নিজস্ব প্রতিবেদক :
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সরকার বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের চলমান ধারা পর্যবেক্ষণে এই অর্থবছর শেষে ৮২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ এর প্রস্তাবনা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, এমন একটা সময় বাজেট প্রণয়ন হতে যাচ্ছে যখন সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও শ্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী এবং রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা যেটা আমরা দেখতে চাই, বিশেষ করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সূচক যেখানে থাকার কথা সেটা নেই। বরং চরমভাবে চাপের মুখে পড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দু’টিই।
তিনি বলেন, আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মূল বাজেটই হবে কীভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। ওই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায়, সেটা বড় বিষয়। যেমন-গত ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬.৩ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্তি মাত্র ১৩.৯ শতাংশ। আমরা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই, তাহলে বাকি ৬ মাসে রাজস্ব আহরণে ৫৪.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। যা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। বিগত দিনের ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যায় রাজস্ব ঘটতি আগের মতোই চলমান থাকবে। যার পরিমাণ ৮২ হাজার কোটি টাকা হবে বলে মনে করছি।
অন্যদিকে সরকারি ব্যয়ে সংযম লক্ষ্য করছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় ২৫.৫ শতাংশ দেখতে পাচ্ছি। গত বছরে ২৭ শতাংশের মতো ছিল। যেখান থেকে আরও কমেছে। নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থা ও আইএমএফ পরামর্শে ব্যয় কমেছে। ওই সময় বাজেট ঘাটতি বেশ কমেছে, বাজেট ঘাটতি ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছরের এই সময়ে ঘাটতি ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি পূরণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ কমে গেছে।
সিপিডি বলছে, রাজস্ব আহরণে ধীরগতি, মূল্যস্ফীতি ও ডলার সঙ্কটসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এর ফলে আমরা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলেছি। সেই স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাটাই হবে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্য।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেট প্রণয়ন হয় এক বছরের জন্য। বাজেটে যে নির্দেশনা থাকবে সেগুলো যেন চ্যালেঞ্জগুলো মেটাতে পদক্ষেপ নিতে পারে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো, টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীলতা রাখা ও দরিদ্র মানুষের স্বার্থের দিকে নজর দিতে হবে।
প্রস্তাবনায় সিপিডি বলছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট এমন সময়ে উপস্থাপন করা হবে যখন দেশ নানাবিধ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
সিপিডির মত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই নীতিনির্ধারকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে। বৈদেশিক মুদ্রার হারকে স্থিতিশীল করা মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর জন্য সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।
সিপিডির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, অর্থপাচার রোধে এনবিআরকে শক্তিশালী ভূমিকা নেয়া, অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করা, করদাতাদের হয়রানি বন্ধ করা, ইএফডি যন্ত্র সহজলভ্য করা, ওষুধের ওপর ভ্যাট কমানো।
এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও আমদানি করা বই এসবে শুল্ক, ভ্যাট ও কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারি ব্যয় কোথায় করব, প্রাধিকার পরিষ্কার করতে হবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ মাথায় রেখে সেখান থেকে রেহাই দেয়ার বিষয়টি মনে রাখা উচিত। পণ্যমূল্য কমাতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ও অর্থব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন। সেইসাথে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ফাহমিদা বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল। যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শহর ও গ্রামে দুটোই জায়গায় বেশি ছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ খুব বেশি প্রভাবে ফেলতে পারিনি।
মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম থাকায় অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতির উত্তরণ প্রয়োজন।
রাজস্ব আহরণের গতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রত্যাশিত আয়ের জন্য সংস্কার প্রয়োজন। সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমিয়ে আনা প্রয়োজন। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার জন্যে বরাদ্দ প্রদানের পরামর্শ উঠে আসে এতে।