Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (১ জুন) রাজধানীর মাল্টি পারপাস হলে চীনা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত দিনব্যাপী চীন-বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

চীনা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন। এখানে তৈরি পোশাক, জ্বালানি, কৃষি, পাট, তথ্য প্রযুক্তি সম্ভাবনাময় শিল্প।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বেশকিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হলেও সেগুলো খালি পড়ে ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সেখানে গবাদি পশু চড়ানোর কাজ হতো। ব্যাপক আকারে দুর্নীতি, স্বৈরচারতন্ত্র বিনিয়োগকারীদের বিমুখ করেছে। লাখ লাখ তরুণের নেতৃত্বে হওয়া জুলাই গণঅভভ্যুত্থান সেই দিনগুলোর ইতি টেনেছে। তারা নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইতিহাসে আমরা এই সুযোগ পেয়েছি, সুতরাং অনুগ্রহ করে আপনারা এই ইতিহাসের অংশ হন। আমাদের সঙ্গে এই দেশের ইতিহাসের অংশ হন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বেইজিং সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্টকে চীনা কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কারণ, আমরা এই দেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত এবং অর্থনীতির একটা হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। চীনের প্রেসিডেন্ট তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমি আশা করি নাই, এতো দ্রুত এতো বড় একটা প্রতিনিধিদল দেশে আসবে। চীনা কোম্পানিরা বিশ্বের প্রধান ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠান এবং আমরা আপনাদের অংশীদার হতে চাই। আপনাদের বড় আকারে বিনিয়োগ আমাদের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন করতে পারে। আমাদের লাখ লাখ তরুণের দক্ষতা কাজে লাগাতে প্রচুর কর্মসংস্থানের প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে আমাদের সরকার প্রথমেই সংস্কার কাজ শুরু করেছে। আমাদের নীতিগত সংস্কার বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করার জন্য সাজানো হয়েছে।

তিনি বলেন, পাট নিয়ে আলাপ বাংলাদেশের জন্য অনেক আবেগি বিষয়। এই দেশ প্রাকৃতিক এই আঁশ বিপুল আকারে উৎপাদন করে। যখন আপনারা পাট এবং পাটজাত পণ্য নিয়ে কথা বলেন তখন এটি এই দেশের জন্য অনেক বড় বিষয়। আমরা পাটের মধ্যে একটা ভবিষ্যৎ দেখতে পারি কারণ পাট দিয়ে এতদিন শুধু বস্তা তৈরি করা হতো। বিশ্বের একটি প্রাকৃতিক আঁশকে আমরা সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা একসঙ্গে পাট নিয়ে একটি নতুন সূচনা করতে পারি এটিকে অর্থনীতিতে তার সঠিক জায়গায় স্থাপন করে। পাটের মতো আরও অনেক পণ্য আছে যেগুলো বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। জামদানির মতো আরও অনেক পণ্য আছে যেগুলো থেকে আরও অনেক ভিন্ন পণ্য তৈরি করা যায়। কিন্তু এটি শুধু শাড়ি বানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মসলিনকেও এভাবে ফিরিয়ে আনা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আকাশ ছুঁতে পারার মতো একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে। এই সক্ষমতা আমাদের আছে।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১০ মাস আগে গঠন হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের কাজের ফল ইতোমধ্যে পাওয়া শুরু হয়েছে। এপ্রিলে আমরা একটি সফল বিজনেস সামিত আয়োজন করেছি। পাঁচ দিনের এই মিলনমেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন কোম্পানি এখানে এসেছিল। এখন আবার পুনরায় চীন থেকে একটি বড় ব্যবসায়ী দল এসেছে। বিনিয়োগ সম্মেলনে একটি চীনা টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান একাই ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভভ্যুথানের পরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পুনর্গঠন করেছে। এখানে আমরা প্রাইভেট সেক্টর থেকে মেধাবিদের নিয়ে এসেছি। নতুন এই সংস্থা আপনাদের বিনিয়োগের যাত্রায় সহযোগিতা করবে। আমি চীনা বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাই বাংলাদেশকে নিজেদের ঘর হিসেবে তৈরি করুন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের নিচে। এই তরুণরা কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

তরুণদের কাজ লাগানোর জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান ড. ইউনূস।

বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও বাজার বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দিতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।বাংলাদেশ ও চীন সরকার যৌথভাবে সম্মেলনের আয়োজন করেছে ।

সম্মেলনে চীনের ১শ’ কোম্পানির প্রায় ২৫০ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেছেন। এতে অন্যদের মধ্যে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বক্তব্য রাখেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশের সময় : ০২:২২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (১ জুন) রাজধানীর মাল্টি পারপাস হলে চীনা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত দিনব্যাপী চীন-বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

