নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ৫০টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনা ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল, নৌবাহিনীর সম্মিলিত দল ও একটি হেলিকপ্টার আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আর ৬টা ১২ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মার্কেটের চার দিক থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তবে বাতাসের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। বঙ্গবাজার মার্কেটে লাগা আগুন পাশের এনেক্সকো টাওয়ারেও ছড়িয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনের কারণে ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে গেছে বঙ্গবাজারের আকাশ। ভয়াবহ এ আগুনের কারণে প্রচণ্ড তাপ অনুভূত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগুনের তীব্রতা বাড়ছে।
আগুনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ যে পানি দিয়েও সেটি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এছাড়া সেখানে প্রাথমিকভাবে পানির সংকটও দেখা দেয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পুকুর থেকে পানি নেয় অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা।
রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটের কিছু অংশ ছিল তিন তলা এবং কিছু অংশ ছিল চার তলা। ব্যবসায়ীরা বলছেন সেখানে অন্তত সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার দোকান ছিল। তবে ভয়াবহ আগুনে একেবারে ভস্ম হয়ে গেছে সব। মাটিতে মিশে গেছে পুরো মার্কেট।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক বলেন, প্রয়োজন হলে সব ইউনিট কাজ করবে, না হলে চলে আসবে।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ইউনিটের গাড়ির সঙ্গে আসা পানি অনেক আগেই শেষ। পরে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের পুকুর থেকে পানি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। তবে পানির চাপ অনেক কম। মাঝখানে ১০ মিনিট পানি ছিটানোর কাজ অনেক ব্যাহত হয়েছিল। এখন পানি দেওয়ার কাজ চললেও প্রেসার অনেক কম, তাই নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আরও সমস্যা হচ্ছে।
আগুনের কারণে ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে গেছে বঙ্গবাজারের আকাশ। ভয়াবহ এ আগুনের কারণে প্রচণ্ড তাপ অনুভূত হচ্ছে। তবে বাতাসের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এছাড়া হতাহতের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবাজার মার্কেট এলাকায় ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড জোরদার রাখতে এবং ফায়ার সার্ভিসসহ অংশ নেওয়া বিভিন্ন বাহিনীর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকার যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক লালবাগ বিভাগের লালবাগ জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার জয়িতা দাস।
তিনি বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় অর্ধশত ইউনিট। এছাড়া বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করছে।
জানা গেছে, হাইকোর্ট থেকে গুলিস্তান, হাইকোর্টের দিকে থেকে বঙ্গবাজার, নর্থ সাউথ রোডের দিক থেকেও বঙ্গবাজারের দিকের রাস্তা বন্ধ আছে। গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, ফুলবাড়িয়া, নাজিরা বাজার, আনন্দবাজার সড়ক থেকেও যান চলাচল বন্ধ আছে। এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের সামনের সড়ক থেকে ঢাকা মেডিকেল পর্যন্ত কোনো কোনো সড়কে যান চলাচল বন্ধ, কোথাও নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করা হয়েছে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আশপাশের এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই ট্রাফিক নির্দেশনা বহাল থাকবে। এলাকায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও যানবাহনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে।