Dhaka বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাখমুত পতনের কথা স্বীকার করলেন জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, দেশটির বাখমুত শহরটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে ওই শহরে রাশিয়ার জয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আকস্মিক হামলা চালায় রাশিয়া। তারপর থেকে দেশটির বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছেই।

রোববার (২১ মে) জেলেনস্কির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, তার বাহিনী বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে কেনা। এর জবাবে জেলেনস্কি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক, এটা একটা ট্র্যাজেডি। কিন্তু বাখমুত আমাদের হৃদয়ে রয়েছে।

এতে মনে হয়েছিল, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন রুশ সেনাদের হাতে বাখমুতের পতন হয়েছে।

তবে কিছুক্ষণ বাদেই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা সের্গেই নাইকোফোরভ দাবি করেন, জেলেনস্কি আমি মনে করি নেই এ কথার মাধ্যমে জানিয়েছেন, রাশিয়ার হাতে বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রেসিডেন্টের বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিসহ সব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন রুশ বাহিনীর হাতে বাখমুতের পতন হয়েছে। তবে পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যমগুলো ভিন্ন খবর জানায়।

রুশ বাহিনী বাখমুত শহরকে পুরোপুরি একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে এমন মন্তব্য করে জেলেনস্কি বলেছেন, তারা সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আপনাকে বুঝতে হবে। আজ থেকে বাখমুত আমাদের অন্তরে থাকবে। সেখানে কিছুই নেই।

এক ভিডিওতে ওয়াগনার রাশিয়ান প্যারামিলিটারির প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনকে তার দলের বেশ কয়েকজন যোদ্ধার সঙ্গে দেখা গেছে। সেখানে তাকে বলতে শোনা গেছে যে, তার বাহিনী পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যদিও তাৎক্ষণিক ভাবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন সরকার। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, সেখানকার পরিস্থিতি এখন বেশ জটিল।

অপরদিকে রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও দাবি করেছেন যে, বাখমুতে লড়াইয়ে রাশিয়া জয়ী হয়েছে। যারা সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সেসব সেনাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৌশলগত ভাবে বাখমুত দখল করে নেওয়াটা মস্কোর কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এর দখল প্রতীকী অর্থে রাশিয়ার জন্য বিজয়। গত আগস্ট থেকেই ওই শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘাত চলছিল।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের ধারণা, বাখমুতে রাশিয়ার ২০ থেকে ৩০ হাজার সেনা নিহত বা আহত হয়েছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে জি-৭ সম্মেলনের জন্য বর্তমানের জাপানের হিরোশিমায় অবস্থান করছেন জেলেনস্কি। সেখানে তাকে বাখমুত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনাদের বুঝতে হবে যে, এখানে আর কিছুই নেই। তারা সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওই শহরে প্রচুর রুশ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের সেনা সদস্যরা কঠোর লড়াই চালিয়ে গেছে। তাদের এই মহৎ কাজের জন্য আমরা তাদের প্রশংসা করছি। তিনি আরও বলেন, শহরের বেশিরভাগ ভবনই ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো জনগোষ্ঠী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এদিকে এর আগে শনিবার (২০ মে) রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রপের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন জানান, তারা সেনারা দোনেৎস্কের বাখমুত শহর পুরোপুরি দখল করেছে— যদিও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এটি অস্বীকার করা হয়।

পশ্চিমা যুদ্ধ বিশ্লেষকরা বলেছেন, চলমান যুদ্ধে বাখমুতের কৌশলগত কোনো মূল্য নেই। তবুও রাশিয়ার সেনারা এ শহরে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেছে। কারণ তারা একটি ‘প্রতীকী’ জয় চেয়েছিল।

ইউক্রেনে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা করার পর গত ৭-৮ মাসে দেশটিতে বড় কোনো সামরিক সাফল্য পায়নি রাশিয়া। এ কারণে সাধারণ মানুষকে দেখানোর জন্য তাদের একটি জয়ের প্রয়োজন ছিল। বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন, যা এই বাখমুতের মাধ্যমেই অর্জন করেছে করেছে রুশ বাহিনী।

পশ্চিমা কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, বাখমুতের লড়াইয়ে রাশিয়ার ২০ থেকে ৩০ হাজার সেনা আহত বা নিহত হয়েছেন। অপরদিকে রুশ বাহিনীকে আটকাতে গিয়ে ইউক্রেনের সেনারও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বাখমুত পতনের কথা স্বীকার করলেন জেলেনস্কি

