নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়েই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিংয়ে মালয়েশিয়ান ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের বড় সুযোগ রয়েছে। এখানে সম্ভাবনা অপার। বিনিয়োগের পরিবেশ এখন অনেক স্থিতিশীল এবং ব্যবসাবান্ধব। প্রধান উপদেষ্টা তরুণদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ায় মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও এই ব্রিফিংয়ে কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের মানবিক ও রাজনৈতিক সংকট। এই সংকট সমাধানে আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ানের সহায়তা প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসিয়ান ভূমিকা রাখবে এই সমস্যার টেকসই সমাধানে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় কাজ করছে। তারা উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠান, যা তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপন, সন্তানের লেখাপড়া এবং ভালো শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করছে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের জন্য এই দরজা খোলা থাকবে এবং আমাদের দেশের আরো অধিকসংখ্যক তরুণ-তরুণী এখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বাংলাদেশের কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজ করার সুযোগ দেওয়ায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়ার জনগণ তাদের সঙ্গে পরিবারের একজন সদস্য এবং বন্ধুর মত আচরণ করে। এতে তারা খুব খুশি। তারা অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি এখান থেকে অনেক কিছু শেখে, যা দেশে ফিরে যাওয়ার পর নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে সহায়ক হয়।
মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা বাংলাদেশকে একটা উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন এবং প্রযুক্তি নিয়ে আসুন। আমাদের মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে আপনারা পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন।
একটা টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গত বছর ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমেছিল। আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক বিদায় নিয়েছে। এরপর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে আমরা সহযোগিতা খুঁজছিলাম, আর তখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বন্ধুর মত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি আমাদের শক্তি জুগিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে সঠিক পথ নিশ্চিত করতে দৃঢ় সংকল্পের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা দেশে শৃঙ্খলা ফেরাতে পেরেছি। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করেছি। ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবারও কার্যকর করা গেছে। যে কারণে এক বছরের মাথায় এসে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারছি। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট নিরসন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য মালয়েশিয়ার জোরালো সমর্থন চান।
সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আশা প্রকাশ করে বলেন, “দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে সহায়ক হবে।”
এর আগে সকাল ১০টায় পুত্রাযায়ায় মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক ভবনে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আনোয়ার ইব্রাহীম। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মোট পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এসব চুক্তি বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সই করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে— প্রতিরক্ষা, শ্রমবাজার, জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সহযোগিতা। এছাড়াও তিনটি নোট অব এক্সচেঞ্জ সই হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই তিন দিনের সফরের এটি ছিল প্রথম দিনের কর্মসূচি। সফরের বাকি সময়জুড়ে তিনি মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নেবেন।