নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে লুটের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এটা লুটেরাদের দেশে পরিণত হয়েছে। সরকার লুটেরাতে পরিণত হয়েছে। লুটেরাদের বাজেট হবে কী করার জন্য? লুট করার জন্য। এটাই আমি দেখতে পাচ্ছি, আবার একটা নতুন করে লুটের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আয়ের যেসব খাত দেখানো হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের ওপর গিয়ে বোঝাটা পড়বে। ব্যয় মেটানোর জন্য যা করবে, সেটাও সাধারণ মানুষের ওপরই গিয়ে পড়বে। এ বাজেট হলো ঋণনির্ভর। সবটাই গিয়ে পড়বে মানুষের ওপর। বাজেটের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এখানে কর্মসংস্থান তৈরির মতো কোনো নির্দেশনা নেই। পুরো বাজেট মেগা প্রকল্পের, মেগা চুরি ও দুর্নীতির জন্য করা হয়েছে। সুতরাং এটি শুধু তথাকথিত গণবিরোধী নয় এটি বাংলাদেশবিরোধী বাজেট।
সাংবাদিকদের কাছে বাজেট প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিএনপি বলেন, তথাকথিত বাজেট যা দেওয়া হয়েছে, তাতে আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। বাজেটে আয়ের অংশ যা দেখানো হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের ওপর সমস্ত বোঝা পড়বে। ব্যয় মেটানোর জন্য যা করবে, তাও সাধারণ মানুষের ওপর গিয়ে পড়বে। সাধারণ মানুষের পকেট কাটা হবে। বিদেশ থেকে আনছে অনুদান অথবা ঋণ। সেই সঙ্গে আবার ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। সবটাই গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। সাধারণ মানুষ আর কত বোঝা টানবে?’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একদিকে মূল্যস্ফীতি চরমভাবে ওপরে উঠে গেছে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যমূল্য এতে বেড়েছে যে তা আর সাধারণ মানুষের সহনীয় পর্যায়ে আর নেই। কয়েকদিন আগেই বাড়ল পেট্রোল-ডিজেল-বিদ্যুতের দাম। যার প্রতিক্রিয়ায় দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। বাজেটকে সামনে রেখে এখন আবারও দাম বাড়বে।
আইএমএফ-এর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, প্রতিবছর চারবার করে দাম সমন্বয় করা হবে। আমরা এ পয়সাটা কিসের জন্য দিচ্ছি? বিদ্যুৎখাতে যে চুরি হয়েছে, এনার্জি খাতে যে চুরি হয়েছে, তা সবাই জানে। এই কুইক রেন্টাল থেকে শুরু করে ভারতে আদানীর কাছ থেকে বিদ্যুৎ আনা-সব কিছু থেকেই তারা তাদের পকেট ভারী করেছে। … বলে রূপপুর প্লান্ট! কোথায় রূপপূর প্লান্ট? কোথায় গেল পায়রা বন্দরের কাজ? ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে-খুব ভালো কথা। কিন্তু আপনি সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান করছেন কি? মানুষ তো আর পারছে না। মানুষ এখন গ্রামে চলে যাচ্ছে। কারণ, মানুষ ঢাকা শহরে টিকতে পারছে না। গ্রামে গিয়ে তারা বিপদে পড়ছে। কারণ কাজকর্ম নাই। প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এখানে এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট বা ক্রিয়েট করার কিছু নাই।’
কালো টাকা সাদা করার জন্য ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে, কিন্তু বৈধ পথে আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে- এ কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা পে করে, যারা ন্যায়ের পথে চলে, তাদের ওপর চাপ পড়ছে। যারা অন্যায় করছে, তাদের কোনো কিছু হয় না। কী করে একজন্য সরকারি কর্মকর্তা হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ তৈরি করে? এখানে দুইটা ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এ রকম ঘটনা আরও রয়েছে। এই যে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকরা যেতে পারল না-কেন পারল না? সরকারের ব্যর্থতার জন্য, গর্ভনেন্সের চরম ব্যর্থতার জন্য। পত্রিকায় এসেছে, চার-পাচজন সংসদ সদস্য জড়িত। ২০ হাজার, ২৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়ে গেছে। এ কারণে আমরা সবসময় বলে আসছি, এটা এখন লুটেরাদের দেশ হয়ে গেছে। জনগণের সরকার না থাকলে, কোনো জবাবদিহিতা না থাকলে যা হয়, এখন অবস্থা সেরকমই হয়েছে। বর্তমান পার্লামেন্ট কার? সেখানে তারাই সরকারি দল, তারাই বিরোধী দল। যেগুলো বার্নিং ইস্যু, সেগুলো সেখানে আলোচনা হয় না। শুধু স্তুতি আর স্তুতি। বাজেট নিয়েও তাই হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষ বোঝা আর টানতে পারছে না। চরম মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের যে দাম বেড়েছে, তা তাদের জন্য সহনীয় নয়। কয়েকদিন আগেই পেট্রল-ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেছে। বাজেটের পর আবারও এসবের দাম বাড়বে। আইএমএফের সঙ্গে চুক্তির ফলে প্রতি বছর চারবার করে দাম বাড়বে।
ফখরুল বলেন, বাড়তি পয়সা আমরা কেন দিচ্ছি? বিদ্যুৎ খাতে যে চুরি হয়েছে, সেটা সবাই জানে। কুইক রেন্টাল থেকে শুরু করে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনাসহ সবই তাদের (সরকার) পকেট ভারী করেছে। রূপপুর প্ল্যান্ট তো আর এগোচ্ছে না। কোথায় গেল পায়রা বন্দর, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ?
তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, কোন রাস্তায় সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান করছেন? মানুষ তো আর পারছে না। বহু মানুষ কিন্তু শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। কারণ তারা ঢাকা শহরে আর টিকতে পারছে না। আর গ্রামে গিয়েও বিপদে পড়ছে, কারণ সেখানে কর্মসংস্থান নেই।
ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ সংসদ তাদের। তারাই সরকারি দল, তারাই বেসরকারি দল। ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে এটি হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম, একজন সংসদ সদস্য বেনজীরের ওপর আলোচনা শুরু করলে তাকে থামিয়ে দেওয়া হলো। তার মানে সেখানে জনস্বার্থে কোনো কিছু বলা যাবে না।