বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ৫টি দাবি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো- সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর সংশোধ, বাণিজ্যিক মোটরযানের ইকোনোমিক লাইফ ২০ ও ২৫ বছর থেকে বৃদ্ধিকরণ, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন অপসারণের সহায়ক হিসাবে রিকন্ডিশন বাণিজ্যিক যানবাহন অপসারণের সহায়ক হিসাবে রকন্ডিশন যানবাহনের আমদানির মেয়াদ ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ১২ বছর করতে হবে, বাজেটে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলকারী যানবাহনের উপর দ্বিগুণ অগ্রীম আয়কর কমাতে হবে, একই সাথে আয়কর ট্যাক্স ফাইলে অ্যাসেসমেন্ট করার পর জমাকৃত অর্থ বেশি হলে ফেরত দেয়ার নিয়ম চালু করা এবং ইন্সুরেন্স বা বীমা প্রথায় পূর্বের নিয়মে বাতিল করা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই দাবিগুলো না মানলে পরিবহন সেক্টরে ধর্মঘটের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
রোববার দুপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে মালিক ও শ্রমিকদের যৌথ এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে সারাদেশ থেকে পরিবহনের মালিক শ্রমিক নেতারা যোগদান করে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো তুলে ধরে সরকারের প্রতি দাবিগুলো প্রস্তাব করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. কফিল উদ্দিন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাড. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। সভায় সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাড. শিমুল বিশ্বাস দাবিগুলোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন যে আইন সে আইনটি একটি প্রতিশোধপরায়ন, নীপিড়নমূলক এবং ক্ষতিকর। যে আইনে মালিক এবং শ্রমিকের উপরে প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে। এ আইনটি যাতে সংশোধন হয় এজন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের ৫জন উপদেষ্টা পবিহন সেক্টরের সাথে মিটিংয়ে আমাদের দাবির বিষয়ে একমত হয়েছেন। কিন্তু ওই আইনটা পরিবর্তন না হবার কারণে পুলিশ, ট্রাফিক, বিআরটিএ, শ্রমদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আমাদের পরিবহন সেক্টরের মালিক, শ্রমিককে নানাভাবে হয়রানি করছে।
দ্বিতীয়টা হলো, বিগত সরকারের আইনে বাণিজ্যিক মোটরযানের মধ্যে বাসের ইকোনোমিক লাইফ ২০ এবং ট্রাকের লাইফ ২৫ বছর করা হয়েছে। এ আইনটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরিবহন সেক্টরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। এতে করে ৭০ ভাগ গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। এত গাড়ি ডাম্পিং করার জায়গাও বাংলাদেশে নেই। তাছাড়া এত গাড়ি এক সাথে বন্ধ হয়ে গেলে পরিবহন সেক্টরে এমনিতেই অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই আইনের যদি প্রয়োগ হয়, তাহলে মালিক এবং শ্রমিকদের ধর্মঘট করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছি মোটরযানের মধ্যে ইকোনোমিক বাসের লাইফ ২০ বছরের জায়গায় ২৫ বছর আর ট্রাকের মেয়াদ হবে ২৫ এর স্থলে ৩০ বছর করা হোক। এটা নিয়ে উপদেষ্টগাগণ পর্যালোচনা করছেন। আমরা আশা করছি তারা আমাদের যৌক্তিক প্রস্তাব মেনে নিবেন। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টার বয়স ৮২ বছর। উনি এখনও সক্ষম বলে দেশ চালাচ্ছেন, অথচ ৭০ বছর বয়সী অনেকেই ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারেন না। এটাই বাস্তবতা। আমাদের কথা হলো, যে গাড়িগুলোর যন্ত্রাংশ গাড়িগুলোকে সচল রাখার মতো উপযুক্ত সেগুলো চলবে, বাকিগুলো চলবে না।
পুরাতন গাড়ির পরিবেশ দূষণ বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, পরিবেশ দূষণে একটা গাড়ির তিনটি ফ্যাক্টর কাজ করে। সেগুলো হলো, লুব্রিকেন্ট, মোবিল, ও ইঞ্জিন। এই তিনটা জিনিস ঠিক থাকলে কালো ধোঁয়া হয় না। বিআরটিএ পরীক্ষা করে দেখুক, যেসব গাড়িতে তারা এসব ত্রুটি পাবে সেগুলো ফিটনেস তারা দিবে না। কিন্তু যেগুলো গাড়ির ফিটনেস আছে সেগুলো বয়সের ভিত্তিতে চলাচলের অযোগ্য ঘোষণা করা ঠিক হবে না।
শিমুল বিশ্বাস বলেন, বিদেশি গাড়ি আমদানি করার ব্যাপারে বিগত সরকারের আমলে শুধুমাত্র একটা দেশকে ফেভার করার জন্য একটা আইন করা হয়েছিল। সেটাকে ওপেন করে দিতে হবে। জাপানের গাড়ি, ইংল্যান্ড ইউরোপ এবং জার্মানীর গাড়ি-দুনিয়াজুড়ে যাদের সুনাম রয়েছে-সেগুলো আনার বিষয়ে আমরা ৫ বছরের জায়গায় ন্যূনতম ১২ বছরের সময় চাই। আরেকটা হচ্ছে আয়কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। এখন ব্যবসা নেই। এটা কমানো জরুরি।
তিনি বলেন, আজকের এই জরুরী সভা ডাকার উদ্দেশ্যই হলো, বিগত পলায়নকৃত সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে মৌখিকভাবে দাবি করেছি, কোনো অস্থিরতা তৈরি না করে পরিবহন সেক্টরের মালিক ও শ্রমিকদের সাথে বসে এই উদ্ভুত পরিস্থিতির নিরসন না করলে বাধ্য হয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই সেক্টরে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা মনে করি উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবিগুলো মেনে নিলে দেশের পরিবহন সেক্টরে আর কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না।
সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি এমএ বাতেন, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এ এস এম আহম্মেদ খোকন, প্রচার সম্পাদক সাইদুর রহমান বাবুসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলার বাস ও ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিও দেখতে এখানে ক্নিক করুন: https://www.youtube.com/watch?v=afQDcT62Om4