বিনোদন ডেস্ক :
জনপ্রিয়তা কিংবা প্রশংসা কম জোটেনি। কিন্তু সমালোচনা বোধহয় কিঞ্চিৎ বেশি শ্রাবন্তী চ্যাটার্জির ঝুলিতে। মূলত ব্যক্তিগত ইস্যুতেই তাকে নিয়ে যত বিতর্ক-সমালোচনা। একাধিক বিয়ে, সম্পর্কের জেরে বারবার ট্রলের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের দুই যুগে এটুকু অন্তত শিখে গেছেন, কীভাবে নেতিবাচকতা এড়িয়ে কাজটা চালিয়ে যেতে হয়।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই, ২০০৩ সালে বিয়ে করেন শ্রাবন্তী। পরিচালক রাজিব বিশ্বাসের সঙ্গে ঘর বাঁধেন। সেই সংসার টিকেছিল ২০১৬ অব্দি। এক সন্তানের সংসারটি বিচ্ছিন্ন করেন তারা। অতঃপর মডেল কৃষাণ বিরাজকে বিয়ে করেন হুট করেই। সেই ঘর এক বছরও টেকেনি। দু’বছর যেতে না যেতে ফের বিয়ের পিঁড়িতে বসেন অভিনেত্রী। রোশান সিং নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে গড়া সেই সংসারও এক বছরের মাথায় (২০২০) ভেঙে যায়। এখনও চলছে এই বিচ্ছেদের মামলা।
কৃষাণ ও রোশানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন শ্রাবন্তী। এখানেই শেষ নয়, এরপর অভিরূপ নাগ চৌধুরী নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গেও তার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক নিয়ে টলিপাড়ায় চর্চা হয়েছে। এত কিছুর পর নতুন করে কি ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন শ্রাবন্তী?
রোববার (১৩ আগস্ট) শ্রাবন্তীর জন্মদিন। এ উপলক্ষে আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, এখনও বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। আমি আর প্রেমে পড়তে বা বিয়ে করতে চাই না। কাজই আমার প্রেম।
মন ভাঙলে শ্রাবন্তীর ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র কী? এ প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, একা এসেছেন, একাই যেতে হবে। নিজেকে ভালবাসুন। যারা শর্তহীনভাবে ভালোবাসেন, তাদের সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে দিন। ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে লাভ নেই। তাই আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেওয়া একেবারেই অমূলক। জীবনে এগিয়ে যাওয়াটা লক্ষ্য হওয়া উচিত।
কিন্তু প্রেমের গুঞ্জন তো শ্রাবন্তীর পিছু ছাড়ে না! সম্প্রতি অভিনেতা জীতু কমল ও পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে জোরালো চর্চা হয়েছে নেটপাড়ায়। এ নিয়ে শ্রাবন্তীর ভাষ্য, ‘আমি বুঝতে পারি না এগুলো কারা রটায়! কোনও পুরুষের সঙ্গে ছবি তুললেই নাকি প্রেম হয়ে যায়! যেহেতু আমার অতীতের সম্পর্কগুলোতে সমস্যা হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কেউ আমার বিচার করতে পারেন না।
কিছু দিন আগে জীতু কমলের সংসার ভেঙেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুঞ্জন, এই ভাঙনের পেছনে নাকি শ্রাবন্তী দায়ী। অভিনেত্রী প্রসঙ্গটি পরিষ্কার করলেন এভাবে, ‘খুব খারাপ লাগে যখন এগুলো শুনি। ওর ব্যক্তিগত জীবনে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, আমার দেখার বিষয় না। আর জীতুকে ২০১২ সাল থেকে চিনি। যেহেতু এখন ওর সঙ্গে কাজ করছি, তাই আমার নাম জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। একটা খবর ছড়ালে হাজারটা খবর শুরু হয়। আমার মনে হয়, সাইবার ক্রাইমের বিষয়টা দেখা উচিত। ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়া, আমার রাশিতে লেখা আছে!’
