Dhaka শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি বিশ্ব নেতাদের পূর্ণ সমর্থন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। বৈঠকে তারা বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে অধ্যাপক ইউনূসের হোটেল স্যুইটে এই বৈঠক হয়। লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবার্গার নেতৃত্বে এই উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ভিকে-ফ্রেইবার্গা নিজামী গাঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতিও, যা ১১ শতকের বিখ্যাত পারস্য কবির নামে প্রতিষ্ঠিত।

এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্তোয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো জোসিপোভিচ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন- কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহসভাপতি ও এনজিআইসি সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিনিধিরা।

বক্তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব ও দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার আজীবন নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। এক নেতা বলেন, আমরা এখানে এসেছি আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে। আমরা সম্পূর্ণভাবে আপনার পাশে আছি।

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে স্বীকার করেন নেতারা। তবে তারা এ-ও উল্লেখ করেন যে দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্ব্যবস্থা, দুর্নীতি ও শোষণের কারণে দেশটি এখনো গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে।

কয়েকজন নেতা প্রতিশ্রুতি দেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করবেন। আরেকজন নেতা বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আপনার যেকোনো দিকনির্দেশনা বা সহায়তার প্রয়োজন হলে জানাবেন। অনেক কিছু করার আছে।’

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফর করা কেরি কেনেডি দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, ‘মানবাধিকার খাতে আপনাদের সাফল্য সত্যিই অসাধারণ।’

জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেল্যান ভারভির জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে। এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, আপনাদের যখনই প্রয়োজন আমরা আছি।

অভূতপূর্ব এ সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। আপনাদের এভাবে একত্রিত হয়ে আমাদের প্রতি সমর্থন জানানো- অবিশ্বাস্য। আমি সত্যিই মুগ্ধ।

ড. ইউনূস তার প্রশাসনের মুখোমুখি হওয়া সমস্যাগুলোকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, এ দেশ ১৫ বছরব্যাপী একটা ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯।

জনসাধারণের প্রত্যাশা ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ রাতারাতি অলৌকিক পরিবর্তন আশা করছে, যদিও আমাদের সম্পদ সীমিত। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নও পূরণ করতে হবে-তারা একটি নতুন বাংলাদেশ খুঁজছে।’

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমাদের আপনাদের দিকনির্দেশনা দরকার। আপনাদের পরামর্শ, সমর্থন এবং নৈতিক শক্তি আমাদের জন্য অমূল্য হবে।’

এ সময় এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গজারিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শিক্ষার্থীদের

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি বিশ্ব নেতাদের পূর্ণ সমর্থন

প্রকাশের সময় : ১২:২০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। বৈঠকে তারা বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে অধ্যাপক ইউনূসের হোটেল স্যুইটে এই বৈঠক হয়। লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবার্গার নেতৃত্বে এই উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ভিকে-ফ্রেইবার্গা নিজামী গাঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতিও, যা ১১ শতকের বিখ্যাত পারস্য কবির নামে প্রতিষ্ঠিত।

এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্তোয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো জোসিপোভিচ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন- কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহসভাপতি ও এনজিআইসি সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিনিধিরা।

বক্তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব ও দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার আজীবন নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। এক নেতা বলেন, আমরা এখানে এসেছি আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে। আমরা সম্পূর্ণভাবে আপনার পাশে আছি।

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে স্বীকার করেন নেতারা। তবে তারা এ-ও উল্লেখ করেন যে দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্ব্যবস্থা, দুর্নীতি ও শোষণের কারণে দেশটি এখনো গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে।

কয়েকজন নেতা প্রতিশ্রুতি দেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করবেন। আরেকজন নেতা বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আপনার যেকোনো দিকনির্দেশনা বা সহায়তার প্রয়োজন হলে জানাবেন। অনেক কিছু করার আছে।’

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফর করা কেরি কেনেডি দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, ‘মানবাধিকার খাতে আপনাদের সাফল্য সত্যিই অসাধারণ।’

জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেল্যান ভারভির জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে। এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, আপনাদের যখনই প্রয়োজন আমরা আছি।

অভূতপূর্ব এ সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। আপনাদের এভাবে একত্রিত হয়ে আমাদের প্রতি সমর্থন জানানো- অবিশ্বাস্য। আমি সত্যিই মুগ্ধ।

ড. ইউনূস তার প্রশাসনের মুখোমুখি হওয়া সমস্যাগুলোকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, এ দেশ ১৫ বছরব্যাপী একটা ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯।

জনসাধারণের প্রত্যাশা ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ রাতারাতি অলৌকিক পরিবর্তন আশা করছে, যদিও আমাদের সম্পদ সীমিত। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নও পূরণ করতে হবে-তারা একটি নতুন বাংলাদেশ খুঁজছে।’

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমাদের আপনাদের দিকনির্দেশনা দরকার। আপনাদের পরামর্শ, সমর্থন এবং নৈতিক শক্তি আমাদের জন্য অমূল্য হবে।’

এ সময় এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।