পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকার মনোজ মিত্র মারা গেছেন । দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভোগার পর মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি।
বেশ কিছুদিন ধরে হৃদযন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছিল না তাঁর। এর পাশাপাশি, হার্ট পাম্পের সমস্যাও ছিল তাঁর । এছাড়া, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও ক্রিয়েটিনিন বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার সমস্যাতেও ভুগছিলেন তিনি । শরীরে সোডিয়াম-পটাসিয়ামের হার বজায় রাখার সমস্যাও ছিল তাঁর । সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা-নাট্যকার। বঙ্গবিভূষণ সম্মানিত বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্রের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মনোজ মিত্রর স্ত্রী ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেই সময় পেসমেকারও বসানো হয়। কয়েকদিন আগে সঙ্কটজনক অবস্থায় বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্র জগতের বিখ্য়াত ব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্রকে। একাধিক শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের খুলনা ডিভিশনের সাতক্ষীরা জেলায় জন্ম মনোজ মিত্রের। কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে পড়াশোনা করার সময় নাট্যজগতে পা রাখেন তিনি। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা নাট্যজগতের সুপরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। নাটকে একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন এই অভিনেতা-নাট্যকার। পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন মনোজ মিত্র।
১৯ বছরের যুবক মিত্র ১৯৫৭ সালে কলকাতার মঞ্চ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর ১৯৭২ সালে ‘চাকভাঙা মধু’ নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি পর্দার সামনে আসেন। মনোজ মিত্র ১৯৭৯ সালে প্রথম সিনেমায় পা রাখেন। তপন সিনহার ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এর মতো চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য পরিচিতি পান মনোজ মিত্র। পরে কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সিনেমা ‘ঘরে বাইরে’ এবং ‘গণশত্রু’তেও অভিনয় করেন তিনি। সত্যজিৎ রায় ছাড়াও বিশিষ্ট পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বাসু চট্টোপাধ্যায়, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত এবং গৌতম ঘোষের ছবিতেও নিজস্ব ঘরানায় অভিনয় করেছেন তিনি।
মনোজ মিত্র অভিনয়ের পাশাপাশি শতাধিক নাটকও লিখেছেন। ১৯৮৫ সালে সেরা নাট্যকার হিসেবে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান তিনি। অভিনয়ের জন্যও পেয়েছিলেন সংগীত নাটক একাডেমি পদকসহ নানা পুরস্কার। এছাড়া তিনি ছিলেন কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যক্ষ।
প্রতিনিধির নাম 

























