Dhaka শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অনুসারীদের জামিন নিয়ম-নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না : আইন উপদেষ্টা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ১০:৪৩:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ২০২ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একের পর এক জুলাই গণ অভ্যুত্থানকারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং তার দলের অনুসারীরা যদি জামিন পায় এটা জামিনের কোনো নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে আইন উপদেষ্টা বলেন, একটা বিষয় নিয়ে এখনও প্রচুর আলোচনা হচ্ছে হাইকোর্টের কোন কোন বেঞ্চ অস্বাভাবিক জামিন দিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে আমি আমার কনসার্নের কথা প্রধান বিচারপতিকে এর আগেও জানিয়েছিলাম। আজকেও জানিয়েছি। আজকে আপনাদের প্রকাশে বলে গেলাম এর আগে যতবার দেখা হয়েছে বলেছি। ব্যবস্থাও নিয়েছিলেন কিছু। যে বেঞ্চগুলো থেকে চার ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছিল, তিনি তাদের ডেকেও নিজের মত ব্যবস্থা নিয়েছেন। তারপরও এই জামিনের প্রকোপ কিছুটা কমেছে কিন্তু এখনও অব্যাহত আছে। ভয়ংকর ব্যক্তি যিনি জামিনে পেয়ে জুলাই-আগস্টের নায়কদের হামলা করতে পারেন— এই ধরনের জামিন হলে আমরা প্রচণ্ড শঙ্কিত, আতঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন বোধ করি। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের হাইকোর্টের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

‘হাইকোর্টের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। তার কাছে আগেও এভাবে উৎকণ্ঠা জানিয়েছিলাম। আজকে আবারও জানিয়েছি এবং আমি আশা করি ভবিষ্যতে নতুন যে প্রধান বিচারপতি আসবে তার সঙ্গেও বলবো— ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একের পর এক জুলাই গণঅভ্যুত্থানকারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তার দলের অনুসারীরা যদি জামিন পায়— এটা কোনও নিয়ম-নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। কারণ আমাকে পটেনশিয়ালি খুন করতে পারে এমন একজনকে যদি কোনও বিচারক জামিন দেন তাহলে এই খুনের দায় দায়িত্ব সেই বিচ্চারকের ওপর পড়ে কি-না সেটা বিবেচনা করা উচিত। এভাবে বলার জন্য আমি দুঃখিত কারণ বলা ছাড়া উপায় নাই। কারণ পরিস্থিতি এমন দিকে গিয়েছে যে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য যাকে যা বলার দরকার— তা বলতে হবে। কথা দিচ্ছি আমাদের যে নতুন প্রধান বিচারপতি থাকবেন তার সঙ্গে প্রথম মিটিংয়েও আমি বলবো— আইনগতভাবে জামিনপ্রাপ্যদের বিচারকেরা অবশ্যই জামিন দেবে। কিন্তু যে অপরাধী বা ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়ে আপনাকে-আমাকে খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে সে তো জামিন পেতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আজকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের শেষ কর্মদিবস ছিল। আমি উনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলাম। জাতির একটা অত্যন্ত সন্ধিক্ষণে উনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। উনি আমাদের যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান আছে, সেটার যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণ করার জন্য বিচার বিভাগীয় যে সংস্কারগুলো ছিল সেই সংস্কারগুলোর ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেই আইনগুলোই করেছি সবকিছুর পেছনে উনার সমর্থন ছিল। আমাদের বিভিন্ন সময় যে বিভিন্ন কনসার্ন ছিল, তা ব্যক্ত করেছি। একটা বিষয় আপনাদের বলে নেই- এখন প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। যেমন ধরেন- হাইকোর্টের কোন কোন বেঞ্চ অস্বাভাবিক জামিন দিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে আমি আমার কনসার্নের কথা প্রধান বিচারপতিকে এর আগে দেখা করে জানিয়েছিলাম। আজকেও জানিয়েছি। আমি আপনাদের প্রকাশ্যে বলে গেলাম এর আগে যতবার দেখা হয়েছে প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, উনি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, যে বেঞ্চগুলো থেকে চার ঘণ্টায় আটশ’ জামিন দেওয়া হয়েছিল। তিনি (প্রধান বিচারপতি) তাদেরকে ডেকেও পাঠিয়েছিলেন। উনি উনার মতো ব্যবস্থা নিয়েছেন। তারপর এই জামিনের প্রকোপ কিছুটা কমেছে, কিন্তু তা এখন অব্যাহত আছে। যে অস্বাভাবিক জামিন- যেখানে একজন ভয়ঙ্কর ব্যক্তি যিনি জামিন পেয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যারা নায়ক আছে তাদের ওপর হামলা করতে পারেন। এই ধরনের জামিন যখন হয় তখন আমরা প্রচন্ড সংকিত আতঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন বোধ করি। