Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বড় ধরনের সংকটের দিকে এগুচ্ছে দেশের অর্থনীতি: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের দিকে দেশ। এমন বিপর্যয়েও ভোটারবিহীন সরকারের কিছু যায় আসে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, উন্নয়নের গাল-গল্প দিয়ে দেশকে ঋণের জালে বন্দি করে দেউলিয়া করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই দুরবস্থার জন্য সরকার দায়ীণ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনৈতিক সংকট একদিনে সৃষ্টি হয়নি, এটা সরকারের উন্নয়নের স্লোগানের নিচে তা চাপা পড়েছিল। আর্থিক খাতে নজিরবিহীন তারল্য সঙ্কট চলছে। আমানতকারীদের টাকা রাখার ঝুঁকি বাড়ছে। আর ভয়াবহ মূল্যস্ফীতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে জনগণের।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শনির আছর পড়েছে বর্তমান আওয়ামী লুটেরা সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার শুরুর দিকেই। এর পরিণতিতে আজ সমগ্র অর্থনীতি ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের (মূল্যস্ফীতি, নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিম্নমুখী রেমিটেন্স প্রবাহ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দরপতন) অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কী ভয়ঙ্কর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত উত্তরণ করতে শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ধার নেয়া কিছু ঋণ ইতোমধ্যে শোধও করেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছিল ৬৯.৮% শতাংশ, যা ২০২৩ এর আগস্টে নেমে হয়েছে মাত্র ২.১% শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের মাথায় ৬৭% শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে এনেছে শ্রীলঙ্কা। অথচ আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে তো পড়ছেই। যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীনভাবে সমস্যাগুলোর সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পেয়েছেন ‘ডি’ গ্রেড, আর শ্রীলংকাকে দেউলিয়াত্ব ও ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি থেকে বের করে আনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পেয়েছেন ‘এ’ মাইনাস। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবেই মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে নিমজ্জিত দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই আমাদের অর্থনীতি মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। মূলত সরকারের পলিসিগত বা রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং ব্যক্তিস্বার্থ বা সর্বগ্রাসী লুটপাট আমাদের অর্থনীতির জীবনী শক্তিকে ক্রমেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। যার সর্বশেষ সংযোজন— কেবলমাত্র দুর্নীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন নামে একটি বিশেষ গ্রুপ তথা ইচ্ছাকৃত লোন ডিফল্টারদের হাতে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে জনতা ব্যাংক ২২ হাজার কোটি টাকা তুলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকে। একটি শিল্প গ্রুপ নামে বেনামে অস্তিত্বহীন ভুয়া কোম্পানির নামে কেবল ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৩০,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। অথচ গ্রুপটি সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার যোগ্য। এই গ্রুপটি ন্যূনতম এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। অথচ উচ্চ আদালত থেকে এ অর্থ লোপাটের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত করে দেয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশের যোগাযোগ ও ক্ষমতা থাকলে ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা লুটপাট এখন সবচেয়ে সহজ’ বলে মন্তব্য করেছেন একজন অর্থনীতিবিদ। দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠনের মাধ্যমে যারা বিদেশে বিপুল বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়েছে, একজন অর্থনীতিবিদ তাদেরকে ‘জাতীয় দুশমন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ‘তারা ব্যাংকিং সিস্টেমের অপব্যবহার করে ব্যাংকঋণ নিয়ে তা বছরের পর বছর ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করে চলেছেন। তারা ব্যাংকগুলোর ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ হিসেবে ঋণ লুটপাটকারীর ভূমিকা পালন করছেন। তারা রাজনীতিক পরিচয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত কোনো দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটলে বিদেশী ব্যাংকগুলো সেখানে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ছুটে আসে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে দেশে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় ১৩ টি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলেও কোনো বিদেশী ব্যাংক কি বাংলাদেশে এসেছে? উল্টা যে কয়েকটি বিদেশী ব্যাংক বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তারাও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করছে। একই ধরনের প্রোডাক্ট ও সেবা নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার প্রতিযোগিতা করছে দেশের ৫২টি ব্যাংক। পরিসংখ্যান বলছে ৩০০ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি (৬১ টি)। অর্থনীতিকে তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় সৃষ্ট এই ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং নয় বরং জনগণের অর্থ লোপাটেই বেশি মনোযোগী।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় ধরা হয়। এর বেশি হলেই তা ঝুঁকি। বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ ঝুঁকির চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। প্রলেপ দিয়ে নিয়মিত রাখা হয়েছে। এদিকে পুনঃতফসিলকৃত ঋণ, অবলোপন করা ঋণ, অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা বিপুল অঙ্কের ঋণ, বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করাসহ আরও অনেক ঋণ রয়েছে যেগুলো খেলাপির যোগ্য কিন্তু খেলাপি করা হচ্ছে না, এসব ঋণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বর্তমানে খেলাপি ঋণ যা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ খেলাপি ঋণ কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ২% অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে বারবার। এমনকি আইন সংশোধন করে সরকারঘনিষ্ঠ অলিগার্কদের একাধিকবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সঠিক পর্যালোচনা ও জাস্টিফিকেশন না থাকা সত্ত্বেও মনগড়াভাবে লোন রাইট অফ করা হচ্ছে দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতাঘেঁষা লোকদের রক্ষা করার জন্য।

