ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার অর্থের কাছে নতজানু হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহ।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলার সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমের কাছে জাফর উল্যাহ এমন অভিযোগ করেন।
কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ফরিদপুরে চারটি সংসদীয় আসনে বিপুল অর্থের মালিকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাদের অর্থের কাছে আমাদের জেলা পুলিশ সুপার এখন নতজানু। আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হলে তার (এসপির) ওসি সাহেবরা দেখেন না, অভিযোগ দিলেও আমলে নেন না। তাদের হয়ে কাজ করছেন তিনি। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বার বার বলার পরও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। নির্বাচনের সময় সকল প্রার্থীকে সমান অধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নই, ফরিদপুরের এসপি চান না এখানে নৌকার নির্বাচন হোক। তিনি চান না সদরপুর-ভাঙ্গাতে নৌকা জিতুক। টাকার জন্য তিনি নৌকা হারাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমি সন্তুষ্ট নই। কারণ আমি দেখছি সদরপুরে খুন-রাহাজানি হচ্ছে। সদরপুরের চর বলাশিয়ায় নৌকার একজন কর্মীকে কোপ দিয়ে মাথা দুই টুকরা করে দিয়েছে। সে ট্রমা সেন্টারে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। অথচ আমরা যখন বিষয়টি থানাকে জানাই, তারা বলে মামলা নিতে হলে ওদেরও (অপরপক্ষের) মামলা নিতে হবে। তার মানে তারা সম্পূর্ণরুপে নিক্সনের (প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন) পক্ষে।
কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, তিনি (এসপি) লাইন নিয়েছেন ফরিদপুরের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে। কারণ ফরিদপুরের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবাই টাকাওয়ালা। টাকা আছে যেখানে, আমাদের প্রশাসন এসপি আছে সেখানে। আমরা যুদ্ধ লড়াই করে মাঠে আছি। গরিব-দুঃখি মানুষ ৭ তারিখে নৌকায় ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে। যদি এসপি-ডিসি, ওসি আসুক মানুষের শক্তির সাথে তারা পারবেনা।
আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী বলেন, আমার অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে আমি বিশ্রামে ছিলাম। সেটি নিয়েও নিক্সন রাজনীতি করছেন। মানুষকে হেয় করে নিজে বড় হওয়া যায় না। তার কত টাকা যে আমাদের কিনতে চায়? অবৈধ অর্থের মালিক হলে অনেক কিছু করা যায়। নিক্সন বলে আমার মা একজন ফকির ছিলো। সে বলছে আমি ফকিন্নির ছেলে। আমাকে ন্যাংটা করে মান্দার গাছে উঠাবে। সে মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্য দিতে চায়না। আমি তার থেকে গরিব হতে পারি তবে আমি সৎ লোক। অবৈধ উপায়ে মানুষ ঠকিয়ে টাকা আয় করি নাই। সততার সাথে মানুষের সেবা করতে চাই। আমি অবৈধভাবে বালু তুলব না, কারো জমি দখল করব না, কোনো বাস মালিকের কাছ থেকে চাঁদা নেব না। মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করব না।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘আরে নিক্সন তুমি ভাবছো চাচা চইলা গেছে, খুব ফুর্তি করতেছো খোলা মাঠে গোল দিবা, তা হবে না। আমার জান (জীবন) থাকা পর্যন্ত গরিবের হক মেরে খাওয়ার দিন তোমার শেষ। এবার হয় জিতব, আর নইলে এখানে মরব, মাঝামাঝি ঝুলব না।’
তিনি বলেন, দু’দিন আগে নিক্সন চৌধুরী আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে চাচা নির্বাচন কেনো বন্ধ করলেন? ৯০ মিনিটের খেলা। টাকা লাগে আমি দিবো। নিক্সন চৌধুরীর এ বক্তব্যের জবাবে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘তাহলে বুঝতে পারেন তার দেমাগটা কোথায় চলে গেছে? সে আমাকেও টাকা দিয়ে কিনতে চায়!’ তিনি জানান, অত্যধিক পরিশ্রমের কারণে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে দু’দিন সম্পূর্ণ বিশ্রামে (বেড রেস্টে) ছিলেন। এজন্য এলাকায় ছিলেন না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, এর আগে সে (নিক্সন) বলেছে যে আমাকে ল্যাংটা কইরা মান্দার গাছে উঠাবে। এটা কী কোনো রাজনৈতিক ভাষা? এই রকম তার সাহস হয়ে গেছে। এখন টাকার গরমে সে গোলমাল করতে চাচ্ছে। সহজ ভাষায় বলতে চাই, আমরা কোনো গোলমাল পাকাতে চাই না। এখানে গরিব-দুঃখী মানুষ যা বলবে তাই হবে। মাস্তানদের এখানে কোনো জায়গা থাকবে না।
উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, যদি আপনারা সাহস করেন, আপনার অধিকার রক্ষা করতে চান, আপনাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে চান, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চান, একসময় হাটকৃষ্ণপুর ছিল বড় ব্যবসায়িক কেন্দ্র, এক নামে সবাই চিনত, আবার যদি সেই সুনামে ফিরে যেতে চান দয়া করে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। আমি আপনাদের ওয়াদা দিতে পারি। শেখ হাসিনার মতো আমিও যা বলি তা করে দেখাই। অতএব, আপনাদের উন্নয়নের মহাসড়কে আনব। ভাগ্যের পরিবর্তন করবো। আপনাদের মুখে হাসি ফোটাব।
২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি বর্তমান সরকারের আমলে যেভাবে ভাঙ্গার উন্নয়ন হয়েছে সেভাবে সদরপুর ও চরভদ্রাসনেরও উন্নয়ন হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শাহ মো. ইসতিয়াক আরিফ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা দীপক মজুমদার, আনিসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।