Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটে মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়া সেই বাঁধে ধস!

বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি : 

বাগেরহাট সদর উপজেলায় ভৈরব নদের তীরে মাটির বদলে বালু দিয়ে নির্মিত বাঁধে ছয় মাসের মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালু দেওয়ার অভিযোগ করে এর স্থায়িত্ব নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন স্থানীয়রা।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, নাজিরপুর উপ-প্রকল্পের অধীন সংস্কার হওয়া ওই বাঁধের নিচ দিয়ে অবৈধভাবে তৈরি কালভার্টের জন্য ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাতে বাঁধের সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ সেতুর নিচে একটি অংশ দেবে যায়। বাঁধের ওই অংশের ওপর দিয়ে স্থানীয়দের যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে। ভাঙনে একটি অংশ দেবে যাওয়াতে গোটাপাড়া ইউনিয়নের গোপালকাঠী গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে বুধবার (২৬ জুলাই) সকালে ওই এলাকা পরিদর্শনে যান সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন। এ সময় ধসের জন্য স্থানীয় লোকজনের ওই বাঁধ তৈরিতে বালু ব্যবহার, অবৈধ কালভার্ট নির্মাণ এবং বাঁধের গোড়া দিয়ে নদীর চরের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

গত অর্থবছরে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধটি উঁচু করতে সংস্কারকাজ করে পাউবো। তখন স্থানীয় একটি ইটভাটার তৈরি ওই অবৈধ কালভার্টটি অপসারণ করেনি তারা। বর্ষা শুরুর পর এখান থেকে পানির চাপে বাঁধে ভাঙন দেখা দিলে প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করে পাউবো। তবে এরই মধ্যে বাঁধের একটি অংশ ধসে যায়।

স্থানীয় গোপালকাঠি গ্রামের জিল্লাল শেখ বলেন, প্রায় দুই দশক আগে ওই বাঁধের পাশে এমবিএ নামের একটি ইটভাটা গড়ে ওঠে। ইটভাটার মালিক মিজানুর রহমান মনি নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে নিয়ে ইটভাটায় ব্যবহার করেন। কয় দিন আগেও পাশ দিয়ে মাটি কেটে নেওয়ায় বাঁধের আর একটি অংশও ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

গোটাপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শাহ আলম বিপ্লব বলেন, সরকারি বেড়িবাঁধ অবৈধভাবে কেটে ভাটামালিক কালভার্টটি নির্মাণ করেছেন। কালভার্ট নির্মাণের কারণে বাঁধটি ভেঙে গেছে। তিনি অবৈধভাবে কেশবপুর নদের মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করেন। অবৈধভাবে সরকারি জায়গার মাটি কাটার অভিযোগে কিছুদিন আগে তাঁকে প্রশাসন এক লাখ টাকা জরিমানা করে। তারপরও তাঁর মাটি কাটা থেমে নেই।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, স্থানীয় লোকজনের চলাচলের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সম্প্রতি এই বাঁধে ইটের সলিং করে দেওয়া হয়। ইটভাটার মালিকের অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে সেই রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবসার কারণে এই বড় একটি জনগোষ্ঠীর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভাটামালিক ওই কালভার্ট দিয়ে মাছের ঘেরের পানি ওঠানামা করান। ওই পানির চাপে ধীরে ধীরে বাঁধটি দুর্বল হয়ে ভেঙে গেছে। সকালে এসে ওই পরিস্থিতি দেখে কালভার্টটি অপসারণ শুরু করা হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইটভাটার মালিক মিজানুর রহমান মনি বলেন, কালভার্টটি ১৩ থেকে ১৪ বছর আগের নির্মাণ করা। সম্প্রতি এই বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজ করা হয়। ওই সংস্কারকাজে বাঁধের পাশ দিয়ে মাটি কেটে দেওয়া হয়েছে। মাটি কাটার কারণে ধীরে ধীরে তা ভেঙে গেছে। নদী থেকে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নদী থেকে মাটি কাটি না। দূরের পতিত জমি দিয়ে মাটি কিনে এনে ইট তৈরি করা হয়।

জানতে চাইলে পাউবো বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, এটি আসলে দীর্ঘদিনের একটি পুরোনো বাঁধ। আমরা সম্প্রতি এটি সংস্কার করেছি।’ বাঁধ মাটি দিয়েই সংস্কার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও মাটির তীব্র সংকট থাকায় সেখানে কিছুটা বালু ব্যবহার করেছেন। বাঁধের গোপালকাঠি অংশে অবৈধভাবে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এ বিষয়ে তাঁরা অবগত ছিলেন না। ওই কালভার্টের কারণে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। নিজ উদ্যোগে কালভার্ট অপসারণের জন্য ইটভাটার মালিককে চিঠিও দিয়েছেন। অপসারণের পর দ্রুত বাঁধটি মেরামত করে দেবেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

২৪ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষাও স্থগিত

বাগেরহাটে মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়া সেই বাঁধে ধস!

