Dhaka মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ এখন অতটা খারাপ নেই: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ এখন ‘অতটা খারাপ নেই’ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডলারের সংকট এখন ঠিক সেরকম নেই, রপ্তানি আয়ও খুব একটা কমেনি বলেও জানান তিনি।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে গেলাম। ফলে আমাদের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের কিছু খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হতে হয়েছে, কিছুটা সংকুচিত করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা এখন অতটা খারাপ নেই। ডলারের সংকট যথেষ্ট ছিল, এখন ঠিক সেরকম সংকট নেই।

তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা মনিটরিং বাড়িয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে যতটা প্রয়োজন নয়, তার চেয়ে বেশি দিয়েও অনেকেই এলসি খোলে, কিন্তু ওই টাকাটা ফেরত আসে না। এ কারণে সরকার পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্লুমবার্গের মূল্য তালিকা দেখে, তা মনিটর করে এলসি খুলতে দেয়।

সরকারপ্রধান বলেন, আগে যেভাবে যখন-তখন এলসি খোলা হতো, এখন ইচ্ছেমতো হচ্ছে না, সেটাতে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি আয় খুব একটা কমেনি। যেসব দেশে আমরা রপ্তানি করি, এমনকি যেগুলো খুব ধনী দেশ, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, বাজার সংকুচিত হয়েছে, সেখানে অর্ডার কমেছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা খুব চাপে আছে, তাদের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তারই ফলে হয়তো কিছুটা কমেছে।

তিনি বলেন, রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিকল্প বাজার খুঁজে বেড়ানো, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে ব্যবস্থা নিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কৃষক যথাযথ উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পেলে সমস্যা হবে। মূল্য বাড়লে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ কষ্ট পাবে।

আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবদুল্লাহর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর ২৮ অক্টোবর থেকে এ ধরনের সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ছয় শতাধিক যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৪টি যাত্রীবাহী বাস, ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ড ভ্যান বা মালবাহী লরি বা কনটেইনার, তিনটি সিএনজি, চারটি প্রাইভেট কার ও ১১টি পিকআপ ভ্যান রয়েছে। পাঁচটি ট্রেন হলো- যমুনা এক্সপ্রেস: ঢাকা কমিউটার, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও টাঙ্গাইল কমিউটার। এ ছাড়া রয়েছে ১৫টি মোটরসাইকেল, তিনটি লেগুনা, একটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস (মধ্যরামপুরা, ফেনী) ও একটি অটোরিকশা। এ ছাড়া একটি উচ্চ বিদ্যালয়, ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি বসতঘর, একটি বৌদ্ধ মন্দির একটি নৌকাসহ সর্বমোট ৩২৮টি যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর হরতাল-অবরোধে ড্রাইভার, হেলপার, পুলিশ, বিজিবি, শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু লোক নিহত হয়েছেন, আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। বিএনপি ক্যাডাররা অসংখ্য যানবাহন জ্বালিয়ে দিয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতার ঘটনায় সারাদেশে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন নয়জন। বিজিবির দুইজন আহত হয়েছেন এবং একটি রিকুইজিশন করা যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। বিআরটিসি বাস ডিপোর বাস রক্ষা করতে গিয়ে এক আনসার সদস্য ইট পাটকেলের আঘাতে আহত হন। দুই আনসার সদস্য হোসেন আলী ও সুমন আলী বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন। তাদের বাহিনীর পক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবা ও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নি-সন্ত্রাস, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশে দক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রয়েছে। হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আইনি কার্যক্রম চলমান।

নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি বলেন, জাতির গর্ব ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা বহুমুখী সেতু (পদ্মা নদীর ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট বাংলাদেশে নির্মিত সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু)। যা ২০২২ সালের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এবং একই বছরের ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে সেতু পারাপারকারী যানবাহন থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। উদ্বোধনের পরে এক বছরেই (২০২৩ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত) আয় হয়েছে প্রায় ৭৯৮ কোটি ২৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং দৈনিক গড় আয় প্রায় দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা।

সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া বছরে শ্রমশক্তির প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশের কর্মসংস্থান ঘটেছে। এই সেতু নির্মাণের ফলে সারাদেশে দশমিক ৮৪ শতাংশ দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি- দক্ষিণাঞ্চলে ২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া ট্রান্স এশিয়ান রেল ও সড়ক এ সেতুর মাধ্যমেই যুক্ত হবে। বাণিজ্য, শিল্পায়ন ও পর্যটন ত্বরান্বিত হবে। এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক জীবনচিত্র পাল্টে গিয়ে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতির অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বছরে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ দামের পণ্য ও সেবা উৎপাদন/রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এর ফলে জনসাধারণের আয় তথা ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের ৪১টি দেশ থেকে ১২৬ জন পর্যবেক্ষক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে আসেন। সরকারিভাবে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৪৫ জন এবং স্বাধীনভাবে ৭৯ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ১৮ জন নির্বাচন কমিশনার ও তাদের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ৮৪টি সংস্থার ২০ হাজার ৭৭৩ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী এবং ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সব প্রশাসনিক, আর্থিক, আইনি, রেগুলেটরি ও লেজিসলেটিভ এবং নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্নকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম জানতে চান, টানা ১৫ বছরসহ মোট ২০ বছর চার মেয়াদে দেশ পরিচালনার পর আগামী পাঁচ বছর দেশ পরিচালনায় সরকারের পরিকল্পনা কী?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদগুলোর সাফল্য তুলে ধরেন। বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ— এই চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে টেকসই ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রসারের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও দারিদ্র্যশূন্য রাষ্ট্রে পরিণত করা।

সংসদ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৩) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এসিব পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্প ২০২১ সামনে রেখে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১)’ প্রণয়ন করা হয়। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা। এই ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে সরকার মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) গ্রহণ ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে ২০১৫ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে গড়ে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা, উন্নত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষি, মৎস্য, শিল্প, বনায়ন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশ প্রভৃতি বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বিত শতবর্ষী মহাপরিকল্পনা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণয়ন করেছে। অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশজ এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুমোদন দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই পরিকল্পনা এরই মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই পরিকল্পনার রূপকল্প হচ্ছে নিরাপদ, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাত সহিষ্ণু সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলা’।

রূপকল্প-২০২১-এর পর রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে ‘বাংলাদে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, এ পরিকল্পনার ভিত্তিমূলে রয়েছে দুটি প্রধান অভীষ্ট— ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা, যেখানে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি এবং বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা, যেখানে দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের ঘটনা। এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ধারাবাহিক চারটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে, যার প্রথমটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন। এ পরিকল্পনা প্রণয়নে রূপকল্প-২০৪১-এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর মূল লক্ষ্যসমূহ, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সংসদ নেতা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিষয়টি মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জিইডি নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২৬-২০৩০) প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

উড়োজাহাজ সংকটে কুয়েত ও দুবাইগামী দুই ফ্লাইট বাতিল

বাংলাদেশ এখন অতটা খারাপ নেই: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৯:০৫:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ এখন ‘অতটা খারাপ নেই’ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডলারের সংকট এখন ঠিক সেরকম নেই, রপ্তানি আয়ও খুব একটা কমেনি বলেও জানান তিনি।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে গেলাম। ফলে আমাদের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের কিছু খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হতে হয়েছে, কিছুটা সংকুচিত করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা এখন অতটা খারাপ নেই। ডলারের সংকট যথেষ্ট ছিল, এখন ঠিক সেরকম সংকট নেই।

তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা মনিটরিং বাড়িয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে যতটা প্রয়োজন নয়, তার চেয়ে বেশি দিয়েও অনেকেই এলসি খোলে, কিন্তু ওই টাকাটা ফেরত আসে না। এ কারণে সরকার পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্লুমবার্গের মূল্য তালিকা দেখে, তা মনিটর করে এলসি খুলতে দেয়।

সরকারপ্রধান বলেন, আগে যেভাবে যখন-তখন এলসি খোলা হতো, এখন ইচ্ছেমতো হচ্ছে না, সেটাতে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি আয় খুব একটা কমেনি। যেসব দেশে আমরা রপ্তানি করি, এমনকি যেগুলো খুব ধনী দেশ, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, বাজার সংকুচিত হয়েছে, সেখানে অর্ডার কমেছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা খুব চাপে আছে, তাদের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তারই ফলে হয়তো কিছুটা কমেছে।

তিনি বলেন, রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিকল্প বাজার খুঁজে বেড়ানো, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে ব্যবস্থা নিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কৃষক যথাযথ উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পেলে সমস্যা হবে। মূল্য বাড়লে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ কষ্ট পাবে।

আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবদুল্লাহর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর ২৮ অক্টোবর থেকে এ ধরনের সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ছয় শতাধিক যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৪টি যাত্রীবাহী বাস, ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ড ভ্যান বা মালবাহী লরি বা কনটেইনার, তিনটি সিএনজি, চারটি প্রাইভেট কার ও ১১টি পিকআপ ভ্যান রয়েছে। পাঁচটি ট্রেন হলো- যমুনা এক্সপ্রেস: ঢাকা কমিউটার, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও টাঙ্গাইল কমিউটার। এ ছাড়া রয়েছে ১৫টি মোটরসাইকেল, তিনটি লেগুনা, একটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস (মধ্যরামপুরা, ফেনী) ও একটি অটোরিকশা। এ ছাড়া একটি উচ্চ বিদ্যালয়, ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি বসতঘর, একটি বৌদ্ধ মন্দির একটি নৌকাসহ সর্বমোট ৩২৮টি যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর হরতাল-অবরোধে ড্রাইভার, হেলপার, পুলিশ, বিজিবি, শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু লোক নিহত হয়েছেন, আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। বিএনপি ক্যাডাররা অসংখ্য যানবাহন জ্বালিয়ে দিয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতার ঘটনায় সারাদেশে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন নয়জন। বিজিবির দুইজন আহত হয়েছেন এবং একটি রিকুইজিশন করা যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। বিআরটিসি বাস ডিপোর বাস রক্ষা করতে গিয়ে এক আনসার সদস্য ইট পাটকেলের আঘাতে আহত হন। দুই আনসার সদস্য হোসেন আলী ও সুমন আলী বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন। তাদের বাহিনীর পক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবা ও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নি-সন্ত্রাস, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশে দক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রয়েছে। হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আইনি কার্যক্রম চলমান।

নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি বলেন, জাতির গর্ব ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা বহুমুখী সেতু (পদ্মা নদীর ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট বাংলাদেশে নির্মিত সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু)। যা ২০২২ সালের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এবং একই বছরের ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে সেতু পারাপারকারী যানবাহন থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। উদ্বোধনের পরে এক বছরেই (২০২৩ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত) আয় হয়েছে প্রায় ৭৯৮ কোটি ২৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং দৈনিক গড় আয় প্রায় দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা।

সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া বছরে শ্রমশক্তির প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশের কর্মসংস্থান ঘটেছে। এই সেতু নির্মাণের ফলে সারাদেশে দশমিক ৮৪ শতাংশ দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি- দক্ষিণাঞ্চলে ২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া ট্রান্স এশিয়ান রেল ও সড়ক এ সেতুর মাধ্যমেই যুক্ত হবে। বাণিজ্য, শিল্পায়ন ও পর্যটন ত্বরান্বিত হবে। এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক জীবনচিত্র পাল্টে গিয়ে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতির অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বছরে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ দামের পণ্য ও সেবা উৎপাদন/রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এর ফলে জনসাধারণের আয় তথা ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের ৪১টি দেশ থেকে ১২৬ জন পর্যবেক্ষক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে আসেন। সরকারিভাবে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৪৫ জন এবং স্বাধীনভাবে ৭৯ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ১৮ জন নির্বাচন কমিশনার ও তাদের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ৮৪টি সংস্থার ২০ হাজার ৭৭৩ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী এবং ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সব প্রশাসনিক, আর্থিক, আইনি, রেগুলেটরি ও লেজিসলেটিভ এবং নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্নকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম জানতে চান, টানা ১৫ বছরসহ মোট ২০ বছর চার মেয়াদে দেশ পরিচালনার পর আগামী পাঁচ বছর দেশ পরিচালনায় সরকারের পরিকল্পনা কী?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদগুলোর সাফল্য তুলে ধরেন। বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ— এই চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে টেকসই ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রসারের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও দারিদ্র্যশূন্য রাষ্ট্রে পরিণত করা।

সংসদ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৩) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এসিব পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্প ২০২১ সামনে রেখে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১)’ প্রণয়ন করা হয়। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা। এই ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে সরকার মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) গ্রহণ ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে ২০১৫ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে গড়ে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা, উন্নত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষি, মৎস্য, শিল্প, বনায়ন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশ প্রভৃতি বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বিত শতবর্ষী মহাপরিকল্পনা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণয়ন করেছে। অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশজ এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুমোদন দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই পরিকল্পনা এরই মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই পরিকল্পনার রূপকল্প হচ্ছে নিরাপদ, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাত সহিষ্ণু সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলা’।

রূপকল্প-২০২১-এর পর রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে ‘বাংলাদে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, এ পরিকল্পনার ভিত্তিমূলে রয়েছে দুটি প্রধান অভীষ্ট— ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা, যেখানে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি এবং বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা, যেখানে দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের ঘটনা। এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ধারাবাহিক চারটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে, যার প্রথমটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন। এ পরিকল্পনা প্রণয়নে রূপকল্প-২০৪১-এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর মূল লক্ষ্যসমূহ, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সংসদ নেতা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিষয়টি মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জিইডি নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২৬-২০৩০) প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।