Dhaka মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাঁশের সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে, দুর্ভোগে ২৫ হাজার মানুষ

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের রামনাথেরপাড়া এলাকায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু স্থানীয়দের কোনো কাজে আসছে না। প্রায় এক বছর আগে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড) নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের মই ব্যবহার করে পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন আশপাশের পাঁচ গ্রামের প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের কষ্টের শেষ নাই। ১০ মাস আগে ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু সংযোগ সড়ক না হওয়ায় আজো এটি ব্যবহার করতে পারছি না। ঠিকাদার রাস্তার কাজ না করেই চলে গেছে। এখন এই ব্রিজে উঠতে আমাদের বাঁশ বেয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। দেশে এতকিছু হয়, তবু আমাদের ভোগান্তি কমে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, হেরিংবন সড়কের মাত্র ১০০ মিটার দূরে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী। বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা সেতুর দুই পাশে বাঁশের মই বসিয়েছেন। নানকর, ফতেপুর, রামনাথের পাড়া, সদূরপাড়া ও কাঠালী গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ মই বেয়ে চলাচল করছেন। ছোট-বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষিপণ্য পরিবহনেও মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় দলিল লেখক ধনেশ্বর রায় বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না। বৃষ্টির সময় বাঁশের মই পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন আমরা নিজের খরচে সাঁকো বানাই। ভারি জিনিসপত্র তো নিয়েই যাওয়া যায় না।

গ্রামবাসী জানান, বেশ কিছু শিক্ষার্থী মই বেয়ে ওঠার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে মই পিচ্ছিল হয়ে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়, যে কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।

সেতু নির্মাণের ঠিকাদার মেসার্স মুনতাহা কনস্ট্রাকশনের আব্দুর রহিম বলেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হবে। ব্রিজের পাশে পানি থাকায় সংযোগ সড়কের কাজ করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুজ্জামান সরকার জানান, সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি। আমরা কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাগাদা দিচ্ছি।

মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকৌশলী বাদশা আলমগীর জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে ব্রিজ-কালভার্টের কাজগুলো পিআইও দেখেন। কাজ বুঝে নিয়ে ঠিকাদারকে বিল দেবে ওই দপ্তর। এখানে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, আগের ইউএনও স্যার চলে গেছেন। আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। বিষয়টি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও পিআইওর সঙ্গে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বাঁশের সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে, দুর্ভোগে ২৫ হাজার মানুষ

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৪:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের রামনাথেরপাড়া এলাকায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু স্থানীয়দের কোনো কাজে আসছে না। প্রায় এক বছর আগে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড) নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের মই ব্যবহার করে পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন আশপাশের পাঁচ গ্রামের প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের কষ্টের শেষ নাই। ১০ মাস আগে ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু সংযোগ সড়ক না হওয়ায় আজো এটি ব্যবহার করতে পারছি না। ঠিকাদার রাস্তার কাজ না করেই চলে গেছে। এখন এই ব্রিজে উঠতে আমাদের বাঁশ বেয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। দেশে এতকিছু হয়, তবু আমাদের ভোগান্তি কমে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, হেরিংবন সড়কের মাত্র ১০০ মিটার দূরে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী। বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা সেতুর দুই পাশে বাঁশের মই বসিয়েছেন। নানকর, ফতেপুর, রামনাথের পাড়া, সদূরপাড়া ও কাঠালী গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ মই বেয়ে চলাচল করছেন। ছোট-বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষিপণ্য পরিবহনেও মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় দলিল লেখক ধনেশ্বর রায় বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না। বৃষ্টির সময় বাঁশের মই পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন আমরা নিজের খরচে সাঁকো বানাই। ভারি জিনিসপত্র তো নিয়েই যাওয়া যায় না।

গ্রামবাসী জানান, বেশ কিছু শিক্ষার্থী মই বেয়ে ওঠার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে মই পিচ্ছিল হয়ে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়, যে কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।

সেতু নির্মাণের ঠিকাদার মেসার্স মুনতাহা কনস্ট্রাকশনের আব্দুর রহিম বলেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হবে। ব্রিজের পাশে পানি থাকায় সংযোগ সড়কের কাজ করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুজ্জামান সরকার জানান, সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি। আমরা কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাগাদা দিচ্ছি।

মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকৌশলী বাদশা আলমগীর জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে ব্রিজ-কালভার্টের কাজগুলো পিআইও দেখেন। কাজ বুঝে নিয়ে ঠিকাদারকে বিল দেবে ওই দপ্তর। এখানে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, আগের ইউএনও স্যার চলে গেছেন। আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। বিষয়টি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও পিআইওর সঙ্গে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।