প্রকাশের সময় : ১২:২৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩

বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি : 

বাগেরহাট সদর উপজেলায় ভৈরব নদের তীরে মাটির বদলে বালু দিয়ে নির্মিত বাঁধে ছয় মাসের মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালু দেওয়ার অভিযোগ করে এর স্থায়িত্ব নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন স্থানীয়রা।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, নাজিরপুর উপ-প্রকল্পের অধীন সংস্কার হওয়া ওই বাঁধের নিচ দিয়ে অবৈধভাবে তৈরি কালভার্টের জন্য ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাতে বাঁধের সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ সেতুর নিচে একটি অংশ দেবে যায়। বাঁধের ওই অংশের ওপর দিয়ে স্থানীয়দের যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে। ভাঙনে একটি অংশ দেবে যাওয়াতে গোটাপাড়া ইউনিয়নের গোপালকাঠী গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে বুধবার (২৬ জুলাই) সকালে ওই এলাকা পরিদর্শনে যান সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন। এ সময় ধসের জন্য স্থানীয় লোকজনের ওই বাঁধ তৈরিতে বালু ব্যবহার, অবৈধ কালভার্ট নির্মাণ এবং বাঁধের গোড়া দিয়ে নদীর চরের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

গত অর্থবছরে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধটি উঁচু করতে সংস্কারকাজ করে পাউবো। তখন স্থানীয় একটি ইটভাটার তৈরি ওই অবৈধ কালভার্টটি অপসারণ করেনি তারা। বর্ষা শুরুর পর এখান থেকে পানির চাপে বাঁধে ভাঙন দেখা দিলে প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করে পাউবো। তবে এরই মধ্যে বাঁধের একটি অংশ ধসে যায়।

স্থানীয় গোপালকাঠি গ্রামের জিল্লাল শেখ বলেন, প্রায় দুই দশক আগে ওই বাঁধের পাশে এমবিএ নামের একটি ইটভাটা গড়ে ওঠে। ইটভাটার মালিক মিজানুর রহমান মনি নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে নিয়ে ইটভাটায় ব্যবহার করেন। কয় দিন আগেও পাশ দিয়ে মাটি কেটে নেওয়ায় বাঁধের আর একটি অংশও ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

গোটাপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শাহ আলম বিপ্লব বলেন, সরকারি বেড়িবাঁধ অবৈধভাবে কেটে ভাটামালিক কালভার্টটি নির্মাণ করেছেন। কালভার্ট নির্মাণের কারণে বাঁধটি ভেঙে গেছে। তিনি অবৈধভাবে কেশবপুর নদের মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করেন। অবৈধভাবে সরকারি জায়গার মাটি কাটার অভিযোগে কিছুদিন আগে তাঁকে প্রশাসন এক লাখ টাকা জরিমানা করে। তারপরও তাঁর মাটি কাটা থেমে নেই।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, স্থানীয় লোকজনের চলাচলের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সম্প্রতি এই বাঁধে ইটের সলিং করে দেওয়া হয়। ইটভাটার মালিকের অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে সেই রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবসার কারণে এই বড় একটি জনগোষ্ঠীর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভাটামালিক ওই কালভার্ট দিয়ে মাছের ঘেরের পানি ওঠানামা করান। ওই পানির চাপে ধীরে ধীরে বাঁধটি দুর্বল হয়ে ভেঙে গেছে। সকালে এসে ওই পরিস্থিতি দেখে কালভার্টটি অপসারণ শুরু করা হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইটভাটার মালিক মিজানুর রহমান মনি বলেন, কালভার্টটি ১৩ থেকে ১৪ বছর আগের নির্মাণ করা। সম্প্রতি এই বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজ করা হয়। ওই সংস্কারকাজে বাঁধের পাশ দিয়ে মাটি কেটে দেওয়া হয়েছে। মাটি কাটার কারণে ধীরে ধীরে তা ভেঙে গেছে। নদী থেকে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নদী থেকে মাটি কাটি না। দূরের পতিত জমি দিয়ে মাটি কিনে এনে ইট তৈরি করা হয়।

জানতে চাইলে পাউবো বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, এটি আসলে দীর্ঘদিনের একটি পুরোনো বাঁধ। আমরা সম্প্রতি এটি সংস্কার করেছি।’ বাঁধ মাটি দিয়েই সংস্কার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও মাটির তীব্র সংকট থাকায় সেখানে কিছুটা বালু ব্যবহার করেছেন। বাঁধের গোপালকাঠি অংশে অবৈধভাবে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এ বিষয়ে তাঁরা অবগত ছিলেন না। ওই কালভার্টের কারণে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। নিজ উদ্যোগে কালভার্ট অপসারণের জন্য ইটভাটার মালিককে চিঠিও দিয়েছেন। অপসারণের পর দ্রুত বাঁধটি মেরামত করে দেবেন।