Dhaka রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেব্রুয়ারিতে মহোৎসবের নির্বাচন হবে : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে। মহোৎসবের নির্বাচন। ওই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জাতির সত্যিকারের নবজন্ম হবে। এতো ত্যাগ তখনই সার্থক হবে যদি সে নবজন্ম আমরা লাভ করতে পারি।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সমঝোতায় আসতেই হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই একমাত্র সুযোগ এবং আমাদের এটা গ্রহণ করতেই হবে। এটা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো উপায় নেই। সমঝোতা বলেন, ঐক্য বলেন আর যাই বলেন, যখন নির্বাচনে যাবো তখন একমত হয়ে সবাই যাবো। এর মধ্যে কোনো দ্বিমত আমরা রাখব না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসতেই হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, স্বৈরাচার যাতে না আসতে পারে সেজন্যই সংস্কার প্রয়োজন। ভবিষ্যতে স্বৈরাচার আসার সব পথ আমরা সংস্কারের এই সংস্কারের মাধ্যমে বন্ধ করে দিতে চাই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার আলাদিনের প্রদীপের গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো। প্রদীপে ঘষা দিলে দৈত্য বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে- কী করতে হবে আমার। এই যে প্রশ্নটা করে, এর উত্তর নানাভাবে দেওয়া যায়। চাইলে তার কাছে চা খেতে চাইতে পারি, তাকে যদি বলা হয় সারা দুনিয়া এনে দিতে, এনে দিতো। ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি দৈত্য তৈরি করে দিয়েছে। আমরা তার কাছে কী চাইবো, আমরা কী তার কাছে চা চাইবো, নাকি দুনিয়া পাল্টে ফেলতে চাইবো। আমরা এই জাতিকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তৈরি করে দিয়ে যাবো। ছোট জিনিসে আটকে যেন বড় জিনিস হারিয়ে না ফেলি।

তিনি বলেন, অবাক বিস্ময়ে আমি আপনাদের বক্তব্য শুনেছি। অবাক হয়েছি কত গভীরভাবে আলাপ করেছেন, সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করেছেন। যখন ঐকমত্য কমিশনের আইডিয়া আসে, আমি নিশ্চিত ছিলাম না এটা কোনদিকে যাবে। এটার কোনও নজির নাই। এটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত। এই যে নতুন প্রচেষ্টা, এটা আমাদেরই বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে দেখলাম। দীর্ঘপথ অতিক্রমের পরে আমি শিহরণ অনুভব করছি, অভিভূত হয়েছি। এটা শুধু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা হয়ে থেকে যাবে না। অন্যান্য দেশও এটা লক্ষ করবে যে আমরা কী পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। এ নজির যেন খুঁতওয়ালা নজির না হয়।

সমঝোতায় আমাদের আসতেই হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে সমঝোতার রাস্তায় আমরা শুরু করেছি, সেটা থেকে বের হওয়ার কোনও সুযোগ আমাদের নেই। জাতি হিসেবে নবযাত্রার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের দিয়ে গেলো, সেটার একমাত্র সমাধান হলো এই সমঝোতার মধ্য দিয়ে গিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা। আমরা নানা যুক্তি দিতে পারি কিন্তু সমাধান এখানেই।

তিনি বলেন, আমরা যদি বিতর্কের মধ্যে থেকে যাই, এ বিতর্ক কখন বিস্ফোরিত হবে, এ বিতর্কের সুযোগ নিয়ে কে কোনদিকে চালু করে দিবে, এটার কোনও ঠিক নেই।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের এত সংস্কার কেন দরকার হচ্ছে। সব পথ-ঘাট বন্ধ করা, স্বৈরাচার যেন বেরিয়ে আসতে না পারে। সেই স্বৈরাচারের রাস্তা বন্ধ করতে হলে একমত হয়ে কাজ করতে হবে। দ্বিমতের কোনও জায়গা এখানে নেই। আমার একান্ত আবেদন, যখনই সনদ করবেন, কোলাকুলি করে করবেন। তাহলে নির্বাচন ইত্যাদি সব সার্থক হবে।

দ্বিমতের জায়গা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, মনের আশা ব্যক্ত করতে পারি। কিন্তু যে মহান ঐক্য দরকার, আলাদিনের দৈত্যকে হুকুম দেওয়ার সুযোগ আছে, কী চাই সেটা ঠিক করতে হবে। কীভাবে করবে, সেটা দৈত্য ঠিক করে দিবে, কোনও অসুবিধা নেই।

প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন, বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। ঐকমত্য কমিশন যখন গঠন করলাম, আলী রীয়াজকে বললাম, উনিও জানেন না এটা কী জিনিস। আপনারা সেটা গ্রহণ করেছেন, এটাই বড় অর্জন। আমরা ওই দৈত্যকে সবচেয়ে বড় কাজটি দেবো, যেটা আর কেউ কোনোদিন চাইবারও সুযোগ পাবে না, একবারই পাচ্ছি আমরা। মনের সমস্ত আশা তার ঘাড়ে দিয়ে দেবো।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে রিজিওনাল সিকিউরিটির জন্য থ্রেট হতে পারে : সালাহউদ্দিন আহমেদ