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের হাইকোর্টের ওপর কোনরকম কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। নিয়ন্ত্রণ থাকার কথাও না। হাইকোর্টের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। উনার কাছে আগেও এ ব্যাপার উৎকণ্ঠা জানিয়েছিলাম। আজকে আবারও জানিয়েছি এবং আমি আশা করি ভবিষ্যতে নতুন যে প্রধান বিচারপতি আসবে তার সঙ্গে আমার প্রথম যখন মিটিং হবে সেখানে আমি উনাকে বলব যে, আজকে যে ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট নেত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক আমাদের জুলাই গণ অভ্যুত্থানকারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন এবং তার দলের অনুসারীরা যদি জামিন পায় এটা জামিনের কোন নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। কারণ আমাকে পটেনশিয়ালি খুন করতে পারে এমন একজনকে যদি কোন বিচারক জামিন দেয় তাহলে এই খুনের দায় দায়িত্ব উনার উপর পড়ে কিনা সেটা ওনাদেরকে বিবেচনা করা উচিত।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন একটা দিকে গিয়েছে যে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য আমাদের যেকোন এক্সটেন্টে যাকে যা বলার এটা আবার বলতে হবে। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি আমাদের যে নতুন প্রধান বিচারপতি হবেন ওনার সঙ্গে প্রথম মিটিংয়ে আমি এই ব্যাপারে বলব যে সমস্ত ক্ষেত্রে আইনগতভাবে জামিন প্রাপ্য অধিকার সেটা জামিন দিবে। বিচারকরা অবশ্যই দিবে। কিন্তু যেই অপরাধী বা যেই ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়ে আপনাকে, আমাকে খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সে জামিন পেতে পারে না। আমরা এই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কোয়ালিফাইড সবচেয়ে সৎ একজন প্রধান বিচারপতিকে আমরা পেয়েছিলাম। এটাও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটা অর্জন। আগামীতেও আমরা বিচার বিভাগে এ রকম দক্ষ অভিভাবকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগে যে সমস্ত অনিয়ম আছে বা যে সব ব্যাপারে প্রশ্ন আছে সেগুলো দূর করার ব্যাপারে কাজ করে যাব।

পরবর্তী প্রধান বিচারপতিকে হচ্ছেন তা জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, পরবর্তী প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন এটা সরকারের নীতি নির্ধারণের বিষয়। এই নীতি নির্ধারণের বিষয়ে এককভাবে কোনও কিছু বলার এক্তিয়ার আমার নাই। আমি আপনাদের বলি আপনারা হয়তো তিন-চার দিনের মধ্যে জানতে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট জামিন নিয়ে আপনি ফেসবুকে যে লেখা পোস্ট করেছিলেন সেটা উনি প্রত্যাহার করতে বলেছেন। সে বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক, আপনারা তদন্ত করে দেখেন উচ্চ আদালতে চার ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন দেওয়া কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভব কি-না? এটাতে যারা যারা আইনজীবী ছিলেন আপনারা তদন্ত করে দেখেন। অধস্তন আদালতে কিছু কিছু জামিন হয়েছে সেটা উচ্চ আদালতের তুলনায় খুবই কম। আমি বলতে চাই, যেই জামিন হয় সেটার কমপক্ষে ৭০/৮০ শতাংশ উচ্চ আদালত হয়েছে। জামিনের পর আমরা এগুলোর কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ মামলার কোনও কাগজে দলীয় পরিচয় উল্লেখ করেনি এবং যে কথিত অপরাধটা আছে সে অপরাধের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা কী— সেই ধরনের কোনও তথ্য দেয়নি। কোনও পরিচয় উল্লেখ না থাকায় সেই সমস্ত ক্ষেত্রে অধস্তন আদালতে কিছু জামিন হয়েছে। আমরা এই ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি, জামিন নিয়ে যে বাণিজ্য-অরাজকতা চলছে— সেটা বন্ধ করার জন্য পুলিশকেও আমাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে করছে না। সেই সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা পুলিশের কাছে আমাদের উদ্যোগের কথা জানিয়েছি।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অনুসারীদের জামিন নিয়ম-নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না : আইন উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ১০:৪৩:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একের পর এক জুলাই গণ অভ্যুত্থানকারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং তার দলের অনুসারীরা যদি জামিন পায় এটা জামিনের কোনো নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে আইন উপদেষ্টা বলেন, একটা বিষয় নিয়ে এখনও প্রচুর আলোচনা হচ্ছে হাইকোর্টের কোন কোন বেঞ্চ অস্বাভাবিক জামিন দিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে আমি আমার কনসার্নের কথা প্রধান বিচারপতিকে এর আগেও জানিয়েছিলাম। আজকেও জানিয়েছি। আজকে আপনাদের প্রকাশে বলে গেলাম এর আগে যতবার দেখা হয়েছে বলেছি। ব্যবস্থাও নিয়েছিলেন কিছু। যে বেঞ্চগুলো থেকে চার ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছিল, তিনি তাদের ডেকেও নিজের মত ব্যবস্থা নিয়েছেন। তারপরও এই জামিনের প্রকোপ কিছুটা কমেছে কিন্তু এখনও অব্যাহত আছে। ভয়ংকর ব্যক্তি যিনি জামিনে পেয়ে জুলাই-আগস্টের নায়কদের হামলা করতে পারেন— এই ধরনের জামিন হলে আমরা প্রচণ্ড শঙ্কিত, আতঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন বোধ করি। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের হাইকোর্টের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

‘হাইকোর্টের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। তার কাছে আগেও এভাবে উৎকণ্ঠা জানিয়েছিলাম। আজকে আবারও জানিয়েছি এবং আমি আশা করি ভবিষ্যতে নতুন যে প্রধান বিচারপতি আসবে তার সঙ্গেও বলবো— ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একের পর এক জুলাই গণঅভ্যুত্থানকারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তার দলের অনুসারীরা যদি জামিন পায়— এটা কোনও নিয়ম-নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। কারণ আমাকে পটেনশিয়ালি খুন করতে পারে এমন একজনকে যদি কোনও বিচারক জামিন দেন তাহলে এই খুনের দায় দায়িত্ব সেই বিচ্চারকের ওপর পড়ে কি-না সেটা বিবেচনা করা উচিত। এভাবে বলার জন্য আমি দুঃখিত কারণ বলা ছাড়া উপায় নাই। কারণ পরিস্থিতি এমন দিকে গিয়েছে যে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য যাকে যা বলার দরকার— তা বলতে হবে। কথা দিচ্ছি আমাদের যে নতুন প্রধান বিচারপতি থাকবেন তার সঙ্গে প্রথম মিটিংয়েও আমি বলবো— আইনগতভাবে জামিনপ্রাপ্যদের বিচারকেরা অবশ্যই জামিন দেবে। কিন্তু যে অপরাধী বা ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়ে আপনাকে-আমাকে খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে সে তো জামিন পেতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আজকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের শেষ কর্মদিবস ছিল। আমি উনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলাম। জাতির একটা অত্যন্ত সন্ধিক্ষণে উনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। উনি আমাদের যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান আছে, সেটার যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণ করার জন্য বিচার বিভাগীয় যে সংস্কারগুলো ছিল সেই সংস্কারগুলোর ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেই আইনগুলোই করেছি সবকিছুর পেছনে উনার সমর্থন ছিল। আমাদের বিভিন্ন সময় যে বিভিন্ন কনসার্ন ছিল, তা ব্যক্ত করেছি। একটা বিষয় আপনাদের বলে নেই- এখন প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। যেমন ধরেন- হাইকোর্টের কোন কোন বেঞ্চ অস্বাভাবিক জামিন দিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে আমি আমার কনসার্নের কথা প্রধান বিচারপতিকে এর আগে দেখা করে জানিয়েছিলাম। আজকেও জানিয়েছি। আমি আপনাদের প্রকাশ্যে বলে গেলাম এর আগে যতবার দেখা হয়েছে প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, উনি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, যে বেঞ্চগুলো থেকে চার ঘণ্টায় আটশ’ জামিন দেওয়া হয়েছিল। তিনি (প্রধান বিচারপতি) তাদেরকে ডেকেও পাঠিয়েছিলেন। উনি উনার মতো ব্যবস্থা নিয়েছেন। তারপর এই জামিনের প্রকোপ কিছুটা কমেছে, কিন্তু তা এখন অব্যাহত আছে। যে অস্বাভাবিক জামিন- যেখানে একজন ভয়ঙ্কর ব্যক্তি যিনি জামিন পেয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যারা নায়ক আছে তাদের ওপর হামলা করতে পারেন। এই ধরনের জামিন যখন হয় তখন আমরা প্রচন্ড সংকিত আতঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন বোধ করি। