Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফল ঘোষণার সময় ট্রাম্প গলফ খেলছিলেন

  • যোগাযোগ ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫৫:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ নভেম্বর ২০২০
  • ১৮৮ জন দেখেছেন

সংগৃহীত ছবি

মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ভরাডুবি যখন অবশ্যম্ভাবী, কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ করছেন; তখন ‘নিশ্চিন্তে’ গলফ খেলায় মগ্ন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থা অনেকটা সম্রাট নিরোর মতো। রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। শনিবার নির্বাচনে পরাজয়ের একের পর এক ফল ঘোষণা করছে বিশ্ব মিডিয়া, আর ট্রাম্প তখণ মনের আয়েশে খেলায় ব্যস্ত।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণার সময় ট্রাম্প ভার্জিনিয়ার স্টারলিংয়ে ট্রাম্প ন্যাশনাল গলফ ক্লাবে গলফ খেলছিলেন। সেই ছবিও প্রকাশিত হয়েছে রয়টার্সসহ বহু মিডিয়ায়।

এরই মধ্যে ২৯০ ইলেকটোরাল ভোট বগলদাবা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। ৭৮ বছর বয়সী বাইডেন পপুলার ভোটেও জয়ী হয়েছেন। রেকর্ড ৭ কোটি ৪০ হাজার মার্কিনির সমর্থন পেয়েছেন তিনি।

জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হলেও মসনদে আছেন আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতার পর ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হবেন জো বাইডেন। তার আগ পর্যন্ত ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ওভাল অফিস তার দখলেই থাকছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসক ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার চার বছরে বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি মিডিয়ায় নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন। সাক্ষাৎকার দিলে মিথ্যা বলতেন, ভুল তথ্য দিতেন। এসব নিয়ে তুমুল সমালোচনা হতো। এসব থোরাই কেয়ার করতেন ট্রাম্প। বহুবার প্রেস কনফারেন্স ছেড়ে সোজা পথ ধরেছেন হোয়াইট হাউসের পথে।

সবশেষ করোনাভাইরাস মোকাবেলা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হন ট্রাম্প। তিনি বৈশ্বিক এ মহামারীকে গুরুত্বই দেননি। এটিকে সাধারণ ফ্লু বলে আখ্যা দেন। মাস্ক পরায় তার বেজায় আপত্তি ছিল। পরে নিজেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

সমালোকদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে নিরোর মিল আছে। ৫৪-৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোম শাসন করেছেন সম্রাট নিরো। ১৪ বছর শাসন করেন তিনি। কিন্তু ইতিহাস নিরোকে মনে রেখেছে। এবং অদ্ভূতভাবে তার সাম্রাজ্য পোড়ার সময় বাঁশি বাজানোর কিংবদন্তির জন্যই। তাকে মানুষ মনে রেখেছে একজন নিষ্ঠুর সম্রাট হিসেবে।

আরও পড়ুন : ট্রাম্পসহ দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে হারলেন ১১ প্রেসিডেন্ট

তিনি তার মাকে হত্যা করেছিলেন। নিজের কাছের আত্মীয়দের ধরতে গেলে কেউই তার নিষ্ঠুর আচরণ থেকে রেহাই পাননি। নিজের স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা থাকাবস্থায় তিনি এত জোরে লাথি দিয়েছিলেন যে, তার মৃত্যু হয়েছিল। মা, স্ত্রী ও সন্তানঘাতী এ সম্রাটকে ইতিহাস নিষ্ঠুর আচরণের জন্যই মনে রেখেছে।

ঠিক একইভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বিভাজন সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনে রাখবেন বলে মার্কিন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। সাদা-কালো, নারী-পুরুষ, অভিবাসী-মার্কিন ইত্যাদি নানাভাবে তিনি বিভাজন সৃষ্টি করেছেন।

ক্ষমতায় এসেই নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ছয় মুসলিম দেশের ওপর আরোপ করেছিলেন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। শেতাঙ্গ পুলিশের নির্মম হামলায় কৃষ্ণাঙ্গ যুবক হত্যার সময় নীরব ছিলেন ট্রাম্প। কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়সহ বিভিন্ন অশ্বেতাঙ্গ জাতিগোষ্ঠীর ওপর যখন শ্বেতাঙ্গরা হামলা চালায়, ততবারই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরবে বা নীরবে হামলাকারীদেরই পক্ষ নিয়েছেন।

শেষ পর্যন্ত ব্যালটে ট্রাম্পকে বিদায় দিয়েছেন মার্কিনিরা। তবে পরাজয় মেনে নেননি এই রিপাবলিকান প্রার্থী। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটে জালিয়াতি হয়নি। ট্রাম্প বলছেন, ফল মানেন না।

নির্বাচনের আরও বহু পথ বাকি। ভোট গণনা বন্ধে মামলাও করেন তিনি। কিন্তু সেগুলো ধোপে টেকেনি। ট্রাম্পের অভিযোগ এতটাই অস্পষ্ট যে, ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকানের নেতারাই তার প্রতি হয় প্রমাণ হাজির করার, নয়তো ফল মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রিপাবলিকান শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বলেছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ভোট ও নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যেসব অস্পষ্ট অভিযোগ তুলছেন, তা দেশটির গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্যই ক্ষতিকর। এই ক্ষতি সহজে পুষিয়ে ওঠা যাবে না। তবুও ট্রাম্প বলছেন, তিনি মামলা করবেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

