানের থানচি থেকে ২১ জন, রুমা থেকে ৪ জন, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ২ জন ও বান্দরবান সদর থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। এদের বিরুদ্ধে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ’র আস্তানায় প্রশিক্ষণ নেওয়া ও বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি তৎপরতা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল।
কেএনএফের সন্ত্রাসী তৎপরতা দমনে পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিরের অভিযান শুরু হলে সে সময় র্যাব অভিযান চালিয়ে এদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষক ও অর্থ শাখার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও ছিল বলে সে সময় র্যাব গণমাধ্যমকে জানায়।
প্রসঙ্গত, ২০২২ থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকে বিভিন্ন সময়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার এসব ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্য বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। এদের মধ্যে বান্দরবানের থানচি থেকে ২১ জন, রুমা থেকে চারজন, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে দুইজন ও বান্দরবান সদর থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।