আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে নেপাল। ভারতের পর তৃতীয় কোনো দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রথমবার বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করেছে ‘হিমালয়কন্যা’খ্যাত রাষ্ট্রটি। যদিও এ বছর একদিনই মিলবে নেপালের বিদ্যুৎ।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানো শুরু করে নেপাল।
অনুষ্ঠানে ভারতের বিদ্যুৎ, আবাসন ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী মনোহর লাল, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. ফাওজুল কবির খান এবং নেপালের জ্বালানি, জলসম্পদ ও সেচমন্ত্রী দীপক খাড়কা উপস্থিত ছিলেন।
চীনের সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে ভারতের সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে বাংলাদেশে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ তিন দেশের কর্মকর্তারা কাঠমান্ডুতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে দুপুরে সুইচ চেপে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্বোধন করেন।
গত অক্টোবরে নেপালে এই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র চন্দন কুমার ঘোষ বলেন, চুক্তি অনুসারে এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে কেবল একদিনই বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে নেপাল। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি আবার শুরু হবে ২০২৫ সালের ১৫ জুন।
ওই চুক্তি মোতাবেক, পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছরের ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নেপাল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। অর্থাৎ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নেপালের বিদ্যুৎ মিলবে বাংলাদেশে।
দুদেশের মধ্যে সরাসরি বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই বিধায় ভারতের সঞ্চালন লাইন হয়ে আসছে এই বিদ্যুৎ।
চন্দন কুমার ঘোষ জানান, বাংলাদেশের গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত ভারতের গ্রিডে সঞ্চালন সক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকায় নেপাল মাত্র ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠাতে পারছে। আরও সঞ্চালন লাইন তৈরি হলে সামনের বছরগুলোতে আরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ আছে।
বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত জলবায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে নেপাল। সেজন্য ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে তারা।
২০২৩ সালের মে মাসে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের (প্রচণ্ড) ভারত সফরের সময় এই বিদ্যুৎ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সফরে দুই দেশ আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশে সরবরাহ করার পরিকল্পনা হয়েছিল।
২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে একটি ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথোরিটি (এনইএ), -বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি), এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম (এনটিপিসি)।
এই চুক্তি বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করার পথ সুগম করে এবং উপ-আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে নয়, বরং অঞ্চলগুলোর মধ্যে আন্তযোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধির একটি বড় পদক্ষেপ।
মূলত নেপাল তাদের উদ্বৃত্ত জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবহন অঞ্চলে বিদ্যুৎ সুষম বণ্টনের একটি কার্যকর উদাহরণ হয়ে থাকবে এটি। এই বিদ্যুৎ সরবরাহ উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে জ্বালানি সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাজারের উন্নয়ন এবং নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
নেপাল থেকে আসা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎয়ের দাম পড়বে ইউনিটপ্রতি ৯ টাকার কম। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনটি দেশই উপকৃত হবে। বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে, নেপাল তাদের জলবিদ্যুৎ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারবে এবং ভারত আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করে প্রতিবেশী দেশগুলো।