নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানির প্রথম দিনেই প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান। ওই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মুজিবুল হক চুন্নু। প্রার্থিতা ফিরে পেয়েই চুন্নুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন নাসিরুল।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) ইসিতে আপিল শুনানির পর রায়ে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। সকাল থেকে শুরু হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি। নির্বাচন কমিশন মিলনায়তনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার কমিশনার আপিল শুনানি করছেন।
সাংবাদিকদের নাসিরুল ইসলাম খান বলেন, চুন্নুর সঙ্গে মাঠে খেলা হবে। শতভাগ গ্যারান্টি দিচ্ছে চুন্নুর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এই আসনে জাতীয় পার্টির কোনো খবর নেই। ১৯৭০ সাল থেকেই কিশোরগঞ্জ-৩ আওয়ামী লীগের আসন। পুরো আসনে জাতীয় পার্টির ভোট ১০টিও নেই।
তিনি বলেন, আমি এবং আমার এলাকার (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) সকলে খুবই আনন্দিত। নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার প্রার্থিতা বাতিলের যে চেষ্টা করা হয়েছিল সেটি সফল হয়নি। মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে যে আজ এলাকা থেকে ঢাকায় অনেক মানুষজন চলে এসেছেন।
তিনি আরো বলেন, জাতীয় পার্টির কোনো ভোট আমার এলাকায় নেই। মজিবুল হক চুন্নুকে আমরা হেভিওয়েট প্রার্থী মনে করি না। খেলা হবে মাঠে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জামানত থাকবে না। আপনারাই দেখবেন আমাদের এলাকায় কোনরকম বিশৃঙ্খলা হবে না।
নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটুকু কেমন আশাবাদী এমন প্রশ্নের জবাবে নাসিরুল ইসলাম খান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কাস্টিং ভোটের ৭০ শতাংশ আমি পাব। সারা জীবন আমি মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। এখন এমপি নির্বাচিত হলে সেই ধারা অব্যাহত রাখব।
এর আগে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় মামলার তথ্য গোপনের অভিযোগে তার (নাসিরুল ইসলাম খান) মনোনয়ন পত্রটি বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। পরে গত মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের ইসি ভবনে মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পেতে আপিল জমা দেন।
নাসিরুল মামলার তথ্য গোপনের অভিযোগ সম্পর্কে বলেছিলেন, যে মামলার বিষয়টি সামনে এনে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে সেটির সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। ২০১৪ সালে কিশোরগঞ্জে একটি মারামারির অভিযোগে আমার নাম মামলায় দিয়েছিল। অথচ আমি তখন ঢাকায় ছিলাম। পরে তদন্ত করে দেখা গেল আমি নির্দোষ। তখন চার্জশিট থেকে আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ায় নাসিরুলের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতির কাগজ দেখাতে না পারায় নাসিরুল খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।
পরে নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলের পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে আটকাতে তার প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেন নাসিরুল।
নৌকার প্রার্থীর আবেদনে বলা হয়, রূপালী ব্যাংক পুরানা পল্টন, কর্পোরেট শাখা থেকে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টার মো. মজিবুল হক দীর্ঘদিন খেলাপি আছেন। অতএব সে কীভাবে এমপি মনোনয়নের জন্য আবেদন করতে পারে। তার মনোনয়ন আইন মোতাবেক বাতিলযোগ্য।
রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রার্থিতা বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময়সীমা শেষ হয়েছে শনিবার। গত ৫ ডিসেম্বর আপিল শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫৬১টি আবেদন পড়েছে। প্রথম দিন ৪২ জন, দ্বিতীয় দিন ১৪১, তৃতীয় দিন ১৫৫, চতুর্থ দিন ৯৩ জন এবং শেষদিন শনিবার আপিল আবেদন করেন ১৩০ জন।
আপিল আবেদনের মধ্যে ৩২টি আবেদন পড়েছে বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে। যাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মুজিবুল হক চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিলের আবেদনও রয়েছে। এসব প্রার্থী নিয়ে পর্যায়ক্রমে আপিল শুনানি করবে ইসি।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।