স্পোর্টস ডেস্ক :
বড় মঞ্চে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠা শেফালি বর্মা ও দীপ্তি শর্মা পরে বোলিংয়েও দেখালেন ভেলকি। তাদের অলরাউন্ড নৈপুণ্যের বিপরীতে বিফলে গেল একপ্রান্ত আগলে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকানো লরা উলভার্টের প্রচেষ্টা। প্রোটিয়াদের স্বপ্ন ভেঙে আইসিসি নারী বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত।
রোববার (২ নভেম্বর) নাবি মুম্বাইতে বৃষ্টির কারণে দুই ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া ফাইনালে ৫২ রানে জিতেছে ভারতীয়রা। টস হেরে আগে ব্যাট করে পুরো ওভার খেলে ৭ উইকেটে ২৯৮ রান তোলে তারা। জবাবে ২৭ বল বাকি থাকতে ২৪৬ রানে অলআউট হয় প্রোটিয়ারা।
নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনবারের চেষ্টায় শিরোপার পরম আকাঙ্ক্ষিত স্বাদ নিতে পারল ভারত। নিজেদের মাটিতে কানায় কানায় পূর্ণ স্টেডিয়ামে শেষ হলো তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার পালা, শুরু হলো উৎসব। এর আগে ২০০৫ ও ২০১৭ সালের আসরের ফাইনালে হেরেছিল তারা। অন্যদিকে, প্রথমবার শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে পৌঁছে তীব্র হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
নারী বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে এসে দেখা মিলল চতুর্থ চ্যাম্পিয়ন দলের। রেকর্ড সাতবার জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। চারবার জিতে তাদের ঠিক পরেই ইংল্যান্ডের অবস্থান। বাকিটি গেছে নিউজিল্যান্ডের ঝুলিতে।
ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন শেফালি। ওপেনিংয়ে নেমে ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিংয়ে তিনি খেলেন ৮৭ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস। ৭৮ বল মোকবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে সাতটি চার ও দুটি ছক্কা। অনিয়মিত স্পিনার হলেও এরপর ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ৭ ওভারে ৩৬ রান খরচায় তিনি নেন ২ উইকেট।

রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা হয় আশা জাগানিয়া, প্রথম ৯ ওভারে করে বিনা উইকেটে ৫১ রান। পরের ওভারে আমানজোত কৌরের সরাসরি থ্রোয়ে তাজমিন ব্রিটসের রান আউটে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
দুয়ার উন্মুক্ত হওয়ার পর প্রথমবার আক্রমণে এসে আনেকা বশকে শূন্য রানে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার শ্রি চারানি। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর সুনে লিসের সঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন উলভার্ট। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক পঞ্চাশে পা রাখেন ৪৫ বলে।
২১তম ওভারে শেফালিকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক হারমানপ্রিত। দ্বিতীয় বলে ফিরতি ক্যাচে লিসকে (৩১ বলে ২৫) ফিরিয়ে ৫২ রানের জুটি ভাঙেন শেফালি। সেই পথে ধরে নিজের পরের ওভারে মারিজান ক্যাপকেও বিদায় করেন তিনি।
দিপ্তি যখন ফিরিয়ে দিলেন সিনালো জ্যাফটাকে, ৩০তম ওভারে ১৪৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে দক্ষিণ আফ্রিকা।
উলভার্ট এক প্রান্তে চালিয়ে যান লড়াই। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন অ্যানেরি ডার্কসেন। দুজনের জুটিতে দুইশ পেরিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচেও ফেরে উত্তেজনা। দারুণ এক ইয়র্কারে ডার্কসেনকে (৩৭ বলে ৩৫) বোল্ড করে ৬১ রানের জুটি ভাঙেন দিপ্তি।
ওই ওভারেই উলভার্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৯৬ বলে। ছেলে কিংবা মেয়েদের কোনো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ক্রিকেটার তিনি।

সেঞ্চুরির পর আর টেকেননি উলভার্ট (৯৮ বলে ১০১)। তাকেও ফেরান দিপ্তি। ডিপ মিডউইকেট থেকে বাঁ দিকে দৌড়ে তিনবারের চেষ্টায় ক্যাচ নেন আমানজোত।
একই ওভারে দিপ্তি উইকেট নেন আরেকটি, দক্ষিণ আফ্রিকার আশাও কার্যত শেষ হয়ে যায় সেখানে।
৪৫তম ওভারে চারানির এলোমেলো বোলিংয়ে কিছুটা উত্তেজনা যদিও ফেরে, তবে ওই ওভারে আয়াবোঙ্গা খাকার রান আউট ও পরের ওভারে ডি ক্লার্কের বিদায়ে ম্যাচের সমাপ্তি এবং ভারতের উল্লাস।
বৃষ্টির কারণে ম্যাচ শুরু হয় এদিন দুই ঘন্টা দেরিতে। পিচ কাভারে ঢাকা ছিল তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। তবে এর প্রভাব খুব একটা পড়েনি ভারত ব্যাটিংয়ে নামার পর। স্মৃতি মান্ধানা ও শেফালির ব্যাটে দারুণ শুরু পায় স্বাগতিকরা।
মুখোমুখি প্রথম বলে চার মেরে শুরু করেন শেফালি। বাউন্ডারি আসতে থাকে দুই ব্যাটারের ব্যাট থেকেই। প্রথম ১০ ওভারে ভারত করে ৬৪।
চতুর্দশ ওভারে ডি ক্লার্ককে চোখধাঁধানো লফটেড স্ট্রেট ড্রাইভে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন শেফালি। ফিফটির কাছে গিয়ে বাঁহাতি স্পিনার ক্লোয়ি ট্রায়নের বলে মান্ধানা (৫৮ বলে ৪৫) ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভাঙে ১০৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।

ওই ওভারেই শেফালি ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৯ বলে। ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর প্রথমবার পঞ্চাশ ছুঁতে পারলেন তিনি।
আউট হতে পারতেন তিনি ৫৬ রানে, কিন্তু ডিপ মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন বশ।
জীবন পেয়ে এগিয়ে যান তিনি, জাগান সেঞ্চুরির সম্ভাবনা, কিন্তু মাইলফলক থেকে ১৩ রান দূরে থাকতে খাকার বলে মিড-অফে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ২১ বছর বয়সী ব্যাটার।
সেমি-ফাইনালের দুই নায়ক জেমিমা রদ্রিগ্স (৩৭ বলে ২৪) ও হারমানপ্রিত (২৯ বলে ২০) এবার থিতু হয়েও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি। এক ধাপ ওপরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে টিকতে পারেননি আমানজোত (১৪ বলে ১২)।

৪৪তম ওভারে ভারতের রান তখন ৫ উইকেটে ২৪৫। সেখান থেকে রানের গতি বাড়ে মূলত রিচা ঘোষ উইকেটে যাওয়ার পর। দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে শুরু করেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে রিচা ও দিপ্তির ৩৫ বলে ৪৭ রানের জুটিতে তিনশর কাছে যায় ভারত।
দিপ্তি ফিফটি করেন ৫৩ বলে। ৪৯তম ওভারে আউট হয়ে যান রিচা। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে ৩৪ রান করেন তিনি।
শেষ দুই ওভারে ভারত ১২ রানের বেশি নিতে পারেনি। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতল তারা বড় ব্যবধানেই, উঁচিয়ে ধরল স্বপ্নের ট্রফি।
স্পোর্টস ডেস্ক 
