এত এত সমালোচনা-কটাক্ষ কীভাবে সামলে নেন শ্রাবন্তী? তার জবাব, আগে খুব কষ্ট হত। ভাবতাম, আমার জীবনে খারাপ কিছু ঘটেছে বলেই আমি ‘সফট টার্গেট’! এখন কিছু যায়-আসে না! সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক খবর লোকে বেশি দেখে। আমি কাজ করব, নিজের কর্মফল পাবো, ব্যস!
একমাত্র ছেলে ঝিনুকের কথাও উঠে আসে। জানান, যেখানে ছেলেরা মাকে ভয় পায়, সেখানে তিনি তার ছেলেকে ভয় পান।
ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রাবন্তী বলেন, ছেলের আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়। ও বলে, আমি নাকি ১৬-তেই আটকে রয়েছি! ছেলেরা মাকে ভয় পায়, আমি ছেলেকে ভয় পাই! আমি পার্টি করলে শাসনও করে। ও অনেক পরিণত।
ইদানীং জিমে একটু বেশি সময় দিতে দেখা যাচ্ছে তাকে। এ প্রসঙ্গে নায়িকার জবাব, শরীরের দিকে একটু বাড়তি নজর দিচ্ছি তো বটে। আসলে আমি খেতে খুব ভালবাসি। কিন্তু মাঝে লাগামছাড়া খাওয়াদাওয়া হচ্ছিল। তাই ভাবলাম, নাহ্, এ বার শরীরের যত্ন নিতে হবে। কারণ, সামনে বেশ কিছু কাজ রয়েছে। এছাড়াও আমাদের পেশায় ফিটনেসটা খুব দরকার। তবে জিরো ফিগারে বিশ্বাসী নই। আমার ধারণা, আমাকে দেখতে খুব খারাপ লাগবে অতটা রোগা হলে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা বা আমার অনুরাগীও আমাকে একটু গোলগাল দেখতেই ভালবাসেন।
জন্মদিনে উপহার পেতে ভালো লাগে শ্রাবন্তীর। তার কথায়, ফুল ছাড়া অন্য যেকোনো জিনিস উপহার হিসেবে পেতে ভালো লাগে। সেটা খুব ছোট কিছুও হতে পারে। ফুল গাছে দেখতেই ভালো লাগে। আমি কখনোই ফুলের তোড়া উপহার হিসেবে নিই না।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে পরিচালক রাজীবকে বিয়ে করেন শ্রাবন্তী। তাদের ঘর আলো করে আসে পুত্রসন্তান অভিমন্যু (ঝিনুক)। পরবর্তীতে রাজীবের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয় তার। এরপর এ অভিনেত্রী বিয়ে করেন প্রেমিক কৃষাণ ভিরাজকে। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে শ্রাবন্তী ও কৃষাণের রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়। ২০১৭ সালের আগস্টের দিকে দ্বিতীয় সংসারেও ভাঙনের সুর বেজে ওঠে। ২০১৭ সালের শেষের দিকে বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানান শ্রাবন্তী।
২০১৯ সালে তৃতীয়বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শ্রাবন্তী। একই বছরের ১৯ এপ্রিল অনেকটা গোপনে প্রেমিক রোশান সিংয়ের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন। ভারতের চণ্ডীগড়ে পাঞ্জাবি রীতিতে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরই এ সংসারে ভাঙনের সুর বেজে ওঠে। যা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
আগামীতে শ্রাবন্তীকে দেখা যাবে শুভ্রজিৎ মিত্রর ‘দেবী চৌধুরানী‘ ছবিতে। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করবেন তিনি। তার বিপরীতে ভবানী পাঠকের চরিত্রে ধরা দেবেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বাংলা ছাড়া আরও ছয় ভাষায় নির্মিত হবে ছবিটি। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে টলিউডের সবচেয়ে বড় বাজেটের এই সিনেমা। শ্রাবন্তী বর্তমানে কাজ করছেন কমলেশ্বর মুখার্জির পরিচালনায় ‘আমি আমার মতো’ সিনেমায়। এতে তার সহশিল্পী জীতু কমল।