Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাউফলে চাইয়ের হাট

বাউফল উপজেলা (পটুয়াখালী ) থেকে নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী (মাসুম)

এখন বর্ষাকাল। বিরামহীন বৃষ্টির কারনে বাউফল উপজেলার খাল, বিল, ডোবা, নালা পানিতে টুইটুম্বুর। এ সকল ডোবা নালায় প্রকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠে হরেক প্রজাতির দেশিও মাছ। এ সকল মাছ শিকার করেন গ্রামের দরিদ্র ও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। মাছ শিকার করতে ব্যবহার করেন বাশেঁর তৈরী বিশেষ এক ধরনের ফাঁদ। এই ফাঁদের নাম চাই।

উপজেলার কালাইয়া বন্দরের ধানহাটা সংলগ্ন চাইয়ের হাটে গিয়ে দেখা যায়, বরিশালের স্বরুপ কাঠি পিরোজপুরের নাজিরপুর থেকে ট্রলার যোগে কয়েকজন বিক্রেতা বসিয়েছেন চাইয়ের হাট। সারি সারি চাই সাজিয়ে বিক্রি করছেন স্থানীয়দের কাছে।

স্বরুপকাঠীর চাই বিক্রেতা মো. রুহুল আকন বলেন, কালাইয়া বাজারে তারা প্রায় ১৮ বছর ধরে এই চাই বিক্রি করতে আসনে। প্রতিটা চাই বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্ষা মৌসুমকে ঘিরেই তাদের এই ব্যবসা।

নাজিরপুরের বিক্রেতা সুখরঞ্জন ঘড়ামি বলেন, তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ কিনে নিয়ে বাড়িতে বসে শ্রমিক দিয়ে চাই তৈরী করেন। বর্তমানে বাশেঁর দাম অনেক বেশি হওয়ায় লাভের পরিমান সীমিত।

তিনি বলেন, একটি মাঝারি সাইজের বাঁশ ৪শ থেকে সারে ৪শ টাকা। একটি বাঁশ দিয়ে দিয়ে ৩০টির মতন চাই তৈরী করা যায়। প্রতিটি চাইয়ের মুজুরী দেওয়া হয় ১শ টাকা করে। তারপড় পরিবহন খরচ।

চাই ক্রেতা উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের আলতাফ আকন বলেন, তিনি পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। সম্প্রতী বিরামহীন বৃষ্টিতে বাড়ির চারপাশে কোলা বিল পানিতে ডুবে গেছে। তিনি ২৮০ টাকা দরে ১০টি চাই কিনেছেন। চাই গুলোর ভিতরে মাছের কিছু খাবার রেখে বিকালে জমির আইল ঘেষে বিভিন্ন স্থানে এবং ছোট ছোট নালায় পেতে রেখে সকালে উঠিয়ে ফেলি। ১০টি চাইতে যে পরিমান মাছ ধরা পড়ে তা নিজেরা কিছু রেখে বাজারে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬শ টাকা বিক্রি করা যায়।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরমিয়াজান গ্রামের গৃহবধু রাহিমা বেগম তিনি কিনেছে ২০টি চাই। রাহিমা বলেন, এই চাইতে দেশিও প্রজাতী সুস্বাদু ট্যাংরা, পুটি, খইলাশা, পাবদা, ভেদি, এই বর্ষা মৌসুমে চাইয়ের মাছ বিক্রি করে তিনি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পান। যা দিয়ে তিনি তার দিনমজুর স্বামীর আয়ের সাথে যোগ করে একটু স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারেন।

যদিও মাছ শিকারের এ ধরনের চাইয়ের বিরোধিতা করে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ’সেইভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’ এর পরিচালক এম এ বাশার বলেন, এটাকে আমি চাই বলি না। বলি মাছ ধরার ফাঁদ। এই ফাঁদটি কোন ভাবেই পরিবেশ বান্ধব না। ফাঁদটি এমন ভাবে তৈরী মাছের পোনাসহ রেনু পর্যন্ত আটকে থাকে। দেশিও প্রজাতীর হরেক প্রকারের মাছ হারিয়ে যাওয়ার পিছনে এই ফাঁদটির ভূমিকা রয়েছে। তিনি চাই নামের এই ফাঁদটি নিষিদ্ধের দাবী জানান।

উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, এই ধরনের চাই এর বিষয়ে আমাদের কোন নির্ধেশনা নাই। তবে চাই গুলো বন্ধের বিষয়ে উপরস্থ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