ফল ঘোষণার সময় ট্রাম্প গলফ খেলছিলেন

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৫:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ নভেম্বর ২০২০

মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ভরাডুবি যখন অবশ্যম্ভাবী, কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ করছেন; তখন ‘নিশ্চিন্তে’ গলফ খেলায় মগ্ন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থা অনেকটা সম্রাট নিরোর মতো। রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। শনিবার নির্বাচনে পরাজয়ের একের পর এক ফল ঘোষণা করছে বিশ্ব মিডিয়া, আর ট্রাম্প তখণ মনের আয়েশে খেলায় ব্যস্ত।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণার সময় ট্রাম্প ভার্জিনিয়ার স্টারলিংয়ে ট্রাম্প ন্যাশনাল গলফ ক্লাবে গলফ খেলছিলেন। সেই ছবিও প্রকাশিত হয়েছে রয়টার্সসহ বহু মিডিয়ায়।

এরই মধ্যে ২৯০ ইলেকটোরাল ভোট বগলদাবা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। ৭৮ বছর বয়সী বাইডেন পপুলার ভোটেও জয়ী হয়েছেন। রেকর্ড ৭ কোটি ৪০ হাজার মার্কিনির সমর্থন পেয়েছেন তিনি।

জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হলেও মসনদে আছেন আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতার পর ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হবেন জো বাইডেন। তার আগ পর্যন্ত ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ওভাল অফিস তার দখলেই থাকছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসক ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার চার বছরে বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি মিডিয়ায় নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন। সাক্ষাৎকার দিলে মিথ্যা বলতেন, ভুল তথ্য দিতেন। এসব নিয়ে তুমুল সমালোচনা হতো। এসব থোরাই কেয়ার করতেন ট্রাম্প। বহুবার প্রেস কনফারেন্স ছেড়ে সোজা পথ ধরেছেন হোয়াইট হাউসের পথে।

সবশেষ করোনাভাইরাস মোকাবেলা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হন ট্রাম্প। তিনি বৈশ্বিক এ মহামারীকে গুরুত্বই দেননি। এটিকে সাধারণ ফ্লু বলে আখ্যা দেন। মাস্ক পরায় তার বেজায় আপত্তি ছিল। পরে নিজেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

সমালোকদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে নিরোর মিল আছে। ৫৪-৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোম শাসন করেছেন সম্রাট নিরো। ১৪ বছর শাসন করেন তিনি। কিন্তু ইতিহাস নিরোকে মনে রেখেছে। এবং অদ্ভূতভাবে তার সাম্রাজ্য পোড়ার সময় বাঁশি বাজানোর কিংবদন্তির জন্যই। তাকে মানুষ মনে রেখেছে একজন নিষ্ঠুর সম্রাট হিসেবে।

আরও পড়ুন : ট্রাম্পসহ দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে হারলেন ১১ প্রেসিডেন্ট

তিনি তার মাকে হত্যা করেছিলেন। নিজের কাছের আত্মীয়দের ধরতে গেলে কেউই তার নিষ্ঠুর আচরণ থেকে রেহাই পাননি। নিজের স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা থাকাবস্থায় তিনি এত জোরে লাথি দিয়েছিলেন যে, তার মৃত্যু হয়েছিল। মা, স্ত্রী ও সন্তানঘাতী এ সম্রাটকে ইতিহাস নিষ্ঠুর আচরণের জন্যই মনে রেখেছে।

ঠিক একইভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বিভাজন সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনে রাখবেন বলে মার্কিন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। সাদা-কালো, নারী-পুরুষ, অভিবাসী-মার্কিন ইত্যাদি নানাভাবে তিনি বিভাজন সৃষ্টি করেছেন।

ক্ষমতায় এসেই নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ছয় মুসলিম দেশের ওপর আরোপ করেছিলেন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। শেতাঙ্গ পুলিশের নির্মম হামলায় কৃষ্ণাঙ্গ যুবক হত্যার সময় নীরব ছিলেন ট্রাম্প। কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়সহ বিভিন্ন অশ্বেতাঙ্গ জাতিগোষ্ঠীর ওপর যখন শ্বেতাঙ্গরা হামলা চালায়, ততবারই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরবে বা নীরবে হামলাকারীদেরই পক্ষ নিয়েছেন।

শেষ পর্যন্ত ব্যালটে ট্রাম্পকে বিদায় দিয়েছেন মার্কিনিরা। তবে পরাজয় মেনে নেননি এই রিপাবলিকান প্রার্থী। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটে জালিয়াতি হয়নি। ট্রাম্প বলছেন, ফল মানেন না।

নির্বাচনের আরও বহু পথ বাকি। ভোট গণনা বন্ধে মামলাও করেন তিনি। কিন্তু সেগুলো ধোপে টেকেনি। ট্রাম্পের অভিযোগ এতটাই অস্পষ্ট যে, ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকানের নেতারাই তার প্রতি হয় প্রমাণ হাজির করার, নয়তো ফল মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রিপাবলিকান শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বলেছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ভোট ও নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যেসব অস্পষ্ট অভিযোগ তুলছেন, তা দেশটির গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্যই ক্ষতিকর। এই ক্ষতি সহজে পুষিয়ে ওঠা যাবে না। তবুও ট্রাম্প বলছেন, তিনি মামলা করবেন।