নিজস্ব প্রতিবেদক :
পথচারীদের রাস্তা পারাপারে সুবিধার জন্য ঢাকার ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজের সঙ্গে লাগানো হয়েছিল চলন্ত সিঁড়ি। কিন্তু অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় এটি এখন আবর্জনা ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে।
শুধু ফার্মগেট নয়, রাজধানীর আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ফুটওভারব্রিজের চিত্রও একই। ফুটওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়িগুলোর প্রায় সবগুলোই এখন অকেজো। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব চলন্ত সিঁড়ি নগরবাসীর সুবিধার বদলে এখন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফার্মগেটে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটওভারব্রিজটি ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই কোনো ঘোষণা ছাড়াই এর চলন্ত সিঁড়ির প্রবেশমুখে বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এটিকে আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবেই ব্যবহার করছে মানুষ।
একই অবস্থা বনানীর সৈনিক ক্লাব, বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড এবং প্রগতি সরণির ফুটওভারব্রিজগুলোরও।
২০১৪ সালে দেশের প্রথম চলন্ত সিঁড়িসহ ফুটওভারব্রিজ বনানীর সৈনিক ক্লাবের কাছে স্থাপন করা হয়। কিন্তু এর একটি অংশ প্রায় সব সময়ই বন্ধ থাকে। অন্য অংশটিও চলে শুধু নির্দিষ্ট সময়ে, ফলে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর কোনো কাজেই আসে না এটি।
বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডে ২০১৭ সালে বসানো চলন্ত সিঁড়ি দুটি প্রায় চার বছর ধরে অচল। মূল্যবান যন্ত্রাংশের ওপর জমেছে আবর্জনার স্তূপ।
এই পথ দিয়ে যাতায়াতকারী ৬৫ বছর বয়সী মনি হোসেন বলেন, চালু হওয়ার পর এক বছরের মতো সিঁড়িটি ঠিক ছিল। তারপর থেকে এটি বন্ধ। মাথায় বস্তা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা খুব কষ্টকর। সিঁড়িটা ঠিক থাকলে খুব উপকার হতো। এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিচ দিয়ে রাস্তা পার হতে হয়।
নিরাপত্তারক্ষী কালাম মিয়া বলেন, ‘সাত মাস ধরে এখানে ডিউটি করছি, একদিনও সিঁড়ি চলতে দেখিনি। এগুলো চালু থাকলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যেত।’
প্রগতি সরণিতে ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর স্মরণে নির্মিত ফুটওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়িটিও বেশিরভাগ সময় অচল থাকে।
চলন্ত সিঁড়িগুলো অচল থাকায় বহু পথচারী, বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, আমার হাঁটুতে ব্যথা, চলন্ত সিঁড়িটা আমার জন্য খুব দরকারি ছিল। হঠাৎ করেই এটা বন্ধ হয়ে গেল। যদি নষ্টই হবে, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে কীভাবে হলো? এর অর্থ হলো, তৈরির সময়ই এতে ত্রুটি ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আফরুজা হাসান বলেন, যেখানে মানুষ ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে এমনিতেই অনাগ্রহী, সেখানে চলন্ত সিঁড়ি বসানো একটি দারুণ উদ্যোগ ছিল। কিন্তু চলন্ত সিঁড়ি অচল থাকায় মানুষ এখন ফুটওভারব্রিজ এড়িয়ে চলার আরও একটি অজুহাত পেয়ে গেল।
এসব চলন্ত সিঁড়ির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। যারা এই সিঁড়িগুলো নির্মাণ করেছিল, তাদেরই এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল। তবে কিছু ঠিকাদারের অভিযোগ যে, তারা সম্পূর্ণ অর্থ পাননি। এটা সমাধানের জন্য কাজ চলছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, আমরা শুধু টাকা খরচ করতে জানি, কিন্তু কোনো তদারকি নেই। ফলে এই চলন্ত সিঁড়িগুলো এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের উচিত রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হয়, এমন নকশার ফুটওভারব্রিজের দিকে এগোনো।