ভোলা জেলা প্রতিনিধি :
গত ১৫ বছর ধরে দেশের জনগণ একটি নজিরবিহীন ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়া শাসনের অধীনে চরম জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, বাংলার মানুষ হাতে হাত রেখে বাংলার মাটি থেকে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে লড়াই করে বিদায় করেছে। সেজন্য ২৪এর অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে সবার আগে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার বিচার দেখতে চায় বাংলার জনগণ।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ভোলা শহরের বিভিন্ন সড়কে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ সাত সাত দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ শেষে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। দুপুরের দিকে ভোলা বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন ইলিশা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ পথসভার আয়োজন করা হয়।
সারজিস আলম বলেন, সাধারণ মানুষ সবাই ঘোষণাপত্রে প্রথমেই শেখ হাসিনার ফাঁসি দেখতে চায়। তিনি দেশে গোপালগঞ্জের যে সিন্ডিকেট বসিয়েছেন, তার শেষ করে সমতার একটি সিস্টেম চায় মানুষ। তার পরিবার প্রত্যেকটি জায়গায় সিন্ডিকেট বসিয়ে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সেইগুলোকে শেষ করে সমতার একটি বাংলাদেশ দেখতে চায় বাংলার মানুষ।
তিনি বলেন, আজ যখন আমরা চিন্তা করছি, অভ্যুত্থানে যে গতিকে সামনে রেখে আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি, বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো আমরা এখনো ধারণ করি, যে স্বপ্নগুলো দেখি, সে স্বপ্নগুলো একটি ঘোষণাপত্রে লিখিত আকারে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কোন কথাগুলো ঘোষণাপত্রে লিখিত আকারে থাকা প্রয়োজন, সেগুলো যেন কয়েকজনের কথা না হয়।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, খুনি হাসিনাসহ যাদের নির্দেশে এতো মানুষকে খুন করা হয়েছে, রক্ত জড়ানো হয়েছে, তাদের বিচারের শাস্তির স্পষ্ট কথা এই ঘোষণাপত্রে থাকতে হবে। আমরা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলেছি, তারা একাত্মতা প্রকাশ করে আমাদের ৭ দফা দাবিকে যৌক্তিক বলে জানিয়েছেন।
সারজিস আলম জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশে আপনারা সত্যকে সত্য বলবেন ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলবেন, ভালোকে ভালো ও খারাপকে খারাপ বলবেন। আর যদি খারাপকে খারাপ না বলেন, তাহলে কয়েক বছর পরে সেই খারাপ লোকই আপনার গলা চেপে ধরবে।
তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো অপশক্তিই তাদের আটকে রাখতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা শহর থেকে দূরত্ব কখনো অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারে না। অগ্রাধিকার নির্ধারণ করবে কার কতটুকু ত্যাগ আছে। সেই ত্যাগের বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি জেলা হচ্ছে ভোলা। এই দ্বীপ জেলা ভোলার ৪৭জন বীর শহীদ তাদের জীবন দিয়ে এই অভ্যুত্থানকে সফল করেছেন। আমরা ভোলার রাজপথে হেঁটেছি, সিএনজি ও অটোচালক, ফুটপাতের দোকানদারসহ সকল শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি।
সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন একটি ধারা দেখেছি, যেই ধারায় শুধুমাত্র যখন ভোটের প্রয়োজন হতো তখনই অনেকে জননেতা সেজে জনগণের কাছে আসতো। কিন্তু বিগত ১৬ বছরে খুনি হাসিনা সেই ভোটেরও প্রয়োজনীয়তা রাখেননি। তাই কোনো নেতাকে জনগণের কাছে আসতে হয়নি।
চাঁদাবাজি বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, ‘বাংলাদেশের যে জায়গাগুলোতে এখনো দালালি ও চাঁদাবাজি হয়; হোক সেটা কেউ পোশাক পড়ে করুক, কেউ সাধারণ পোশাকে করুক তাদের বিরুদ্ধে সকলকে সক্রিয় হতে হবে।’
যে কোনো যৌক্তিক দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অথবা জাতীয় নাগরিক কমিটি ভোলার মানুষের পাশে থাকবে উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোলাবাসীর প্রাণের দাবিগুলো সরকার পর্যন্ত পৌছে দিবো। যেই ভোলায় গ্যাস উৎপাদন হয় সেই ভোলা কেনো গ্যাস পাবে না; যেই ভোলা থেকে স্পিডবোট অথবা লঞ্চে যেতে যেতে রোগী মারা যায় সেই ভোলায় কেনো মেডিক্যাল কলেজ থাকবে না-এমনটা হতে পারে না।’
পথসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, সদস্য আরিফুল রহমান তুহিন, আব্দুল আল মামুন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এম এ নাঈম ও ভোলা সমন্বয়ক ইসরাফিল হোসাইন জাবির।