নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেন, বর্তমান সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। সাধারণ মানুষ, প্রার্থী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বলছেন, ভোট দিতে পারছেন না। কখনো কখনো সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারলেও সরকার ভোটের ফলাফল পাল্টে দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বনানীর জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলটির মহানগর উত্তরের বিশেষ সভায় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষের মালিকানার চাবিকাঠি হচ্ছে ভোটাধিকার। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে সরকার স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করেছে।
জিএম কাদের বলেন, দেশের মালিকানা হারিয়ে মানুষ এক শ্রেণির দাসে পরিণত হয়েছে। দাসদের ম্যানেজ করতে সুবিধাভোগী লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। মানুষের বাক ও চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। আইন-কানুন তৈরি করে মানুষের স্বাভাবিক অধিকার খর্ব করেছে সরকার।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। তারা দেশের ও ক্ষমতার মালিকানা স্বত্ব ভোটের মাধ্যমে ব্যবহার করবে। ভোটের মাধ্যমে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। প্রতিনিধিরা জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবে। জনগণের ইচ্ছামত প্রতিনিধিরা দেশ চালাতে ব্যর্থ হলে জনগণ আবার ভোটের মাধ্যমেই প্রতিনিধি পরিবর্তন করবে। এভাবেই বৈষম্যহীন একটি দেশের মানুষের প্রত্যাশা দেশ গণতান্ত্রিকভাবে চলবে। এটাই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, সারাদেশে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশে লোক বাড়ানো হয়েছে। সারা দেশের মানুষকে নজরদারির আওয়তায় এনে এক ধরনের শাসনের মধ্যে রেখেছে। স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে সকল মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখবে সরকার। কে কী করছে, কোথায় খাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেয়া হচ্ছে। দেশটাকে জেলখানা এবং দেশের মানুষকে ক্রীতদাস বানাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশটা একটি কারাগারে পরিণত হবে আর আমাদের ক্রীতদাসের মতো থাকতে হবে।
সারাদেশের মানুষকে নজরদারির আওতায় এনে এক ধরনের শাসনের মধ্যে রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে সব মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখবে সরকার। কে কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, খাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেওয়া হচ্ছে। দেশটাকে জেলখানা এবং দেশের মানুষকে ক্রীতদাস বানাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশটা একটি কারাগারে পরিণত হবে আর আমাদের ক্রীতদাসের মতো থাকতে হবে। লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া দেশ একটি গোষ্ঠীর কাছে বন্ধক দিয়ে আমরা ক্রীতদাস হতে পারি না। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই।
সরকারের সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, লাখো শহিদের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া দেশ একটি গোষ্ঠীর কাছে বন্ধক দিয়ে আমরা ক্রীতদাস হতে পারি না। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার সূচনা করা হয়েছে দাবি করে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, একজন নেতা ও একটি দল দেশ পরিচালনা করবে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে। শাসকগোষ্ঠী দেশটাকে তাদের পারিবারিক সম্পত্তি মনে করে। এ জন্য আওয়ামী লীগ, ভাবাদর্শ, জড়িত ব্যক্তিবর্গ অথবা স্বার্থের জন্য যাদের নেয়া প্রয়োজন তাদের একত্রিত করে একটি শ্রেণি তৈরী করা হয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থক সরকারের কর্মচারী, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বাছাই করে নেয়া হয়েছে। তারা সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর মত আচরণ করছে। বৈষম্যের কারণে সাধারণ মানুষ সমান সুযোগ পাচ্ছে না।
কাদের আরো বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সাথে ছিলাম। আওয়ামী লীগ জনগণের দল ছিলো, তাদের দীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস আছে। মানুষের অধিকার আদায়ে আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগ আছে। যে আওয়ামী লীগ মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, আমরা সেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম। কথা ছিলো আমরা দুর্নীতি নির্মূল করবো, বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করবো। ভোটের অধিকার কতটা আছে তা সবাই জানে। আর ভাতের অধিকার নিয়ে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। প্রতিদিন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, আয় বাড়ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর কোভিড পরিস্থিতির প্রভাব সারা বিশ্বেই। কিন্তু আমাদের দেশের মতো কোনো দেশই খাদের কিনারায় পৌঁছেনি। আমাদের রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। সরকার অনেক কথাই বলছে, কিন্তু আইএমএফ বলছে আমাদের রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলার। বকেয়া পরিশোধ করলে রির্জাভ দাঁড়াবে ১৯ বিলিয়ন ডলারে। প্রতিদিনই আমাদের রিজার্ভ কমছে। বৈদেশিক মূদ্রা যা আয় হচ্ছে ব্যায় তার চেয়ে অনেক বেশি। যদিও আমরা আমদানী অনেক নিয়ন্ত্রণ করছি। আমদানী কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল পাচ্ছে না কলকারখানা। নিত্যপণ্য প্রয়োজন অনুযায়ী বাজারে আসছে না।
তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু মানুষ বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা দুর্নীতি করে পাচার করে দিয়েছে। তাই যত টাকা খরচ হয়েছে, উন্নয়ন হয়েছে খুবই কম। পৃথিবীর যে কোন দেশের চেয়ে আমাদের দেশে রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে কয়েক গুণ বেশি টাকা খরচ হয়। আবার, সরকার পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থায় অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিয়ে খরচ বাড়িয়ে ফেলেছে। সরকারের হাতে টাকা নেই, তাই টাকা ছাপতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসেব অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। একটি অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী, গেলো ৫ বছরে ৫ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আবার, টাকা ছাপানোর কারণে মুদ্রাস্ফিতী হয়ে মালামালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাই মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণির মানুষের হাতে আছে কোটি কোটি বিলিয়ন। আবার, মশানিধন করতে বেশি দামে নকল অসুধ কিনছে। মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন মাদক পাচারের সাথে জড়িত। ধরা হচ্ছে, যে গরিব মানুষগুলো কিছু টাকার জন্য মাদক পরিবহন করে। মাদকের আসল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের সঞ্চালনায় জরুরি সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
উপস্থিত ছিলেন মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আমার উদ্দিন আহমেদ ঢালু, মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নাসির উদ্দিন সরকার, কাজী আবুল খায়ের, আনিস উর রহমান খোকন, এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সমরেশ মণ্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার, প্রিন্সিপাল মোস্তফা চৌধুরী, মঈনুল রাব্বি চৌধুরী রুমন, আলমগীর হোসেন, মোহাম্মদ আলী, এস এম হাসেম প্রমূখ।