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৯:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, দেশটির বাখমুত শহরটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে ওই শহরে রাশিয়ার জয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আকস্মিক হামলা চালায় রাশিয়া। তারপর থেকে দেশটির বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছেই।

রোববার (২১ মে) জেলেনস্কির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, তার বাহিনী বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে কেনা। এর জবাবে জেলেনস্কি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক, এটা একটা ট্র্যাজেডি। কিন্তু বাখমুত আমাদের হৃদয়ে রয়েছে।

এতে মনে হয়েছিল, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন রুশ সেনাদের হাতে বাখমুতের পতন হয়েছে।

তবে কিছুক্ষণ বাদেই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা সের্গেই নাইকোফোরভ দাবি করেন, জেলেনস্কি আমি মনে করি নেই এ কথার মাধ্যমে জানিয়েছেন, রাশিয়ার হাতে বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রেসিডেন্টের বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিসহ সব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন রুশ বাহিনীর হাতে বাখমুতের পতন হয়েছে। তবে পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যমগুলো ভিন্ন খবর জানায়।

রুশ বাহিনী বাখমুত শহরকে পুরোপুরি একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে এমন মন্তব্য করে জেলেনস্কি বলেছেন, তারা সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আপনাকে বুঝতে হবে। আজ থেকে বাখমুত আমাদের অন্তরে থাকবে। সেখানে কিছুই নেই।

এক ভিডিওতে ওয়াগনার রাশিয়ান প্যারামিলিটারির প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনকে তার দলের বেশ কয়েকজন যোদ্ধার সঙ্গে দেখা গেছে। সেখানে তাকে বলতে শোনা গেছে যে, তার বাহিনী পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যদিও তাৎক্ষণিক ভাবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন সরকার। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, সেখানকার পরিস্থিতি এখন বেশ জটিল।

অপরদিকে রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও দাবি করেছেন যে, বাখমুতে লড়াইয়ে রাশিয়া জয়ী হয়েছে। যারা সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সেসব সেনাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৌশলগত ভাবে বাখমুত দখল করে নেওয়াটা মস্কোর কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এর দখল প্রতীকী অর্থে রাশিয়ার জন্য বিজয়। গত আগস্ট থেকেই ওই শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘাত চলছিল।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের ধারণা, বাখমুতে রাশিয়ার ২০ থেকে ৩০ হাজার সেনা নিহত বা আহত হয়েছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে জি-৭ সম্মেলনের জন্য বর্তমানের জাপানের হিরোশিমায় অবস্থান করছেন জেলেনস্কি। সেখানে তাকে বাখমুত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনাদের বুঝতে হবে যে, এখানে আর কিছুই নেই। তারা সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওই শহরে প্রচুর রুশ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের সেনা সদস্যরা কঠোর লড়াই চালিয়ে গেছে। তাদের এই মহৎ কাজের জন্য আমরা তাদের প্রশংসা করছি। তিনি আরও বলেন, শহরের বেশিরভাগ ভবনই ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো জনগোষ্ঠী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এদিকে এর আগে শনিবার (২০ মে) রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রপের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন জানান, তারা সেনারা দোনেৎস্কের বাখমুত শহর পুরোপুরি দখল করেছে— যদিও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এটি অস্বীকার করা হয়।

পশ্চিমা যুদ্ধ বিশ্লেষকরা বলেছেন, চলমান যুদ্ধে বাখমুতের কৌশলগত কোনো মূল্য নেই। তবুও রাশিয়ার সেনারা এ শহরে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেছে। কারণ তারা একটি ‘প্রতীকী’ জয় চেয়েছিল।

ইউক্রেনে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা করার পর গত ৭-৮ মাসে দেশটিতে বড় কোনো সামরিক সাফল্য পায়নি রাশিয়া। এ কারণে সাধারণ মানুষকে দেখানোর জন্য তাদের একটি জয়ের প্রয়োজন ছিল। বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন, যা এই বাখমুতের মাধ্যমেই অর্জন করেছে করেছে রুশ বাহিনী।

পশ্চিমা কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, বাখমুতের লড়াইয়ে রাশিয়ার ২০ থেকে ৩০ হাজার সেনা আহত বা নিহত হয়েছেন। অপরদিকে রুশ বাহিনীকে আটকাতে গিয়ে ইউক্রেনের সেনারও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।