Dhaka বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে এবারের বন্যায় আর্থিক ক্ষতি ২৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা

ফেনী জেলা প্রতিনিধি : 

চলতি মাসের ৮ জুলাই ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অবকাঠামো ও কৃষিখাত। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী বন্যাদুর্গত এলাকায় এবার কৃষি, সড়ক, মৎস্য, প্রাণিসম্পদসহ অন্যান্য খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৩৮ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩১ টাকা।

২০২৪ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতে ফের পানিতে ডোবে ফেনীর জনপদ। টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার পাঁচটি উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় কৃষিখাতে ২ হাজার ৭২৫ দশমিক ৬ হেক্টর জমির শস্যক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৭৫ কোটি ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের ও পুকুর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৪০ দশমিক ১০ হেক্টর হ্যাচারি ও ১ হাজার ৬৭৭টি পুকুর-জলাশয়। এতে ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ২৬ হাজার ১৪৬ টাকা।

প্রাণিসম্পদ খাতেও ব্যাপক ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় ৬৬ হাজার ৮২৫টি প্রাণী মারা যায় ও ভেসে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ১ কোটি ৩২ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা। বন্যায় প্রবল পানির স্রোতে জেলার ৩১৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার পাকা-আধাপাকা ও কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এলজিইডি ও সড়ক বিভাগ জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৬১টি ব্রিজ-কালভার্টসহ অন্যান্য স্থাপনা। অবকাঠামোগত এ ক্ষতির পরিমাণ ৮২ কোটি ৩০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় অন্তত ৪৩ দশমিক ৩৭৩ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা।

এবারের বন্যায় জেলায় ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি কলেজ ও ২টি মাদরাসা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তারমধ্যে ৪টি হাসপাতাল ও ১০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১৭ লাখ টাকা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ৩ হাজার ১৮৮টি গভীর, অগভীর ও হস্তচালিত নলকূপ এবং ২ হাজার ৭৪০টি স্বাস্থ্যসম্মত বাথরুম।

বন বিভাগের তথ্য মতে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ হেক্টর বনায়ন ও ৮ হাজার ২৬টি নার্সারি। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৪ টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বন্যায় ৭৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

শহীদুল ইসলাম নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, এখন ভারী বৃষ্টি না হলেও ভারতের উজানের পানিতে আমরা ভেসে যাচ্ছি। নদীর নাব্য সংকট ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার দায়সারা কাজের কারণে এ জনপদে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই।

ফুলগাজীর মুন্সিরহাট এলাকার বাসিন্দা মো. সাহেদ বলেন, বন্যায় ঘরের জিনিসপত্রের সঙ্গে পুকুরের মাছও ভেসে গেছে। বছর বছর একইভাবে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

ফেনী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির জন্য বরাদ্দ এলে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হবে। আংশিক ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ সমন্বয়ে পুনর্বাসনে কাজ করা হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তর তাদের নিজ নিজ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। সে অনুযায়ী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।

২০২৪ এর আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী। এ বন্যার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব ইতিহাস। প্রাণ হারিয়েছিল ২৯ জন। এছাড়াও বন্যায় বিভিন্ন খাতেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে এবারের বন্যার প্রকোপ গতবারের চেয়ে কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি প্রকাশ

ফেনীতে এবারের বন্যায় আর্থিক ক্ষতি ২৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা

প্রকাশের সময় : ০৩:২৯:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

ফেনী জেলা প্রতিনিধি : 

চলতি মাসের ৮ জুলাই ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অবকাঠামো ও কৃষিখাত। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী বন্যাদুর্গত এলাকায় এবার কৃষি, সড়ক, মৎস্য, প্রাণিসম্পদসহ অন্যান্য খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৩৮ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩১ টাকা।

২০২৪ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতে ফের পানিতে ডোবে ফেনীর জনপদ। টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার পাঁচটি উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় কৃষিখাতে ২ হাজার ৭২৫ দশমিক ৬ হেক্টর জমির শস্যক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৭৫ কোটি ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের ও পুকুর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৪০ দশমিক ১০ হেক্টর হ্যাচারি ও ১ হাজার ৬৭৭টি পুকুর-জলাশয়। এতে ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ২৬ হাজার ১৪৬ টাকা।

প্রাণিসম্পদ খাতেও ব্যাপক ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় ৬৬ হাজার ৮২৫টি প্রাণী মারা যায় ও ভেসে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ১ কোটি ৩২ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা। বন্যায় প্রবল পানির স্রোতে জেলার ৩১৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার পাকা-আধাপাকা ও কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এলজিইডি ও সড়ক বিভাগ জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৬১টি ব্রিজ-কালভার্টসহ অন্যান্য স্থাপনা। অবকাঠামোগত এ ক্ষতির পরিমাণ ৮২ কোটি ৩০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় অন্তত ৪৩ দশমিক ৩৭৩ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা।

এবারের বন্যায় জেলায় ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি কলেজ ও ২টি মাদরাসা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তারমধ্যে ৪টি হাসপাতাল ও ১০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১৭ লাখ টাকা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ৩ হাজার ১৮৮টি গভীর, অগভীর ও হস্তচালিত নলকূপ এবং ২ হাজার ৭৪০টি স্বাস্থ্যসম্মত বাথরুম।

বন বিভাগের তথ্য মতে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ হেক্টর বনায়ন ও ৮ হাজার ২৬টি নার্সারি। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৪ টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বন্যায় ৭৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

শহীদুল ইসলাম নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, এখন ভারী বৃষ্টি না হলেও ভারতের উজানের পানিতে আমরা ভেসে যাচ্ছি। নদীর নাব্য সংকট ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার দায়সারা কাজের কারণে এ জনপদে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই।

ফুলগাজীর মুন্সিরহাট এলাকার বাসিন্দা মো. সাহেদ বলেন, বন্যায় ঘরের জিনিসপত্রের সঙ্গে পুকুরের মাছও ভেসে গেছে। বছর বছর একইভাবে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

ফেনী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির জন্য বরাদ্দ এলে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হবে। আংশিক ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ সমন্বয়ে পুনর্বাসনে কাজ করা হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তর তাদের নিজ নিজ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। সে অনুযায়ী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।

২০২৪ এর আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী। এ বন্যার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব ইতিহাস। প্রাণ হারিয়েছিল ২৯ জন। এছাড়াও বন্যায় বিভিন্ন খাতেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে এবারের বন্যার প্রকোপ গতবারের চেয়ে কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।