আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অলিম্পিক গেমস উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা আগে দ্রুতগতির রেল নেটওয়ার্কে ধারাবাহিকভাবে সমন্বিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশকিছু রেললাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে, এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটলো। রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় ট্রেন পরিচালনাকারী সংস্থা এসএনসিএফের এক অপারেটর জানিয়েছে, প্যারিসকে উত্তরে লিলি, পশ্চিমে বোর্দো এবং পূর্বে স্ট্রাসবার্গের মতো শহরগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী লাইন বরাবর স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে হামলাকারীরা। এর ফলে অন্তত তিনটি অঞ্চল- আটলান্টিক, উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের দ্রুত গতির রেললাইন মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফরাসি রেলওয়ে কোম্পানি এসএনসিএফ বলেছে, দ্রুতগতির রেল নেটওয়ার্ককে অচল করে দিতেই বড় ধরনের এই হামলা চালানো হয়েছে। স্থাপনাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো হয়েছিল।
এসএনসিএফ গ্রুপের সভাপতি জানিয়েছেন, এর ফলে প্রায় ৮ লাখ যাত্রী রেল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ট্রেনের এই নেটওয়ার্কটি অলিম্পিক গেমসের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছিল।
যদিও কর্তৃপক্ষ এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেটওয়ার্কটি ঠিক রাখার জন্য শত শত কর্মীকে একত্রিত করার দিকে নজর দিচ্ছে। তারপরও অনেকগুলো পথে রেল চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত রেল যোগাযোগব্যবস্থাকে মেরামত করতে কমপক্ষে পুরো সপ্তাহ লেগে যাবে বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের।
যাত্রীদের নির্ধারিত যাত্রা স্থগিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে এসএনসিএফ। তাদের রেল স্টেশনে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এবার অলিম্পিকে ৭ হাজার অ্যাথলেট এবং তিন লাখ দর্শক অংশ নিচ্ছে। অলিম্পিক অনুষ্ঠান সুরক্ষিত করতে ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান চালানো হচ্ছে। অনুষ্ঠান ঘিরে ৪৫ হাজারের বেশি পুলিশ, ১০ হাজার সেনা ও দুই হাজারের বেশি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এজেন্ট মোতায়েন করা হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি কেউ। এ ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে দেশটির পরিবহনমন্ত্রী প্যাট্রিস ভারগ্রিয়েট এই কাজকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অ্যামেলি ওউদিয়া-কাস্তেরাও।
প্যারিসের পুলিশ প্রধান বলেছেন, রাজধানীর প্রধান স্টেশনগুলিতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করছেন তিনি।
এই ঘটনা তদন্তের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, হামলাগুলো ‘নাশকতা’ ছড়াতে করা হয়েছে। টিজিভি নেটওয়ার্ককে পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে এটি একটি বৃহৎ ও ব্যাপক আক্রমণ। এর ফলে অনেক রুটের ট্রেন চলাচল বাতিল করতে হবে।
এসএনসিএফ বলেছে, রাতারাতি একাধিক আক্রমণের শিকার হয়েছে টিজিভি। এর ফলে আটলান্টিক, উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের রেল চলাচল ব্যাহত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামো পুরোপুরি মেরামত করতে এই সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
এসএনসিএফের প্রধান নির্বাহী শন-পিয়েরে ফারান্দো বলেছেন, এই হামলার ফলে অন্তত ৮ লাখ যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন। চলমান ট্রেনগুলোকে বিভিন্ন ট্র্যাকে ঘুরিয়ে দেওয়া হলেও, অনেকগুলো শিডিউল বাতিল করতে হবে। যাত্রীদের তাদের ট্রিপ স্থগিত করতে ও ট্রেন স্টেশন থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফ্রান্সের পরিবহনমন্ত্রী প্যাত্রিশ ভারগারিত বলছেন, টিজিভি রেল নেটওয়ার্কে এমন আক্রমণ বড় ধরনের অপরাধ। এই হামলার ফলে উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম ফ্রান্সে রেল যোগাযোগ অর্ধেক হয়ে যাবে ও আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত পুরো ফ্রান্সে এর গুরুতর প্রভাব পড়বে।