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের (মূল্যস্ফীতি, নিন্মমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিম্নমুখী রেমিটেন্স প্রবাহ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দরপতন) অবস্থান এতোটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কি ভয়ংকর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত ওভারকাম করতে শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ধার নেওয়া কিছু ঋণ ইতোমধ্যে শোধও করেছে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই আমাদের অর্থনীতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। মূলত সরকারের পলিসিগত বা রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং ব্যক্তিস্বার্থ বা সর্বগ্রাসী লুটপাট আমাদের অর্থনীতির জীবনী শক্তিকে ক্রমেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। যার সর্বশেষ সংযোজন— কেবলমাত্র দুর্নীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন নামে একটি বিশেষ গ্রুপ তথা ইচ্ছাকৃত লোন ডিফল্টারদের হাতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে জনতা ব্যাংক ২২ হাজার কোটি টাকা তুলে দিয়েছে।

‘সম্প্রতি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকে। একটি শিল্প গ্রুপ নামে-নামে অস্তিত্বহীন ভুয়া কোম্পানির নামে কেবল ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৩০,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। অথচ গ্রুপটি সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার যোগ্য। এই গ্রুপটি ন্যূনতম এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।’ উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর, বেসিক ব্যাংকের চাঞ্চল্যকর আর্থিক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পি কে হালদার জালিয়াতি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৬২০ কোটি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১ হাজার ২০০ কোটি, এনন টেক্সটাইল ৫ হাজার ৫০৪ কোটি, ক্রিসেন্ট গ্রুপে ২ হাজার ৭৬০ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ইউনিপেটু কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, এমটিএফই কেলেঙ্কারি, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএসএল) কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১০ কোটি টাকা চুরি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’গুলো উল্লেখ করে বিস্তারিত উল্লেখ করেন।

 

আবহাওয়া

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত

বড় ধরনের সংকটের দিকে এগুচ্ছে দেশের অর্থনীতি: ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০২:০১:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের দিকে দেশ। এমন বিপর্যয়েও ভোটারবিহীন সরকারের কিছু যায় আসে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, উন্নয়নের গাল-গল্প দিয়ে দেশকে ঋণের জালে বন্দি করে দেউলিয়া করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই দুরবস্থার জন্য সরকার দায়ীণ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনৈতিক সংকট একদিনে সৃষ্টি হয়নি, এটা সরকারের উন্নয়নের স্লোগানের নিচে তা চাপা পড়েছিল। আর্থিক খাতে নজিরবিহীন তারল্য সঙ্কট চলছে। আমানতকারীদের টাকা রাখার ঝুঁকি বাড়ছে। আর ভয়াবহ মূল্যস্ফীতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে জনগণের।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শনির আছর পড়েছে বর্তমান আওয়ামী লুটেরা সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার শুরুর দিকেই। এর পরিণতিতে আজ সমগ্র অর্থনীতি ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের (মূল্যস্ফীতি, নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিম্নমুখী রেমিটেন্স প্রবাহ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দরপতন) অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কী ভয়ঙ্কর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত উত্তরণ করতে শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ধার নেয়া কিছু ঋণ ইতোমধ্যে শোধও করেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছিল ৬৯.৮% শতাংশ, যা ২০২৩ এর আগস্টে নেমে হয়েছে মাত্র ২.১% শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের মাথায় ৬৭% শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে এনেছে শ্রীলঙ্কা। অথচ আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে তো পড়ছেই। যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীনভাবে সমস্যাগুলোর সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পেয়েছেন ‘ডি’ গ্রেড, আর শ্রীলংকাকে দেউলিয়াত্ব ও ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি থেকে বের করে আনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পেয়েছেন ‘এ’ মাইনাস। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবেই মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে নিমজ্জিত দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই আমাদের অর্থনীতি মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। মূলত সরকারের পলিসিগত বা রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং ব্যক্তিস্বার্থ বা সর্বগ্রাসী লুটপাট আমাদের অর্থনীতির জীবনী শক্তিকে ক্রমেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। যার সর্বশেষ সংযোজন— কেবলমাত্র দুর্নীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন নামে একটি বিশেষ গ্রুপ তথা ইচ্ছাকৃত লোন ডিফল্টারদের হাতে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে জনতা ব্যাংক ২২ হাজার কোটি টাকা তুলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকে। একটি শিল্প গ্রুপ নামে বেনামে অস্তিত্বহীন ভুয়া কোম্পানির নামে কেবল ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৩০,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। অথচ গ্রুপটি সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার যোগ্য। এই গ্রুপটি ন্যূনতম এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। অথচ উচ্চ আদালত থেকে এ অর্থ লোপাটের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত করে দেয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশের যোগাযোগ ও ক্ষমতা থাকলে ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা লুটপাট এখন সবচেয়ে সহজ’ বলে মন্তব্য করেছেন একজন অর্থনীতিবিদ। দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠনের মাধ্যমে যারা বিদেশে বিপুল বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়েছে, একজন অর্থনীতিবিদ তাদেরকে ‘জাতীয় দুশমন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ‘তারা ব্যাংকিং সিস্টেমের অপব্যবহার করে ব্যাংকঋণ নিয়ে তা বছরের পর বছর ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করে চলেছেন। তারা ব্যাংকগুলোর ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ হিসেবে ঋণ লুটপাটকারীর ভূমিকা পালন করছেন। তারা রাজনীতিক পরিচয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত কোনো দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটলে বিদেশী ব্যাংকগুলো সেখানে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ছুটে আসে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে দেশে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় ১৩ টি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলেও কোনো বিদেশী ব্যাংক কি বাংলাদেশে এসেছে? উল্টা যে কয়েকটি বিদেশী ব্যাংক বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তারাও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করছে। একই ধরনের প্রোডাক্ট ও সেবা নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার প্রতিযোগিতা করছে দেশের ৫২টি ব্যাংক। পরিসংখ্যান বলছে ৩০০ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি (৬১ টি)। অর্থনীতিকে তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় সৃষ্ট এই ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং নয় বরং জনগণের অর্থ লোপাটেই বেশি মনোযোগী।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় ধরা হয়। এর বেশি হলেই তা ঝুঁকি। বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ ঝুঁকির চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। প্রলেপ দিয়ে নিয়মিত রাখা হয়েছে। এদিকে পুনঃতফসিলকৃত ঋণ, অবলোপন করা ঋণ, অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা বিপুল অঙ্কের ঋণ, বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করাসহ আরও অনেক ঋণ রয়েছে যেগুলো খেলাপির যোগ্য কিন্তু খেলাপি করা হচ্ছে না, এসব ঋণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বর্তমানে খেলাপি ঋণ যা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ খেলাপি ঋণ কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ২% অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে বারবার। এমনকি আইন সংশোধন করে সরকারঘনিষ্ঠ অলিগার্কদের একাধিকবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সঠিক পর্যালোচনা ও জাস্টিফিকেশন না থাকা সত্ত্বেও মনগড়াভাবে লোন রাইট অফ করা হচ্ছে দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতাঘেঁষা লোকদের রক্ষা করার জন্য।

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের (মূল্যস্ফীতি, নিন্মমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিম্নমুখী রেমিটেন্স প্রবাহ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দরপতন) অবস্থান এতোটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কি ভয়ংকর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত ওভারকাম করতে শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ধার নেওয়া কিছু ঋণ ইতোমধ্যে শোধও করেছে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই আমাদের অর্থনীতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। মূলত সরকারের পলিসিগত বা রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং ব্যক্তিস্বার্থ বা সর্বগ্রাসী লুটপাট আমাদের অর্থনীতির জীবনী শক্তিকে ক্রমেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। যার সর্বশেষ সংযোজন— কেবলমাত্র দুর্নীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন নামে একটি বিশেষ গ্রুপ তথা ইচ্ছাকৃত লোন ডিফল্টারদের হাতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে জনতা ব্যাংক ২২ হাজার কোটি টাকা তুলে দিয়েছে।

‘সম্প্রতি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকে। একটি শিল্প গ্রুপ নামে-নামে অস্তিত্বহীন ভুয়া কোম্পানির নামে কেবল ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৩০,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। অথচ গ্রুপটি সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার যোগ্য। এই গ্রুপটি ন্যূনতম এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।’ উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর, বেসিক ব্যাংকের চাঞ্চল্যকর আর্থিক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পি কে হালদার জালিয়াতি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৬২০ কোটি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১ হাজার ২০০ কোটি, এনন টেক্সটাইল ৫ হাজার ৫০৪ কোটি, ক্রিসেন্ট গ্রুপে ২ হাজার ৭৬০ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ইউনিপেটু কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, এমটিএফই কেলেঙ্কারি, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএসএল) কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১০ কোটি টাকা চুরি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’গুলো উল্লেখ করে বিস্তারিত উল্লেখ করেন।