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের হাইকোর্টের ওপর কোনরকম কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। নিয়ন্ত্রণ থাকার কথাও না। হাইকোর্টের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। উনার কাছে আগেও এ ব্যাপার উৎকণ্ঠা জানিয়েছিলাম। আজকে আবারও জানিয়েছি এবং আমি আশা করি ভবিষ্যতে নতুন যে প্রধান বিচারপতি আসবে তার সঙ্গে আমার প্রথম যখন মিটিং হবে সেখানে আমি উনাকে বলব যে, আজকে যে ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট নেত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক আমাদের জুলাই গণ অভ্যুত্থানকারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন এবং তার দলের অনুসারীরা যদি জামিন পায় এটা জামিনের কোন নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। কারণ আমাকে পটেনশিয়ালি খুন করতে পারে এমন একজনকে যদি কোন বিচারক জামিন দেয় তাহলে এই খুনের দায় দায়িত্ব উনার উপর পড়ে কিনা সেটা ওনাদেরকে বিবেচনা করা উচিত।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন একটা দিকে গিয়েছে যে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য আমাদের যেকোন এক্সটেন্টে যাকে যা বলার এটা আবার বলতে হবে। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি আমাদের যে নতুন প্রধান বিচারপতি হবেন ওনার সঙ্গে প্রথম মিটিংয়ে আমি এই ব্যাপারে বলব যে সমস্ত ক্ষেত্রে আইনগতভাবে জামিন প্রাপ্য অধিকার সেটা জামিন দিবে। বিচারকরা অবশ্যই দিবে। কিন্তু যেই অপরাধী বা যেই ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়ে আপনাকে, আমাকে খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সে জামিন পেতে পারে না। আমরা এই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কোয়ালিফাইড সবচেয়ে সৎ একজন প্রধান বিচারপতিকে আমরা পেয়েছিলাম। এটাও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটা অর্জন। আগামীতেও আমরা বিচার বিভাগে এ রকম দক্ষ অভিভাবকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগে যে সমস্ত অনিয়ম আছে বা যে সব ব্যাপারে প্রশ্ন আছে সেগুলো দূর করার ব্যাপারে কাজ করে যাব।

পরবর্তী প্রধান বিচারপতিকে হচ্ছেন তা জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, পরবর্তী প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন এটা সরকারের নীতি নির্ধারণের বিষয়। এই নীতি নির্ধারণের বিষয়ে এককভাবে কোনও কিছু বলার এক্তিয়ার আমার নাই। আমি আপনাদের বলি আপনারা হয়তো তিন-চার দিনের মধ্যে জানতে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট জামিন নিয়ে আপনি ফেসবুকে যে লেখা পোস্ট করেছিলেন সেটা উনি প্রত্যাহার করতে বলেছেন। সে বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক, আপনারা তদন্ত করে দেখেন উচ্চ আদালতে চার ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন দেওয়া কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভব কি-না? এটাতে যারা যারা আইনজীবী ছিলেন আপনারা তদন্ত করে দেখেন। অধস্তন আদালতে কিছু কিছু জামিন হয়েছে সেটা উচ্চ আদালতের তুলনায় খুবই কম। আমি বলতে চাই, যেই জামিন হয় সেটার কমপক্ষে ৭০/৮০ শতাংশ উচ্চ আদালত হয়েছে। জামিনের পর আমরা এগুলোর কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ মামলার কোনও কাগজে দলীয় পরিচয় উল্লেখ করেনি এবং যে কথিত অপরাধটা আছে সে অপরাধের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা কী— সেই ধরনের কোনও তথ্য দেয়নি। কোনও পরিচয় উল্লেখ না থাকায় সেই সমস্ত ক্ষেত্রে অধস্তন আদালতে কিছু জামিন হয়েছে। আমরা এই ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি, জামিন নিয়ে যে বাণিজ্য-অরাজকতা চলছে— সেটা বন্ধ করার জন্য পুলিশকেও আমাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে করছে না। সেই সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা পুলিশের কাছে আমাদের উদ্যোগের কথা জানিয়েছি।’