বাউফলে চাইয়ের হাট

প্রকাশের সময় : ০৩:৫০:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

বাউফল উপজেলা (পটুয়াখালী ) থেকে নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী (মাসুম)

এখন বর্ষাকাল। বিরামহীন বৃষ্টির কারনে বাউফল উপজেলার খাল, বিল, ডোবা, নালা পানিতে টুইটুম্বুর। এ সকল ডোবা নালায় প্রকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠে হরেক প্রজাতির দেশিও মাছ। এ সকল মাছ শিকার করেন গ্রামের দরিদ্র ও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। মাছ শিকার করতে ব্যবহার করেন বাশেঁর তৈরী বিশেষ এক ধরনের ফাঁদ। এই ফাঁদের নাম চাই।

উপজেলার কালাইয়া বন্দরের ধানহাটা সংলগ্ন চাইয়ের হাটে গিয়ে দেখা যায়, বরিশালের স্বরুপ কাঠি পিরোজপুরের নাজিরপুর থেকে ট্রলার যোগে কয়েকজন বিক্রেতা বসিয়েছেন চাইয়ের হাট। সারি সারি চাই সাজিয়ে বিক্রি করছেন স্থানীয়দের কাছে।

স্বরুপকাঠীর চাই বিক্রেতা মো. রুহুল আকন বলেন, কালাইয়া বাজারে তারা প্রায় ১৮ বছর ধরে এই চাই বিক্রি করতে আসনে। প্রতিটা চাই বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্ষা মৌসুমকে ঘিরেই তাদের এই ব্যবসা।

নাজিরপুরের বিক্রেতা সুখরঞ্জন ঘড়ামি বলেন, তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ কিনে নিয়ে বাড়িতে বসে শ্রমিক দিয়ে চাই তৈরী করেন। বর্তমানে বাশেঁর দাম অনেক বেশি হওয়ায় লাভের পরিমান সীমিত।

তিনি বলেন, একটি মাঝারি সাইজের বাঁশ ৪শ থেকে সারে ৪শ টাকা। একটি বাঁশ দিয়ে দিয়ে ৩০টির মতন চাই তৈরী করা যায়। প্রতিটি চাইয়ের মুজুরী দেওয়া হয় ১শ টাকা করে। তারপড় পরিবহন খরচ।

চাই ক্রেতা উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের আলতাফ আকন বলেন, তিনি পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। সম্প্রতী বিরামহীন বৃষ্টিতে বাড়ির চারপাশে কোলা বিল পানিতে ডুবে গেছে। তিনি ২৮০ টাকা দরে ১০টি চাই কিনেছেন। চাই গুলোর ভিতরে মাছের কিছু খাবার রেখে বিকালে জমির আইল ঘেষে বিভিন্ন স্থানে এবং ছোট ছোট নালায় পেতে রেখে সকালে উঠিয়ে ফেলি। ১০টি চাইতে যে পরিমান মাছ ধরা পড়ে তা নিজেরা কিছু রেখে বাজারে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬শ টাকা বিক্রি করা যায়।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরমিয়াজান গ্রামের গৃহবধু রাহিমা বেগম তিনি কিনেছে ২০টি চাই। রাহিমা বলেন, এই চাইতে দেশিও প্রজাতী সুস্বাদু ট্যাংরা, পুটি, খইলাশা, পাবদা, ভেদি, এই বর্ষা মৌসুমে চাইয়ের মাছ বিক্রি করে তিনি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পান। যা দিয়ে তিনি তার দিনমজুর স্বামীর আয়ের সাথে যোগ করে একটু স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারেন।

যদিও মাছ শিকারের এ ধরনের চাইয়ের বিরোধিতা করে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ’সেইভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’ এর পরিচালক এম এ বাশার বলেন, এটাকে আমি চাই বলি না। বলি মাছ ধরার ফাঁদ। এই ফাঁদটি কোন ভাবেই পরিবেশ বান্ধব না। ফাঁদটি এমন ভাবে তৈরী মাছের পোনাসহ রেনু পর্যন্ত আটকে থাকে। দেশিও প্রজাতীর হরেক প্রকারের মাছ হারিয়ে যাওয়ার পিছনে এই ফাঁদটির ভূমিকা রয়েছে। তিনি চাই নামের এই ফাঁদটি নিষিদ্ধের দাবী জানান।

উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, এই ধরনের চাই এর বিষয়ে আমাদের কোন নির্ধেশনা নাই। তবে চাই গুলো বন্ধের বিষয়ে উপরস্থ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে।