Dhaka শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে, অন্যথায় মানুষ মেনে নেবে না : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই- নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হতে হবে এবং সেই নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষ কিছুতেই তা মেনে নেবে না।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঐতিহাসিক ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরুর আগে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আধুনিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা হিসেবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কারের জন্য ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তারেক রহমান। সেই সংস্কারের কাজ এই অন্তর্বর্তী সরকার শুরু করলে আমরা তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। প্রায় এক বছর এই সনদ তৈরির কাজ করেছেন তারা। গত ১৭ অক্টোবর সব দল একমত হয়েছে- যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোতে আমরা স্বাক্ষর করেছি।

তিনি বলেন, আমরা যেগুলো গ্রহণ করিনি, কনফারেন্স করে তা বলেছি। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম, হঠাৎ করেই উপদেষ্টা কাউন্সিলের একজন সদস্য প্রেস কনফারেন্স করে বললেন যে তাদের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে- রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিন সময় দেওয়া হবে, যাতে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাহলে এতদিন ধরে যে ঐকমত্য কমিশনে বসে সংস্কারের প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করেছেন, সেখানে আমাদের প্রতিনিধি ছিল, সব দলের প্রতিনিধি ছিল- তাহলে এটা কেমন হলো? বহু টাকা খরচ করে কাজটি করলেন, সেটাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সমস্যা সমাধান হলো না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক ও মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষা করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটা নতুন, সমৃদ্ধ রূপে উন্নীত করেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বেসরকারিখাতে বিনিয়োগের সূচনা করেছিলেন। তিনি নতুন এক বাংলাদেশের সূচনা করেছিলেন, এর ভিত্তি ধরে দেশ আজও এগিয়ে চলছে।

নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি জানাচ্ছে, তাদের সেই চাপ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না। গণভোট হলে তা নির্বাচনের দিনই হতে হবে, কারণ দুটো নির্বাচন করতে গেলে প্রচুর টাকা খরচ হবে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল হতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ সাত মাস ধরে আলোচনা শেষে ঐকমত্যে পৌঁছানো বিষয়গুলো থেকে হঠাৎ সরে আসা হয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর হলেও সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রধান উপদেষ্টা যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন, সেখানে পূর্বেকার ঐকমত্যের সিদ্ধান্তগুলো, বিশেষ করে আপত্তিগুলো (নোট অব ডিসেন্ট) উপেক্ষা করা হয়েছে। এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক কাজ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার—যাকে বিএনপি সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে, তারাই এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যাতে নির্বাচন ব্যবস্থা বানচাল হয়। যারা নির্বাচনের আগে গণভোটের চাপ দিচ্ছে, তারাও নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।

একটি রাজনৈতিক দল জোট গড়ে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বলেছি- গণভোট নির্বাচনের দিনই হতে হবে। কারণ, দুটি ভোট করতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে এবং মূল নির্বাচনের গুরুত্ব কমে যাবে। আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের আমরা সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছি, তারাই এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে, যাতে নির্বাচনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো এবং ইনশাআল্লাহ এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন- আপনারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সামনে এগিয়ে যাই এবং আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত করি।

বিএনপি প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান।

র‌্যালিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে আব্দুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আসাদুল করিম শাহিন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, এস এম জিলানী, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, হেলাল খান, হাসান জাফির তুহিন, সানজিদা ইসলাম তুলি, রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ অংশ নেন।

আবহাওয়া

মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট করতে সক্রিয় সাবেক প্রবাসী কল্যাণে মন্ত্রী বেয়াই মোশাররফের ক্যাশিয়ার দোলন

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে, অন্যথায় মানুষ মেনে নেবে না : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৬:১৩:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই- নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হতে হবে এবং সেই নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষ কিছুতেই তা মেনে নেবে না।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঐতিহাসিক ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরুর আগে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আধুনিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা হিসেবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কারের জন্য ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তারেক রহমান। সেই সংস্কারের কাজ এই অন্তর্বর্তী সরকার শুরু করলে আমরা তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। প্রায় এক বছর এই সনদ তৈরির কাজ করেছেন তারা। গত ১৭ অক্টোবর সব দল একমত হয়েছে- যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোতে আমরা স্বাক্ষর করেছি।

তিনি বলেন, আমরা যেগুলো গ্রহণ করিনি, কনফারেন্স করে তা বলেছি। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম, হঠাৎ করেই উপদেষ্টা কাউন্সিলের একজন সদস্য প্রেস কনফারেন্স করে বললেন যে তাদের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে- রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিন সময় দেওয়া হবে, যাতে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাহলে এতদিন ধরে যে ঐকমত্য কমিশনে বসে সংস্কারের প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করেছেন, সেখানে আমাদের প্রতিনিধি ছিল, সব দলের প্রতিনিধি ছিল- তাহলে এটা কেমন হলো? বহু টাকা খরচ করে কাজটি করলেন, সেটাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সমস্যা সমাধান হলো না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক ও মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষা করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটা নতুন, সমৃদ্ধ রূপে উন্নীত করেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বেসরকারিখাতে বিনিয়োগের সূচনা করেছিলেন। তিনি নতুন এক বাংলাদেশের সূচনা করেছিলেন, এর ভিত্তি ধরে দেশ আজও এগিয়ে চলছে।

নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি জানাচ্ছে, তাদের সেই চাপ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না। গণভোট হলে তা নির্বাচনের দিনই হতে হবে, কারণ দুটো নির্বাচন করতে গেলে প্রচুর টাকা খরচ হবে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল হতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ সাত মাস ধরে আলোচনা শেষে ঐকমত্যে পৌঁছানো বিষয়গুলো থেকে হঠাৎ সরে আসা হয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর হলেও সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রধান উপদেষ্টা যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন, সেখানে পূর্বেকার ঐকমত্যের সিদ্ধান্তগুলো, বিশেষ করে আপত্তিগুলো (নোট অব ডিসেন্ট) উপেক্ষা করা হয়েছে। এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক কাজ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার—যাকে বিএনপি সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে, তারাই এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যাতে নির্বাচন ব্যবস্থা বানচাল হয়। যারা নির্বাচনের আগে গণভোটের চাপ দিচ্ছে, তারাও নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।

একটি রাজনৈতিক দল জোট গড়ে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বলেছি- গণভোট নির্বাচনের দিনই হতে হবে। কারণ, দুটি ভোট করতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে এবং মূল নির্বাচনের গুরুত্ব কমে যাবে। আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের আমরা সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছি, তারাই এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে, যাতে নির্বাচনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো এবং ইনশাআল্লাহ এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন- আপনারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সামনে এগিয়ে যাই এবং আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত করি।

বিএনপি প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান।

র‌্যালিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে আব্দুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আসাদুল করিম শাহিন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, এস এম জিলানী, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, হেলাল খান, হাসান জাফির তুহিন, সানজিদা ইসলাম তুলি, রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ অংশ নেন।