সাত বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দর সদরঘাটে চারটি লাইটারেজ জেটির নির্মাণকাজ শুরু করে। বছরখানেক আগে চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জেটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এসব জেটি এখনও পুরোপুরি ব্যবহার-উপযোগী করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো জেটি ব্যবহার করতে পারছে না।
ব্যবসা-বাণিজ্যকে গতিশীল করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) বিশেষ উদ্যোগ ছিল শিল্পগ্রুপগুলোকে আলাদা জেটি বরাদ্দ দেওয়া। ২০১৮ সালে ১ নম্বর জেটিটি খাদ্যশস্যের জন্য বিএসএম গ্রুপকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ২, ৩ ও ৪ নম্বর জেটি লৌহ ও ইস্পাতশিল্পের জন্য বিএসআরএম, কেএসআরএম ও আবুল খায়ের স্টিলকে এবং ৫ নম্বর জেটি সিমেন্ট ও ক্লিংকার শিল্পের জন্য কনফিডেন্স সিমেন্টকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এসব জেটি থেকে বন্দরের বছরে আয় হবে ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কনফিডেন্স সিমেন্ট জেটি ব্যবহার করলেও তেমন স্বস্তি নেই। অন্যদিকে বিএসআরএম, বিএসএম গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ এবং কেএসআরএম এখনও জেটিগুলো ব্যবহার করতে পারছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালে সদরঘাটে চারটি লাইটারেজ জেটি নির্মাণ করা হয়। ওই এলাকায় বালি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় জেটিগুলো ব্যবহার করা যায়নি।
২০১৮ সালে নতুন করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু হওয়ার পর বালি অপসারণ করে জেটি জাহাজ ভেড়ার উপযোগী করা হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক সংস্কার না হওয়ায় অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।
জেটিগুলো আগামী ১০ বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এসব জেটি এখনও পুরোপুরি ব্যবহার-উপযোগী করে দিতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন সংযোগ সড়ক ও কিছু সিভিল কাজ অসমাপ্ত আছে। ফলে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো জেটি ব্যবহার করতে পারছে না।
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে সংযোগ সড়ক এবং সদরঘাটে একটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল থাকায় জটিলতার বিষয়ে তুলে ধরা হয়। এই দুটি কারণে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
সদরঘাটে জেটি বরাদ্দ পাওয়া বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সদরঘাটে একটা লাইটারেজ জেটি বরাদ্দ পেয়েছি, যা এখন পর্যন্ত ব্যবহারের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিতে পারেনি। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। এতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ শেষ করে আমাদের দ্রুত বুঝিযে দেবে।’
আরও পড়ুন : শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে ড্রেজিং নিয়ে ক্ষোভ বিস্ময়!
চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় সদরঘাটে অবস্থিত চার লাইটারেজ জেটির বালি অপসারণ করে চার মিটার গভীর করা হয়েছে। ফলে এসব জেটিতে এখন অনায়াসেই লাইটার জাহাজ ভিড়তে পারবে। আমরা জাহাজ ভিড়িয়ে ড্রাফট পরীক্ষা করে দেখেছি। পরীক্ষাও সফল হয়েছে। এখন জেটি চারটি জাহাজ ভেড়ানোর সম্পূর্ণ উপযোগী। ড্রেজিং শেষে জেটিগুলো বন্দরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে হন্তান্তর করা হয়েছে। তাদের অল্প কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে ব্যবহার-উপযোগী হবে।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকায় সদরঘাট লাইটারেজ জেটি বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি। আশা করা যায় দ্রুত সময়ে কাজ শেষ হবে। চলতি বছরে কি শেষ হবেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, বছর তো প্রায় শেষের দিকে। সময় তো কম। হবে না। তবে দ্রুত সময়ে শেষ করার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ২২৯ কোটি টাকার কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কাজ পায় মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সদরঘাট এলাকায় লাইটার জেটি নির্মাণসহ কিছু কাজ করলেও ২০১৩ সালে পুরো কাজ না করেই চলে যায় মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট প্যাসিফিক মেরিন।
এ কারণে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি বাতিল করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আইনি জটিলতার কারণে প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ।
পরে ২০১৮ সালে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে ২৪২ কোটি টাকার এ প্রকল্প এখনও চলমান। এই প্রকল্পের আওতায় ৪০০ মিটার সদরঘাট লাইটারেজ জেটি ড্রেজিং করে জাহাজ ভেড়ানোর উপযোগী করে তোলা হয়েছে। আর বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় ২৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।