চীনা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন। এখানে তৈরি পোশাক, জ্বালানি, কৃষি, পাট, তথ্য প্রযুক্তি সম্ভাবনাময় শিল্প।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বেশকিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হলেও সেগুলো খালি পড়ে ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সেখানে গবাদি পশু চড়ানোর কাজ হতো। ব্যাপক আকারে দুর্নীতি, স্বৈরচারতন্ত্র বিনিয়োগকারীদের বিমুখ করেছে। লাখ লাখ তরুণের নেতৃত্বে হওয়া জুলাই গণঅভভ্যুত্থান সেই দিনগুলোর ইতি টেনেছে। তারা নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইতিহাসে আমরা এই সুযোগ পেয়েছি, সুতরাং অনুগ্রহ করে আপনারা এই ইতিহাসের অংশ হন। আমাদের সঙ্গে এই দেশের ইতিহাসের অংশ হন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বেইজিং সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্টকে চীনা কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কারণ, আমরা এই দেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত এবং অর্থনীতির একটা হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। চীনের প্রেসিডেন্ট তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমি আশা করি নাই, এতো দ্রুত এতো বড় একটা প্রতিনিধিদল দেশে আসবে। চীনা কোম্পানিরা বিশ্বের প্রধান ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠান এবং আমরা আপনাদের অংশীদার হতে চাই। আপনাদের বড় আকারে বিনিয়োগ আমাদের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন করতে পারে। আমাদের লাখ লাখ তরুণের দক্ষতা কাজে লাগাতে প্রচুর কর্মসংস্থানের প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে আমাদের সরকার প্রথমেই সংস্কার কাজ শুরু করেছে। আমাদের নীতিগত সংস্কার বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান তৈরি করার জন্য সাজানো হয়েছে।

তিনি বলেন, পাট নিয়ে আলাপ বাংলাদেশের জন্য অনেক আবেগি বিষয়। এই দেশ প্রাকৃতিক এই আঁশ বিপুল আকারে উৎপাদন করে। যখন আপনারা পাট এবং পাটজাত পণ্য নিয়ে কথা বলেন তখন এটি এই দেশের জন্য অনেক বড় বিষয়। আমরা পাটের মধ্যে একটা ভবিষ্যৎ দেখতে পারি কারণ পাট দিয়ে এতদিন শুধু বস্তা তৈরি করা হতো। বিশ্বের একটি প্রাকৃতিক আঁশকে আমরা সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা একসঙ্গে পাট নিয়ে একটি নতুন সূচনা করতে পারি এটিকে অর্থনীতিতে তার সঠিক জায়গায় স্থাপন করে। পাটের মতো আরও অনেক পণ্য আছে যেগুলো বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। জামদানির মতো আরও অনেক পণ্য আছে যেগুলো থেকে আরও অনেক ভিন্ন পণ্য তৈরি করা যায়। কিন্তু এটি শুধু শাড়ি বানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মসলিনকেও এভাবে ফিরিয়ে আনা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আকাশ ছুঁতে পারার মতো একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে। এই সক্ষমতা আমাদের আছে।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১০ মাস আগে গঠন হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের কাজের ফল ইতোমধ্যে পাওয়া শুরু হয়েছে। এপ্রিলে আমরা একটি সফল বিজনেস সামিত আয়োজন করেছি। পাঁচ দিনের এই মিলনমেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন কোম্পানি এখানে এসেছিল। এখন আবার পুনরায় চীন থেকে একটি বড় ব্যবসায়ী দল এসেছে। বিনিয়োগ সম্মেলনে একটি চীনা টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান একাই ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভভ্যুথানের পরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পুনর্গঠন করেছে। এখানে আমরা প্রাইভেট সেক্টর থেকে মেধাবিদের নিয়ে এসেছি। নতুন এই সংস্থা আপনাদের বিনিয়োগের যাত্রায় সহযোগিতা করবে। আমি চীনা বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাই বাংলাদেশকে নিজেদের ঘর হিসেবে তৈরি করুন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের নিচে। এই তরুণরা কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

তরুণদের কাজ লাগানোর জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান ড. ইউনূস।

বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও বাজার বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দিতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।বাংলাদেশ ও চীন সরকার যৌথভাবে সম্মেলনের আয়োজন করেছে ।

সম্মেলনে চীনের ১শ’ কোম্পানির প্রায় ২৫০ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেছেন। এতে অন্যদের মধ্যে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বক্তব্য রাখেন।