ফেব্রুয়ারিতে মহোৎসবের নির্বাচন হবে : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৫:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে। মহোৎসবের নির্বাচন। ওই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জাতির সত্যিকারের নবজন্ম হবে। এতো ত্যাগ তখনই সার্থক হবে যদি সে নবজন্ম আমরা লাভ করতে পারি।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সমঝোতায় আসতেই হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই একমাত্র সুযোগ এবং আমাদের এটা গ্রহণ করতেই হবে। এটা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো উপায় নেই। সমঝোতা বলেন, ঐক্য বলেন আর যাই বলেন, যখন নির্বাচনে যাবো তখন একমত হয়ে সবাই যাবো। এর মধ্যে কোনো দ্বিমত আমরা রাখব না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসতেই হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, স্বৈরাচার যাতে না আসতে পারে সেজন্যই সংস্কার প্রয়োজন। ভবিষ্যতে স্বৈরাচার আসার সব পথ আমরা সংস্কারের এই সংস্কারের মাধ্যমে বন্ধ করে দিতে চাই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার আলাদিনের প্রদীপের গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো। প্রদীপে ঘষা দিলে দৈত্য বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে- কী করতে হবে আমার। এই যে প্রশ্নটা করে, এর উত্তর নানাভাবে দেওয়া যায়। চাইলে তার কাছে চা খেতে চাইতে পারি, তাকে যদি বলা হয় সারা দুনিয়া এনে দিতে, এনে দিতো। ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি দৈত্য তৈরি করে দিয়েছে। আমরা তার কাছে কী চাইবো, আমরা কী তার কাছে চা চাইবো, নাকি দুনিয়া পাল্টে ফেলতে চাইবো। আমরা এই জাতিকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তৈরি করে দিয়ে যাবো। ছোট জিনিসে আটকে যেন বড় জিনিস হারিয়ে না ফেলি।

তিনি বলেন, অবাক বিস্ময়ে আমি আপনাদের বক্তব্য শুনেছি। অবাক হয়েছি কত গভীরভাবে আলাপ করেছেন, সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করেছেন। যখন ঐকমত্য কমিশনের আইডিয়া আসে, আমি নিশ্চিত ছিলাম না এটা কোনদিকে যাবে। এটার কোনও নজির নাই। এটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত। এই যে নতুন প্রচেষ্টা, এটা আমাদেরই বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে দেখলাম। দীর্ঘপথ অতিক্রমের পরে আমি শিহরণ অনুভব করছি, অভিভূত হয়েছি। এটা শুধু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা হয়ে থেকে যাবে না। অন্যান্য দেশও এটা লক্ষ করবে যে আমরা কী পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। এ নজির যেন খুঁতওয়ালা নজির না হয়।

সমঝোতায় আমাদের আসতেই হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে সমঝোতার রাস্তায় আমরা শুরু করেছি, সেটা থেকে বের হওয়ার কোনও সুযোগ আমাদের নেই। জাতি হিসেবে নবযাত্রার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের দিয়ে গেলো, সেটার একমাত্র সমাধান হলো এই সমঝোতার মধ্য দিয়ে গিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা। আমরা নানা যুক্তি দিতে পারি কিন্তু সমাধান এখানেই।

তিনি বলেন, আমরা যদি বিতর্কের মধ্যে থেকে যাই, এ বিতর্ক কখন বিস্ফোরিত হবে, এ বিতর্কের সুযোগ নিয়ে কে কোনদিকে চালু করে দিবে, এটার কোনও ঠিক নেই।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের এত সংস্কার কেন দরকার হচ্ছে। সব পথ-ঘাট বন্ধ করা, স্বৈরাচার যেন বেরিয়ে আসতে না পারে। সেই স্বৈরাচারের রাস্তা বন্ধ করতে হলে একমত হয়ে কাজ করতে হবে। দ্বিমতের কোনও জায়গা এখানে নেই। আমার একান্ত আবেদন, যখনই সনদ করবেন, কোলাকুলি করে করবেন। তাহলে নির্বাচন ইত্যাদি সব সার্থক হবে।

দ্বিমতের জায়গা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, মনের আশা ব্যক্ত করতে পারি। কিন্তু যে মহান ঐক্য দরকার, আলাদিনের দৈত্যকে হুকুম দেওয়ার সুযোগ আছে, কী চাই সেটা ঠিক করতে হবে। কীভাবে করবে, সেটা দৈত্য ঠিক করে দিবে, কোনও অসুবিধা নেই।

প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন, বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। ঐকমত্য কমিশন যখন গঠন করলাম, আলী রীয়াজকে বললাম, উনিও জানেন না এটা কী জিনিস। আপনারা সেটা গ্রহণ করেছেন, এটাই বড় অর্জন। আমরা ওই দৈত্যকে সবচেয়ে বড় কাজটি দেবো, যেটা আর কেউ কোনোদিন চাইবারও সুযোগ পাবে না, একবারই পাচ্ছি আমরা। মনের সমস্ত আশা তার ঘাড়ে দিয়ে দেবো।