বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি :
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তি দেওয়ার হুমকির প্রতিবাদে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পর শুক্রবার (২৩ মে) ইউএনওর পক্ষাবলম্বন করে মিছিল ও সমাবেশ করেছে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা।
মিছিলের স্লোগান ছিল-ধরি ধরি ধরিনা, ধরলে কিন্তু ছাড়মুনা। প্রশাসনের অপমান চলবেনা, ইউএনও স্যারের অপমান সহ্য করা হবেনা, হলুদ সাংবাদিকদের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও ….।
মিছিলে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের খুব কাছের শিক্ষকদের দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার আপন ছোট ভাই ও নওমালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেএম নাসির উদ্দিন সবুজ,আওয়ামী লীগ সমর্থিত এমপিওভূক্ত শিক্ষক কর্মচারী কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ধানদী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অর্থ আত্মসাতের দায়ে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর মোর্শেদসহ আরও অনেক শিক্ষক।
শুক্রবার (২৩ মে) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। সেখান থেকে পাবলিক মাঠ পর্যন্ত এসে ঘুরে পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তৃতা করেন শাহিন রেজা, আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, কারখানা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রমুখ। বক্তারা বলেন,ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুযোগ সুবিধা নেওয়া হলুদ সাংবাদিকেরা বর্তমান ইউএনওকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাঁকে তাড়াতে চায়। এ কারণে ইউএনওকে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। তাঁরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল ও মাদ্রাসার কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বলেন, যেহেতু এই বর্তমান সময়ে কোনো রাজনৈতিক সরকার নাই। এ কারণে একটি উপজেলার প্রধান ব্যক্তি হলেন ইউএনও। তাছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁর নিয়ন্ত্রণে। তাঁদেরকে প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে আসতে বাধ্য করা হয়েছে।
গত সোমবার ‘অবহিত না করে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে তর্কের জেরে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক এ এইচ এম শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই দিন বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুদকের পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিদ্যালয়ে এসেই ক্ষুব্ধ হন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। এ নিয়ে শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর কথা-কাটাকাটি হয়। কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে খেপে গিয়ে ইউএনওকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।’ এ সংক্রান্ত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পরবর্তীতে গত বুধবার বিকেলে ইউএনও আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তি দেওয়ার হুমকির প্রতিবাদে উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্র–জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত ওই কর্মসূচি থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
সাংবাদিক এ এইচ এম শহীদুল হক অভিযোগ করে বলেন, ইউএনও আমিনুল ইসলাম বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁকে (শহীদুল) সমঝোতা করার জন্য চাপ দিয়ে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুযোগ সুবিধা নেওয়া শিক্ষক ও বিএনপির সাবেক বিতর্কিত নেতা-কর্মীদের লেলিয়ে দিয়েছে। এ কারণে তিনি শঙ্কিত। তিনি আরও বলেন,ইউএনও আমিনুল ইসলাম হচ্ছেন ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারের মূখ্য সচিবের আপন ভাগনি জামাই। সেই প্রভাবে পূর্বের কর্মস্থল মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় ইউএনও থাকাকালীন ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। যে কারণে পত্রিকার শিরোনামও হয়েছিলেন।
তবে ইউএনও আমিনুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি তাঁকে (শহীদুল) কোনো মাধ্যমেই সমঝোতা করার জন্য চাপ দেননি। প্রথমত তিনি (শহীদুল) অনুষ্ঠানের অনুমতি নেননি। এরপর তিনি (শহীদুল) ও তাঁর সঙ্গের লোকজন তাঁর সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। অথচ তাঁর (ইউএনও) বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে পরিবেশ ঘোলাটে করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আজকে শিক্ষকদের মিছিল সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। হয়তো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর (ইউএনও) বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার দেখে শিক্ষক সমাজ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি কাউকে মিছিল করতে বলেননি।