নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামী বর্ষার আগে ঢাকার ১৯টি খালে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে, এমনটি বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর-১৩ নম্বর বাউনিয়া খালের মাধ্যমে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির আওতাধীন ৬টি খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রথম ধাপে ঢাকা উত্তরের ৪টি এবং ঢাকা দক্ষিণের ২টি খালের সংস্কার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। মিরপুর-১৩ এর বাউনিয়া খালের অংশে প্রথমে কার্যক্রম শুরু হয়।
সরকারের পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, আশা করি আমরা এই বর্ষার আগে আপাতত ৬টা খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে সক্ষম হব এবং খুব শীঘ্রই আমরা আরও ৪টা খাল দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ শুরু করব এবং এই বর্ষার আগে বাকি আরও ৯টির কাজ শুরু হবে। অর্থাৎ এ বছরের মধ্যেই ১৯টি খালের দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আমরা হয়তো এই ১৯টি খাল কেন্দ্রিক মাস্টার প্ল্যান করে ফেলব। কোথায় কোথায় আমাদেরকে একদম সুনির্দিষ্ট আরও কিছু কাজ করতে হবে সেটা ঠিক করে আগামী বাজেটকে সামনে রেখে আমরা কাজগুলো ঠিক করে সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা অর্থের সংস্থান করতে পারব বলে আশা করি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা ৩-৪টি মন্ত্রণালয় বসে কীভাবে বর্ষার আগে খালগুলোতে প্রবাহ ফেরাতে পারি সেই বিষয়ে কাজ করছি। প্রথমে খনন করব, এরপরে ধাপে ধাপে বাকি কাজে এগোব।
তিনি বলেন, আমরা চাই খালগুলো হবে প্রাণকেন্দ্র। এই খালে মশা ব্যতীত কিছুই নেই। আমরা স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি করে দেব। তারাই খাল দখল, দূষণ রোধে কাজ করবে। খালের পাড়ে সবুজ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। একইসঙ্গে খালে মাছ যাতে বাঁচে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকার খালগুলোতে আমাদেরকে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। খালগুলো হবে প্রাণকেন্দ্র। খালের আশেপাশের বাসা বাড়ির বর্জ্যগুলো পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। একটা বিহীত করতে হবে যাতে খালে কেউ ময়লা ফেলতে না পারে। আর এজন্য স্থানীয়দেরকে দিয়ে আমরা একটা কমিটি করে দেব, দুই কিলোমিটার পর পর একটা কমিটি থাকবে, তারা এটি মনিটর করবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে খালের যে পাড়টা আছে ওই পাড়ে আমরা চাষাবাদ করতে পারি কিনা।
তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি খালের পাড়গুলোতে আমরা সবুজ ফিরিয়ে আনতে পারি কিনা, আর খালের মধ্যে মাছ আনা যায় কিনা। সেটা আমরা কেমন করে ফিরিয়ে আনব, কেমন করে আমরা খালের প্রাণ ফিরিয়ে দেব সেই চেষ্টাটা আমরা করব। এটা আমাদের মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক উদ্যোগ হলেও নগরবাসীকে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে।
স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নগরবাসীকে তার খালগুলোকে রক্ষার দাবি তুলতে হবে এবং সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আপনাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে, অধিকারের জায়গা থেকে অধিকারের চর্চাও করতে হবে, দায়িত্বের জায়গা থেকে দায়িত্বও পালন করতে হবে আপনাদেরকে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা যখন খাল পুনরুদ্ধার করতে যাব, আমাদেরকে খালের কিছু কিছু অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে, আমরা জানি তখন হয়তো কিছু বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হবে কিন্তু আমরা সম্মিলিতভাবে সে বাধা মোকাবিলা করবো। খালে যেন পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পারি এটা আমাদের প্রাথমিক টার্গেট।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. হামিদুর রহমান খান এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার সচিব মো. নিজাম উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদুল হাসান এবং খাল বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন/প্রেজেন্টেশন করেন ক্যাপ্টেন ফিদা হাসান।